জয়পুরের আরবিবি হাইস্কুল মাঠে বিজেপির কর্মী সভায় বক্তব্য রাখছেন শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আদিবাসীদের উন্নয়নে ব্রতী হলেও তৃণমূলের রাজ্য সরকার তাঁদের বঞ্চনা করছেন বলে অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আদিবাসী সম্প্রদায় ও কুড়মিদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বাতাবরণ তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ি করলেন তিনি। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার জয়পুরে কর্মিসভায় কার্যত লোকসভার ভোটের প্রচার শুরু করে দিলেন শুভেন্দু।
পুরুলিয়ার ছ’টি বিধানসভা বিজেপি পেলেও তাদের মাথাব্যাথা জঙ্গলমহলের তিন বিধানসভা কেন্দ্র মানবাজার, বান্দোয়ান ও বাঘমুণ্ডির পরাজয়। তা স্পষ্ট শুভেন্দুর কথাতেও। তিনি মানবাজার ও বাঘমুণ্ডি কেন্দ্রের নামোল্লেখ করে দাবি করেন, ‘‘ওই দুই বিধানসভায় জনজাতি, মূলবাসীদের ভুল বোঝানো হয়েছিল।” তারপরেই দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীই বিরসা মুন্ডার জন্মদিবসকে ‘জনজাতি গৌরব দিবস’ স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনিই জনজাতিদের মধ্যে সব থেকে পুরনো ৭৫টি জনগোষ্ঠীর গ্রাম ও পরিবারের উন্নয়নে ৩৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। শুভেন্দুর দাবি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু এই কাজ হবে না। রাজ্য সরকারের জন্যই আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নের প্যাকেজ গ্রামে পৌঁছয় না। রাজ্য সরকার জায়গা দেয়নি বলেই এ রাজ্যে আদিবাসীদের জন্য আবাসিক স্কুল শুরু হয়নি।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘বিজেপি-শাসিত রাজ্য নয়, আদিবাসীদের জল, জঙ্গল, জমির অধিকার শুধুই এ রাজ্যেই সুরক্ষিত।”
আদিবাসীদের পাশাপাশি কুড়মিদেরও মন পাওয়ার চেষ্টা করেন শুভেন্দু। তিনি দাবি করেন, ‘‘আদিবাসী সম্প্রদায় ও কুড়মিদের মধ্যে গন্ডগোলের জন্য দায়ি মুখ্যমন্ত্রী। ২০২০ সালে কুড়মি সমাজের পক্ষে লিখে দেওয়া হল তাদের এসটি করতে হবে। আদিবাসী সমাজ বিরোধিতা করায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা প্রত্যাহার করে নিলেন। পরে দুই পক্ষের কাছে কলকাতা থেকে দালাল পাঠিয়ে বলা হল, ভোটটা হতে দিন। তারপরে সমাধান করে দেবেন। আপনাদের ভাবতে হবে এই সমস্যার সৃষ্টিকর্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
একই সঙ্গে কুড়মিদের আন্দোলনে বিজেপির আপত্তি নেই বলেও স্পষ্ট করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘জাতিসত্তার আন্দোলনে বিজেপির লোকজন শামিল হলেও তাতে দল আপত্তি করবে না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত সম্প্রদায়কে খুশি করে এই সমস্যার সমাধান বিজেপি ছাড়া কেউ করতে পারবে না।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেনের পাল্টা দাবি, ‘‘বিজেপি বরাবরই জাতি ও ধর্মকে টেনে রাজনীতি করে। পুরুলিয়ায় কুড়মি সম্প্রদায়ের সমস্যা জিইয়ে রাখতেই বিজেপি ইন্ধন জোগাচ্ছে।”
আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা অজিত মাহাতো জানান, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার মধ্যে একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই অতীতে কুড়মিদের এসটি করার আবেদন কেন্দ্রকে পাঠিয়েছিলেন। তখন কেন্দ্র তা সমর্থন করেনি। কিন্তু কেন্দ্র ফারদার জাস্টিফিকেশন রিপোর্ট চাইলেও পরে রাজ্য আর পাঠায়নি। অজিত বলেন, ‘‘আমাদের এত আন্দোলনের পরেও কিন্তু রাজ্য সেই রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে না। প্রথম দিকে মুখ্যমন্ত্রীর সদর্থক ভূমিকার বদল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।’’ তবে কেন্দ্র সরকার চাইলে কুড়মিদের এসটি করতেই পারে বলে দাবি অজিতের। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকার নিজের ইচ্ছাতেই জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ করেছে। তাহলে কুড়মিদের এসটি করতে অসুবিধা কোথায়? নিরপেক্ষ দৃষ্টি নিয়ে কুড়মিদের এসটি করতে বিজেপির কেন্দ্র সরকার সদিচ্ছা দেখায়নি।”
আদিবাসীদের উন্নয়নে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার ভূমিকা নিয়ে শুভেন্দুর অভিযোগ ‘আংশিক সত্য’ বলে দাবি ‘ইউনাইটেড ফোরাম অব অল আদিবাসী ফেডরেশন’-এর নেতা রতনলালা হাঁসদার। তিনি বলেন, ‘‘আদিবাসীদের সমস্যা বিজেপি সমাধান করবে কী ভাবে? মণিপুরে দেখেছি, কী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ওই পরিস্থিতির জন্য দায়ি কেন্দ্রীয় সরকার।”
ভিড়ে ঠাসা কর্মিসভায় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে গিয়ে শুভেন্দু মুখ্যমন্ত্রীকে ‘চোর’ বলে দাবি করেন। এ দিনও শুভেন্দু ফের কয়লা পাচার কাণ্ডে জেলার তৃণমূল নেতা শান্তিরাম মাহাতো, সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, গুরুপদ টুডু, বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোরা জড়িত বলে অভিযোগ তোলেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া দাবি করেন, ‘‘ইডি-সিবিআইকে যে বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে, সেটা আগেই প্রমাণিত হয়েছে। ভিত্তিহীন অভিযোগে লাভ হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy