Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

পরিযায়ীদের দিশা একশো দিনের কাজ

এমনিতে বীরভূমে মোট সাড়ে পাঁচ লক্ষ পরিবারের কাছে জবকার্ড ছিল। তাতে প্রতি পরিবারে গড় দু’জন করে মোট ৯ লক্ষ মানুষ যুক্ত ছিলেন।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২০ ০৩:২২
Share: Save:

লকডাউনে কাজ হারিয়ে ভিন্ রাজ্য থেকে বাংলায় ফিরে এসেছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। গ্রামে ফিরে তাঁরা যাতে রোজগারের পথ খুঁজে পান, সেই জন্য তাঁদের হাতে ১০০ দিনের কাজে প্রকল্পের জবকার্ড তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল রাজ্য সরকার। এবার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ নিল বীরভূম জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ৩৫ হাজার শ্রমিক জেলায় ফিরেছেন। এমজিএনআরইজিএ জেলা নোডাল অফিসার শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আবেদনের ভিত্তিতে এক পক্ষকালের মধ্যে ১১ হাজার নতুন জব কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। যে সব পরিবারের জব কার্ড ইতিমধ্যেই ছিল সেই কার্ডগুলিতে নতুন করে মোট ১৮ হাজার মানুষের অন্তর্ভুক্তি হয়েছে।

এমনিতে বীরভূমে মোট সাড়ে পাঁচ লক্ষ পরিবারের কাছে জবকার্ড ছিল। তাতে প্রতি পরিবারে গড় দু’জন করে মোট ৯ লক্ষ মানুষ যুক্ত ছিলেন। সেই পরিমাণটা এক ধাক্কায় বেশ খানিকটা বাড়ল। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, যাঁরা জবকার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন বা নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তাঁরা সকলেই ভিন্ রাজ্য বা ভিন্ জেলা থেকে ফিরেছেন এমন হয়তো নয়, তবে তাঁদের একটা বড় অংশই পরিযায়ী শ্রমিক।

জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, উদ্দেশ্য ছিল বেশি সংখ্যক পরিবারকেই (জবকার্ডধারী) কাজ দেওয়া। দ্রুত বেশি মাত্রায় কর্মদিবস সৃষ্টি করা। যাতে কম সময়ের মধ্যে গরিব মানুষের অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া যায়। কারণ, লকডাউনের মধ্যে মানুষের হাতে নগদের অভাবই সবচেয়ে চিন্তার বিষয়। আর এই বিবেচনায় প্রাধান্য পেয়েছে কাজ হারিয়ে জেলায় ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকরা।

গত মাসের শেষের দিকে জেলা ব্লক হয়ে প্রতিটি পঞ্চয়েতে যে নির্দেশ পৌঁছেছিল তাতে বলা হয় পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে যাঁদের জবকার্ড রয়েছে তাঁদের এখনই ১০০ দিনের কাজে লাগাতে ই-মাস্টার রোল জেনারেট করতে। পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে যাঁদের জবকার্ড নেই তাঁদের আবেদন ব্লকে পাঠিয়ে জবকার্ডের ব্যবস্থা করতে। আবেদনের ভিত্তিতেই নতুন করে জেলার ১৯টি ব্লকে জব কার্ড পেয়েছেন ১১ হাজার পরিবার, যাঁদের আগে জবকার্ড ছিল না।

এপ্রিলে দ্বিতীয় দফার লকডাউনের মধ্যেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরই গত ২০ এপ্রিল থেকে জেলা জুড়ে ১০০দিনের কাজ শুরু হয়েছিল লকডাউনের গাইডলাইন মেনে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মদিবস তৈরির পরিমাণ বেড়েছে। সুবিধা পেয়েছেন কাজ হারিয়ে জেলায় ফেরা পরিযায়ীরা। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত কত বেশি সংখ্যক প্রকল্প করে কাজ দিতে পারে সেই বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছিল। ১০০দিনের কাজে মোট ২০০-র বেশি প্রকল্প রয়েছে। এই জেলায় পুকুর খনন, সংস্কার, নানা ফার্ম পণ্ড তৈরি, পোলট্রি, গোটারি, নার্সারি তৈরির মতো নানা প্রকল্প তো আছেই বর্ষার প্রাক্কালে জোর দেওয়া হয়েছে বনসৃজনেও।

জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবর্ষে ইতিমধ্যেই ২৭ লক্ষ কর্মদিবস সৃষ্টি হয়েছে। জুন মাসে এক পক্ষকালের মধ্যে যে লক্ষ্যমাত্রা থাকে তার ২৫০ শতাংশ কর্মদিবস বেড়েছে। কাজ পেয়েছেন দু’লক্ষ জবকার্ডধারী পরিবার। এবার সেই তালিকায় রয়েছেন পরিয়াযী শ্রমিকেরাও। শর্ত একটাই, যে সব পরিযায়ী শ্রমিক অন্য রাজ্য বা অন্য জেলা থেকে বাড়ি ফিরেছেন এবং তাঁরা ১৪ দিনের নিভৃতবাস শেষ করছেন কোনও উপসর্গ ছাড়াই। অথবা জেলায় ফিরে আসার পর তাঁদের লালারসের পরীক্ষা হয়েছে এবং রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আবেদনের ভিত্তিতে কাজ পাচ্ছেন বা পেয়েছেন তাঁরাই।

শুভঙ্করবাবু বলেন, ‘‘যাঁরা ফিরেছেন তাঁদের প্রত্যেকের তথ্য জেলা প্রশাসনের কাছে আছে। একটা অংশ অভিজ্ঞ। তাঁদের জন্য অন্য ভাবনা নিয়েছে সরকার। যাঁরা অনভিজ্ঞ, নির্মাণ শিল্পে জোগাড়ের কাজ করতেন ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে উপকৃত হচ্ছেন তাঁরা।

তবে জেলা জুড়ে সংক্রমণ বৃদ্ধি এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৫০ ছুঁই ছুই। কন্টেনমেন্ট জোন বেড়ে হয়েছে ১২৩। সেই সব এলাকায় ১০০ দিনের কাজও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Covid-19 Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy