পাহাড়তলিতে: গড় পঞ্চকোটে পর্যটন উৎসবের উদ্বোধনে সাঁওতালি নাচ। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ পুরুলিয়া জেলার পর্যটন উৎসবের তালিকা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এ বার অযোধ্যা পাহাড় পর্যটন উৎসব, জয়চণ্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসবের পরে শুরু হল গড়পঞ্চকোট পর্যটন উৎসব। পঞ্চকোট পাহাড়ের কোলে দু’দিনের এই উৎসব শুরু হল শনিবার।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে বছর বছর পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে গড়পঞ্চকোটে। সে কথা মাথায় রেখেই এখানকার ঐতিহ্যবাহী পঞ্চরত্নের মন্দির সংস্কার করা হয়েছে। এ বার পাহাড়ের মন্দিরক্ষেত্রের অন্য মন্দিরগুলির সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে পর্যটন দফতর। মন্দির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে পারদর্শী একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে পঞ্চকোট পাহাড়ের প্রায় পুরোপুরি ভেঙে পড়া মন্দিরগুলি সংস্কারের জন্য সমীক্ষা করিয়েছে রাজ্য পর্যটন দফতর। সম্প্রতি পাহাড়ে এসে সমীক্ষা করে যায় ওই সংস্থাটি।
আর এই আবহের মাঝেই পাহাড়ে উৎসব শুরু হওয়ায় পর্যটকদের আনাগোনা আরও বাড়বে বলে আশাবাদী এলাকার বাসিন্দারা।
এ দিন উৎসবের উদ্বোধনে ছিলেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায়, রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি, জেলা পরিষদের দুই কর্মাধ্যক্ষ।
বিধায়ক বলেন, ‘‘পঞ্চকোট পাহাড়ে পর্যটনের বিস্তারে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তারই অঙ্গ হিসাবে পর্যটন উৎসব শুরু করা হল।’’ তিনি জানান, আগামী দিনে পর্যটনের ভরা মরসুমের মধ্যেই বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে এই উৎসব করা হবে।
গত কয়েক বছরে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রের প্রথম সারিতে উঠে এসেছে পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ব্লকের এই পাহাড়। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এই পাহাড় ঘিরে তৈরি হয়েছে পাঁচটি রিসর্ট। আরও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এখানে রিসর্ট তৈরি করতে আগ্রহী।
ইতিমধ্যে বন উন্নয়ন নিগমের গড়পঞ্চকোটের প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র সংস্থার রাজ্যের অন্যান্য রিসর্টগুলির তুলনায় সব থেকে বেশি ব্যবসা করেছে। বস্তুত দুর্গাপুজোর সময় থেকে টানা শীতকালে এখানকার রিসর্টগুলি কার্যত ফাঁকা পড়ে নেই। সেই প্রক্ষিতেই পঞ্চকোট পাহাড় ঘিরে পর্যটনের আরও প্রসার এবং বিস্তারে রাজ্য পর্যটন দফতর উদ্যোগী হয়েছে।
ইতিহাস জানাচ্ছে, এক সময়ে পঞ্চকোট রাজবংশের রাজধানী ছিল এই পাহাড়কে ঘিরে। সেই সময়ে রাজারা পাহাড়ে বেশ কয়েকটি মন্দির তৈরি করেছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম পঞ্চরত্নের মন্দিরটি। পূর্ত দফতর তা সংস্কার করেছে। মন্দিরের সামনে স্টিলের রেলিং দিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি। এ বার জোড় বাংলো-সহ অন্য মন্দিরগুলি কী ভাবে সংস্কার করা যায়, তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিধায়কের দাবি, ‘‘পুরুলিয়া সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যটন দফতরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে গড় পঞ্চকোটের মন্দিরগুলি সংস্কার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই মতো প্রাথমিক সমীক্ষা করেছে পর্যটন দফতর।’’ মহকুমাশাসক জানান, পঞ্চরত্নের মন্দিরের সৌন্দর্যায়নে রাতে এলইউডি আলো লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘‘পর্যটন দফতরের নথিভুক্ত ওই বিশেষজ্ঞ সংস্থা পাহাড়ের অন্য ভগ্ন মন্দিরগুলির সংস্কারে সমীক্ষা করেছে। সেই মতো বিস্তারিত পরিকল্পনা রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করে পর্যটন দফতরকে জমা দেবে। মন্দিরগুলির মূল কাঠামো বজায় রেখে পুরনো ছবি অনুযায়ী সেই ধাঁচে মন্দিরগুলি সংস্কার করা হবে।”
অন্য দিকে, পাহাড়ে পর্যটন উৎসব শুরু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত পর্যটন-ব্যবসায়ীরা। একটি রিসর্টের কর্ণধার সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পর্যটন উৎসব হলে প্রচুর মানুষ আসবেন। তাতে সবারই ভাল হবে।’’ তবে মন্দিরক্ষেত্র লাগোয়া এলাকায় উৎসব হচ্ছে না। সাইন্ড বক্স বাজালে ভগ্ন হয়ে পড়া মন্দিরের সমস্যা হবে বুঝেই ওই এলাকা থেকে বেশ কিছুটা দূরে উৎসবের মঞ্চ বাঁধা হয়েছে।
শনিবার ও রবিবার দু’দিন ধরেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy