ইন্দাসের পথে। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
পাত্রসায়রের গুলিবিদ্ধ অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সৌমেন বাউরির পাশে দাঁড়াল পাশের ব্লক ইন্দাসের ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ মিছিল করেন ইন্দাসের বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রী। সৌমেন ও তার জেঠতুতো দাদা তাপস এখনও বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁদের পরিজনদের উদ্বেগ কাটেনি।
গত শনিবার রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর পাত্রসায়রে মিছিলের পরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কাঁকরডাঙা মোড়। জনতা-পুলিশের সংঘাতে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে এলাকা। বোমা পড়তে থাকে। গোলমাল পাকানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় বিজেপির পাত্রসায়র ২ মণ্ডল সভাপতি তমালকান্তি গুঁই। তাতে আগুন ঘি পড়ে। গণ্ডগোল আরও বাড়ে। চলে গুলি। গুলিবিদ্ধ হন স্কুল ছাত্র সৌমেন এবং বিজেপি কর্মী তাপস ও টুলুপ্রসাদ খাঁ।
পরিবারের দাবি, পাত্রসায়রের কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সৌমেন সে দিন টিউশন থেকে বাড়ি ফিরছিল। গোলমালের মধ্যে সে পড়ে যায়। গুলি ফুঁড়ে দেয় তার পেট। শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাকে ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে’ ভর্তি রাখা হয়। মঙ্গলবার তাকে দেখতে এসে বিজেপি নেতা মুকুল রায় দাবি করেছিলেন, ওই স্কুল ছাত্রের একটি কিডনি বাদ দিতে হয়েছে। তাই গুলি চালানোর ঘটনায় যেমন এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে, তেমনই রাজনীতি না করা একটি স্কুল ছাত্রের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সমান উদ্বেগে রয়েছেন বাসিন্দারা।
ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার কালো ব্যাজ পরে, হাতে কালো পতাকা নিয়ে ক্লাস বয়কট করে বিক্ষোভ দেখায় সৌমেনের সহপাঠীরা। তাদের প্রশ্ন— সৌমেনের কী দোষ ছিল, পুলিশকে তার জবাব দিতে হবে। একই সঙ্গে তারা প্রশ্ন তোলেন, পরবর্তীতে তাদের আর কেউ গুলি খাবে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়।
সেই একই প্রশ্ন তুলে, রাজনৈতিক অশান্তি যাতে আর না ছড়ায়, সেই আর্জি নিয়ে এ দিন ইন্দাসের পড়ুয়ারা পথে নামে। ইন্দাস হাইস্কুলের সামনে থেকে শুরু হয়ে পীরতলা হয়ে আবার ইন্দাস হাইস্কুলের সামনে ফিরে আসে মিছিল। পীরতলায় একটি পথসভাও করে তারা।
মিছিলে উপস্থিত অভিজিৎ হাজরা জানান, ইন্দাস কলেজ এবং কিছু স্কুলের ছাত্রছাত্রী এই মিছিলে যোগ দেন। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার দাবিতে এবং পাত্রসায়রের স্কুল ছাত্রের গুলিতে জখম হওয়ার প্রতিবাদে এই মিছিল করা হয়। ইন্দাস কলেজের ছাত্র সুপ্রিয় মিত্র বলেন, ‘‘২০০৯ সালে পাত্রসায়র উত্তপ্ত হওয়ার পরে তার আঁচ এসে পড়েছিল ইন্দাসে। পাত্রসায়রে একটি নিরীহ ছাত্রের গুলি লেগেছে। তার কী দোষ? ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।’’ আর এক ছাত্র যদুপতি সাঁতরা বলেন, ‘‘এখন পাত্রসায়রে গোলমাল হল। কে জানে কাল হয়তো ইন্দাসে হবে। ছাত্রছাত্রীরাও আজকের দিনে সুরক্ষিত নয়। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
সৌমেন-তাপসের বাড়িতে উৎকণ্ঠা অবশ্য কাটেনি। সকাল হলেই বাড়ির কেউ না কেউ বাঁকুড়া মেডিক্যালে যাচ্ছেন। রাতে থাকছেন পালা করে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, আগের থেকে দু’জনে কিছুটা ভাল থাকলেও সৌমেন এখনও পুরোপুরি বিপন্মুক্ত হয়নি। ছেলের চিন্তায় ঘুমতে পারছেন না সৌমেনের মা মঞ্জু বাউরি। কথা বলতে গেলেই কেঁদে ফেলছেন। রোজ বাঁকুড়া যাতায়াতের খরচ জোগাড় করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে দিনমজুর পরিবারটিকে।
চার দিনের পুলিশ হেফাজত শেষে এ দিন বিজেপি নেতা তমালকান্তি গুঁইকে বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষের দাবি, ‘‘গোলমালের সময় তমাল নিজের দোকানে বসেছিলেন। তাঁর দোকানের সিসিক্যামেরার ফুটেজই তার প্রমাণ। তারপরেও মিথ্যা অভিযোগে ধরা হয়েছে। আমরা আইনি পথেই লড়ব। আন্দোলনেও নামব।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy