Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সন্ন্যাসীর গন্তব্য ডিহরের গাজনে

গাজনে মেতে উঠেছে বিষ্ণুপুর থানার ডিহর। বৃহস্পতিবার থেকেই এখানে সুপ্রাচীন ষাঁড়েশ্বর ও শৈলেশ্বর মন্দিরে ভক্তেরা ভিড় জমিয়েছেন।বাসিন্দাদের দাবি, দ্বারকেশ্বর নদের তীর ঘেঁষে থাকা এই দুই মন্দিরে প্রায় তিনশো বছর ধরে গাজন উৎসব হয়ে আসছে।

উৎসব: ডিহরে দ্বারকেশ্বর নদে সন্ন্যাসীরা।ছবি: শুভ্র মিত্র ও অভিজিৎ সিংহ

উৎসব: ডিহরে দ্বারকেশ্বর নদে সন্ন্যাসীরা।ছবি: শুভ্র মিত্র ও অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪৮
Share: Save:

গাজনে মেতে উঠেছে বিষ্ণুপুর থানার ডিহর। বৃহস্পতিবার থেকেই এখানে সুপ্রাচীন ষাঁড়েশ্বর ও শৈলেশ্বর মন্দিরে ভক্তেরা ভিড় জমিয়েছেন।

বাসিন্দাদের দাবি, দ্বারকেশ্বর নদের তীর ঘেঁষে থাকা এই দুই মন্দিরে প্রায় তিনশো বছর ধরে গাজন উৎসব হয়ে আসছে। প্রতিবার বাংলা বছরের শেষ দিনগুলিতে আশেপাশের জনতা, মল্লগ্রাম, মণিপুর, বসন্তপুর, লয়ার, বিদ্যাসাগর, পেনাড়া, দ্বারিকা, জয়কৃষ্ণপুর, ধানগোড়া, আদলা প্রভৃতি গ্রামের মানুষ এখানে আসেন। ঢল নামে বিষ্ণুপুর শহরের বাসিন্দাদেরও। সে জন্য এই ক’টা দিন বিষ্ণুপুর শহরের রাস্তাঘাট কার্যত ফাঁকা হয়ে যায়। দোকানপাটে ঝাঁপ পড়ে যায়, সরকারি অফিসেও হাজিরা থাকে কম। সবার গন্তব্য— ডিহর।

ষাঁড়েশ্বর গাজন উৎসব কমিটির যুগ্ম সম্পাদক খোকন চৌধুরি ও বাপি দও বলেন, ‘‘গত শনিবার কালভৈরব রাজ ও কামাক্ষ্যাদেবীর আগমনের মধ্যে দিয়ে এখানে শুরু হয়েছে উৎসব। পাঁচ হাজার সন্ন্যাসীর সমাগম হয়। শেষ হবে শুক্রবার দিনগাজনের মধ্যে দিয়ে।’’ তাঁদের দাবি, প্রত্যেক দিন প্রায় ৪০ হাজার ভক্ত আসেন। কিন্তু সবই এখানে সুশৃঙ্খল ভাবে চলে। ‘অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’ প্রবাদ এখানে খাটে না! দিনের বেলা ১২টা পর্যন্ত সাধারণ মানুষ লাইন দিয়ে মহাদেবের পুজো দেন। তারপরে সন্ন্যাসীদের পুজো দেওয়ার পালা। ধুনো পোড়ানো, গরান দেওয়া, শোভাযাত্র হয় সুশৃঙখল ভাবে।

উৎসব: বাঁকুড়ার এক্তেশ্বরে রিকশায় চড়ে এলেন ‘মহাদেব’। ছবি: শুভ্র মিত্র ও অভিজিৎ সিংহ

বৃহস্পতিবার সকালে ডিহরে দ্বারকেশ্বর নদে যে দিকে তাকানো যায়, সে দিকেই— লাল, গোলাপি, বাসন্তী, গেরুয়া, হলুদ ধুতি পরা আট থেকে আশি বছরের সন্ন্যাসীর আনাগোনা। চারিদিকে ‘জয় বাবা ষাঁড়েশ্বর’ ধ্বনি। তারই মধ্যে নদের পাড়ে পুরোহিত প্রদীপ বন্দোপাধ্যায় আর বাসুদেব চক্রবর্তীরা কুশ পরিয়ে ভক্তদের সন্ন্যাস ধর্মের দীক্ষা দিচ্ছিলেন, এই ক’টা দিনের জন্য। মন্দিরে অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হিমশিম খেতে খেতেও হাসিমুখে পুজো সামলাছেন।

নাগরদোলনা, ঘুরন চরকি, মিষ্টির দোকান, চপ-মুড়ির দোকানে উপচে পড়ছে ভিড়। ডিহর গ্রামের তরুণ সঙ্ঘের সদস্য এবং সিভিক ভলাণ্টিয়াররা ভিড় সামলাচ্ছেন। পুজোর লম্বা লাইন কেউ ভাঙলে তাঁদের সমঝে দিচ্ছেন মিঠে-কড়া ধমকে। জনতা গ্রামের মদন কুণ্ডু, সুধীর মাঝি, বসন্তপুরের দীপক ভট্টাচার্যেরা নিজের নিজের আশ্রমে, কেউ বা বটতলায় বাউল গান শুনে সময় কাটাচ্ছিলেন। তাঁরা জানান, দিনের শেষে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য দিয়ে জল স্পর্শ করবেন। রাতেও জমে উঠবে মেলা চত্ত্বর। চারিদিকে বাহারি আলোর তোরণ তৈরি হয়েছে। চারিদিকে আনন্দের পরিবেশ।

সন্ন্যাসী থেকে ভক্তেরা জানালেন, সারা বছরের ক্লান্তি, দুঃখ, মান-অভিমান সব ভুলে সকলে এক সাথে এক জায়গায় মহাদেবের পুজোর মধ্যে দিয়ে আগামী বছর বাঁচার রসদ সংগ্রহ করেন এখান থেকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Gajan Poila Boisakh Festival Monks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE