Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
ব্লাড ব্যাঙ্কে হন্যে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের বাবা-মা, পাশে দাঁড়ালেন পুরুলিয়ার দুই যুবক

'এক বেলা ছুটি দিন, রক্ত দিতে যাব'

ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের আকাল চলছে। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দু’টি শিশু রক্তের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে শুনে কাজ ফেলে হাসপাতালে দৌড়ে এসে রক্ত দিলেন পুরুলিয়ার দুই যুবক।

মানবিক: রক্তদাতা ধনু গোস্বামী ও অরিজিৎ দত্ত। নিজস্ব চিত্র

মানবিক: রক্তদাতা ধনু গোস্বামী ও অরিজিৎ দত্ত। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫১
Share: Save:

ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের আকাল চলছে। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দু’টি শিশু রক্তের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে শুনে কাজ ফেলে হাসপাতালে দৌড়ে এসে রক্ত দিলেন পুরুলিয়ার দুই যুবক। রক্ত দিতে এসেছিলেন আরপিএফ-এর ওসি এবং এক জওয়ান। কিন্তু ততক্ষণে রক্তের ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে শুনে স্বস্তির শ্বাস ফেললেন তাঁরা।

মঙ্গলবার এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো হাসপাতাল। শিবির কমে যাওয়ায় পুরুলিয়ার সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে মাঝে মধ্যেই রক্তের অভাব দেখা দেয়। অথচ এই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য ফি মাসে রক্তের প্রয়োজন হয় সাড়ে তিনশো থেকে চারশো ইউনিটের। তাই ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্তশূন্য জেনে তাঁরা আতান্তরে পড়েছেন। ক’দিন ধরে সাঁওতালডিহি থানার কামারগোড়া গ্রামের কুন্তী বাউরি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বছর ছয়েকের মেয়ে সুনিয়াকে নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কে ঘোরাঘুরি করছিলেন। একবার দালাল এক প্যাকেট রক্তের জন্য হাজার পাঁচেক টাকা চাওয়ায় দিনমজুর পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। কোটশিলার ভেলাটাঁড় গ্রামের বছর তিনেকের আকাশ মাহাতোও থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। তাকে নিয়ে ব্লাডব্যাঙ্কে আসা-যাওয়া করছিলেন মা-বাবা পুটকি মাহাতো ও দেবেন মাহাতো। ব্ল্যাডব্যাঙ্ক জানিয়েছিল, ওই দুই গ্রুপের রক্ত একেবারেই নেই। ওই গ্রুপের দাতা এনে দিলে তবেই তাঁরা রক্তের ব্যবস্থা করতে পারবেন। কিন্তু পুরুলিয়া শহরে তাঁরা রক্তের দাতা কোথায় পাবেন?

যখন তাঁরা দিশেহারা অবস্থায়, সেই সময়ে হাসপাতালের কোনও কর্মী সহকারী সুপার শান্তনু মুখোপাধ্যায়ের কাছে তাঁদের যেতে বলেন। শান্তনুবাবু নিজেও প্রয়োজনে রোগীদের রক্ত দিয়েছেন। খড়কুটোর মতো তাঁকেই ভরসা করে দু’টি পরিবার রক্তের ব্যবস্থা করার জন্য আর্জি জানান।

আরও পড়ুন: ‘বাবার শরীরটা বড় গাছের মতো পড়ল’

শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘আমি নিজেও কিছু দিন আগেই রক্ত দিয়েছি। দু’টি গ্রুপের রক্তের দাতা চেয়ে আমি হোয়্যাটস অ্যাপের বিভিন্ন গ্রুপে আবেদন জানাই। ফোনও করি কয়েকজনকে। তাতেই দেখি অনেকে সাড়া দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অরিজিৎ দত্ত ও ধনু গোস্বামী নামের দুই যুবক রক্ত দিয়ে ওই দুই শিশুর রক্তের ব্যবস্থা করেন।’’

পুরুলিয়া শহরের রাধাকৃষ্ণ মোড় এলাকার বাসিন্দা অরিজিৎ একটি মোবাইল ফোনের দোকানে কাজ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি দোকানে কাজ করছিলাম। ফোনে জানতে পারি, এক মা নিজের সন্তানের বি পজিটিভ রক্তের জন্য অসুবিধায় পড়েছেন। আমারও একই গ্রুপের রক্ত। দোকানের মালিককে বলি, আমাকে একবেলার ছুটি দিতে হবে। কারণ জেনে তিনি আপত্তি করেননি।’’

পুরুলিয়া সদর থানার এক পুলিশ কর্মীর কাছ থেকে খবর পেয়ে একই ভাবে হাসপাতালে পৌঁছন হুচুকপাড়ার যুবক ধনু গোস্বামী। নিজে বেকার। বাবার পান দোকানে সাহায্য করেন। এ দিন দোকানেই ছিলেন। ধনু বলেন, ‘‘থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত একটি এবি পজিটিভ গ্রুপের শিশু রক্তের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে শুনে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বাবাকে দোকান সামলাতে বলে হাসপাতালে চলে এসেছি।’’

দু’জন যখন রক্ত দিচ্ছেন, ততক্ষণে হাসপাতালে এসে পৌঁছেছেন পুরুলিয়া আরপিএফ ওসি নারায়ণ দত্ত ও অন্য এক কর্মী আর এম কারওয়ানে। ওসি বলেন, ‘‘আমিও খবর পেয়েই রক্ত দিতে এসেছিলাম। তবে প্রয়োজন হল না।’’

কুন্তীদেবী ও পুটকিদেবী বলেন, ‘‘আজ সবাই মিলে আমাদের সন্তানের জন্য যা করলেন, এ ঋণ কী ভাবে মেটাব?’’ ফেরার পথে অরিজিৎ-ধনু বলেন, ‘‘ওই মায়েদের মুখের হাসি কোনও দিন ভুলব না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Donors Thalassemia Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE