হুগলির পাণ্ডুয়ার ইটাচুনা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম মুলটিতে বাস চাঁদমণির।
এ যেন স্বপ্নের উড়ান। বলা ভাল সাধারণ কন্যার অসাধারণ হয়ে ওঠার কাহিনী। হুগলির প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সোজা মুম্বই। মুক্তি পেতে চলেছে আদিবাসী কিশোরী চাঁদমণি হেমব্রমের গাওয়া প্রথম হিন্দি গান ‘জুদাইয়া বে’। আগামী ১২ ডিসেম্বর সেই গানটির ভিডিও অ্যালবাম মুক্তি পাবে একটি জনপ্রিয় মিউজিক চ্যানেলে। তার এই উড়ানের পিছনে রয়েছে নেটমাধ্যম। মুক্তি পাবার আগেই নেটমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে আদিবাসী কিশোরীর গানের টিজার।
হুগলির পাণ্ডুয়ার ইটাচুনা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম মুলটিতে বাস চাঁদমণির। গত বছর লকডাউন চলাকালীন ওই গ্রামে ত্রাণ বিলি করতে গিয়ে চাঁদমণিকে আবিষ্কার করেন সিঙ্গুরের শিক্ষক শ্যাম হাঁসদা। স্থানীয় দিলীপ হেমব্রমের সঙ্গে অচেনা গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তাঁর কানে আসে বলিউড গায়িকা নেহা কক্করের ‘ও হাম সফর’ গানটি। কিশোরীর খালি গলায় সেই গান মুগ্ধ করে শ্যামকে। গান গাইছিল আদিবাসী কন্যা চাঁদমনি হেমব্রম।
দিলীপ হেমব্রমকে নিয়ে শ্যাম হাঁসদা সোজা পৌঁছে যান সেখানে। চাঁদমণি তাঁদের সামনে বলিউড থেকে ঝুমুর গান গেয়ে চলে একের পর এক। চাঁদমণির সেই গান মোবাইল বন্দি করেন শ্যাম। তার পর তিনি নেটমাধ্যমে সেই গান তুলে দেন। ভাইরাল হয় আদিবাসী কিশোরীর গাওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে’, সঙ্গীতশিল্পী নেহা কক্করের গাওয়া ‘ও হামসফর’। ঘুরে যায় চাঁদমণির ভাগ্যের চাকা।
একাধিক সঙ্গীত পরিচালক-সহ ইন্ডিয়ান আইডল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেন তার সঙ্গে। চাঁদমণিকে হিন্দি সিনেমায় গান গাওয়ানোর প্রস্তাব দেন পঞ্জাবের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক এহসান আদরি। তখন লকডাউন চলছিল, চাঁদমনির পক্ষে কোথাও যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই পঞ্জাব থেকে কলকাতা ছুটে আসেন এহসান। কলকাতাতেই 'জুদাইয়া বে' গানের রেকর্ডিং করা হয়।
অভাবের সংসার, তিন বোনের মধ্যে চাঁদমণি বড়। স্থানীয় সারদেশ্বরী কন্যা বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ছাত্রী সে। সাত বছর আগে যক্ষ্মায় ভুগে মারা গিয়েছেন বাবা চুনু হেমব্রম। তারপর থেকে মা মালতি দেবীর সঙ্গে মাঠে ধান রোয়া, ধান কাটা-সহ সব কাজই করে চাঁদমণি। অভাব ছিলই, লকডাউন আর একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা বেড়েছিল অনেকটা। কিন্তু, শত কষ্টের মধ্যেও গান গাওয়ার ইচ্ছেটাকে জিইয়ে রেখেছে চাঁদমণি। কোনও তালিম ছাড়াই পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসা গান শুনে শুনেই চালিয়ে গেছে সঙ্গীতের চর্চা। সার্থক হয়েছে তাঁর সাধনা।
এবার বড় সঙ্গীত পরিচালকের হাত ধরেই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর গান। সরাসরি সঙ্গীত জগতে পা রাখতে পেরে খুশি চাঁদমণি। সে তার জীবনের প্রথম সাফল্য 'জুদাইয়া বে' গানটিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। একইসঙ্গে চাঁদমণি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে, চিরঞ্জিত ধীবর এবং দিলীপ হেমব্রমকে। ধন্যবাদ জানিয়েছেন, যাঁদের অগণিত সমর্থন তাঁর এই মুলটি থেকে মুম্বাই যাত্রার সঙ্গী, সাহস জুগিয়েছে সর্বক্ষণ।
জুদাইয়া বে'র অ্যালবামের সংগীত পরিচালনা করেছেন পঞ্জাবের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক এহসান আদরি। গানের কথা আরবান স্বরাজের। গানের ভিডিও পরিচালনা করেছেন অভীক সরকার এবং সম্পাদনা করেছেন দীপঙ্কর দাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy