সিউড়িতে জাতীয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেসে বিজ্ঞান মডেল। —নিজস্ব চিত্র
জল সংরক্ষণ নিয়ে গোটা বিশ্বে প্রচার চলছে। এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও জীবজগৎকে সুস্থ ভাবে বাঁচিয়ে রাখতে যে পরিমাণ নিরাপদ জলের প্রয়োজন, সেটাই মিলবে না— বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে এমন তথ্যও উঠে এসেছে। এই সার কথাটা যে তারাও জানে, সেটা বুঝিয়ে দিল স্কুলের পড়ুয়ারা। সিউড়ি বেণীমাধব ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত ২৭ তম জাতীয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেসে ছাত্রছাত্রীদের প্রদর্শিত বিজ্ঞান মডেল ও প্রজেক্টে উঠে এসেছে জল সংরক্ষণেরই বার্তা।
তা দেখে উচ্ছ্বসিত শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলছেন, জল সংরক্ষণই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ভাবনার জায়গা। সেটাই ফোকাসে থেকেছে একটা বড় অংশের পুড়ুয়াদের বিজ্ঞান মডেলে। বুধবার থেকে শুরু হওয়া ওই প্রদর্শনীতে কী নেই! সেচ ব্যবস্থার প্রচলিত ধারণা বদলাতে এবং ভূগর্ভস্থ জলের অপচয় বন্ধে বিন্দু বা ফোঁটা সেচ ব্যবহার, জলের অপচয় রুখতে বাড়ির ছাদে লাগানো ট্যাঙ্কে জলের স্তর মাপার জন্য ইন্ডিকেটর ব্যবহার, ছাদের জল ও এমনকি দূষিত জলকে পরিস্রুত করে কৃষিকাজে লাগানো বা আর্সেনিক যুক্ত জলকে পানযোগ্য করে তোলার মতো নানা ধরনের প্রযুক্তি মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে জেলার স্কুল পড়ুয়ারা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক-মুক্ত বীরভূম গড়ার ভাবনাও।
সাঁইথিয়া টাউন স্কুলের একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্র জয়জিৎ চন্দ্র ও দেবপ্রতিম ভট্টাচার্য প্রচলিত সেচ ব্যবস্থার পরিবর্তে বিন্দু সেচ ফোঁটা সেচ তুলে ধরেছে তাদের বিজ্ঞান মডেলে। সাঁইথিয়া জে ডি গার্লসের নবম শ্রেণির ছাত্রী স্নেহা দে ও সুচেতা রায় কলকারখানা থেকে নির্গত দূষিত জল এবং ছাদে বৃষ্টির জল ধরে রেখে কী ভাবে চাষ হতে পারে, তা দেখিয়েছে। সোলার ওয়াটার ফিল্টার দিয়ে কী ভাবে দূষিত জলকে পানযোগ্য করে তোলা যায়, সেটা মডেলে তুলে ধরেছে মাড়গ্রামের গৌরাঙ্গিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তৃষা বর্মা, নূরজাহান আলমরা। আবার ভূগর্ভস্থ জলের অপচয় রুখতে বোলপুর গার্লসের একাদশ ও সপ্তম শ্রেণির ইপ্সিতা, দেবলীনা মজুমদাররা ওভারহেড ট্যাঙ্কে ইন্ডিকেটর বসানোর কৌশল দেখিয়েছে।
জাতীয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেসের আয়োজক রাজ্য সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতর, শিক্ষা দফতর, জেলা প্রশাসন, সমগ্রশিক্ষা মিশন, জেলা পরিষদ মিলিয়ে একটি অর্গানাইজ়িং কমিটি। কমিটির মাথায় রয়েছেন জেলাশাসক। এ দিন বিজ্ঞান কংগ্রেসে উপস্থিত ছিলেন বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল, সিউড়ির বিধায়ক অশোক চট্টাপাধ্যায়, জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুজিত সরকার, বিজ্ঞানী পুলিনবিহারী চক্রবর্তী, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি প্রলয় নায়েক, সমগ্র শিক্ষা অভিযানের রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর বিকাশ রায় এবং বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়া ও তাদের শিক্ষক শিক্ষিকারা। অর্গানাইজ়িং কমিটি জানিয়েছে, প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে পড়ুয়াদের স্বতন্ত্র ও মৌলিক ভাবনাকে উস্কে দিতেই এই আয়োজন। পড়ুয়াদের মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ক সচেতনতা বাড়ানোও লক্ষ্য। আয়োজক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় সিংহ এবং বিজ্ঞান কংগ্রেসের জেলা কো-অর্ডিনেটার তারক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জেলার প্রায় দুশো স্কুল থেকে পড়ুয়ারা অংশ নিয়েছিল বিজ্ঞান কংগ্রেসে। প্রায় দেড়শো বিজ্ঞান মডেল, দুই শতাধিক বিজ্ঞান প্রজেক্ট নিয়ে মোট ৩৯৮টি ইউনিট জমা পড়েছে (দু’জন করে পড়ুয়া নিয়ে একটি ইউনিট)। অর্থাৎ ৭৯৬ জন পড়ুয়া। প্রত্যেকেই পুরস্কার পাবে। তবে মডেল ও প্রজেক্টগুলির মূল্যায়নের পর সেরা ইউনিটগুলি যে স্কুলের পড়ুয়ারা করেছে, তারা রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy