বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল পরিবার। আয়োজনও অনেক দূর এগিয়েছিল। কিন্তু মেয়েটা যে এখন বিয়ে নয়, বরং আরও পড়তে চায়, বাড়ির কেউ-ই তাতে গুরুত্ব দেননি।
একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী পরিবারকে বোঝানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত চিঠি লিখে মেয়েটি সমস্ত ঘটনা জানিয়েছিল পুরুলিয়া জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিককে।
সেই চিঠিই বদলে দিল সন্তোষী গরাইয়ের জীবন। দিন সাতেক আগে ওই নাবালিকা ছাত্রীর চিঠি পেয়ে তার বাড়িতে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করল প্রশাসন ও চাইল্ডলাইন। মঙ্গলবার পুরুলিয়া ১ ব্লকের চাকদা গ্রামে ওই ছাত্রীর বাড়িতে যান গিয়েছিলেন বিডিও দিব্যজ্যোতি দাস, চাইল্ড লাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটার দীপঙ্কর সরকার, শিশু সুরক্ষা সমিতির সদস্য অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুরুলিয়া মফস্সল থানার পুলিশকর্মীরা। প্রশাসনিক আধিকারিকেরা জানতে চাওয়ায় সন্তোষী বলে, সে বিয়ে নয়, আরও পড়তে চায়।
বিডিও বলেন, ‘‘মেয়েটির অনিচ্ছাতেই তার বিয়ের আয়োজন চলছিল। সবাই মিলে ওদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বোঝানোর পরে ওঁরা বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হয়েছেন। সাবালিকা না হওয়া অবধি মেয়ের বিয়ে দেবেন না, এই মর্মে ছাত্রীটির বাবা প্রশাসনের কাছে মুচলেকা দিয়েছেন।”
চাইল্ডলাইন ও জেলা শিশু সুরক্ষা সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্তোষীর বয়স ১৫ বছর আট মাস। স্থানীয় ভাটবাঁধ হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল মফস্সল থানার রাঘবপুর গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে। কাল, বৃহস্পতিবারই ছিল বিয়ের দিন।
প্রথম থেকেই বিয়ে করতে রাজি ছিল না ওই ছাত্রী। বাড়ির লোকজনকে বলার পরেও তার কথা শোনা হয়নি। কোনও উপায় না পেয়ে সে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক শিশির মাহাতোকে চিঠি লেখে। শিশিরবাবুর কথায়, ‘‘চাকদা গ্রামের ওই ছাত্রী চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, সে পড়াশানো করতে চায়। কিন্তু বাড়ির লোকজন তার অমতে বিয়ে স্থির করেছে। চিঠিতে আমাকে কিছু একটা করার আর্জি জানিয়েছিল মেয়েটি।”
চিঠি পেয়ে শিশিরবাবু স্থানীয় ভাবে ঘটনাটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে শুক্রবার জানান চাইল্ড লাইনকে। চাইল্ড লাইনের তরফে দীপঙ্করবাবু জানান, শিশু সুরক্ষা সমিতির কাছ থেকে খবর পাওয়ার পরেই বিডিও এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
সবাই মিলে এ দিন চাকদা গ্রামে গিয়ে দেখেন, বিয়ের সমস্ত আয়োজন প্রায় পাকা। বাড়িতে মেয়েটির আত্মীয়েরাও চলে এসেছেন। এই অবস্থায় বিয়ে বন্ধ করে প্রথমে রাজি হয়নি ওই ছাত্রীর পরিবার। তবে ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া আইনবিরুদ্ধ কাজ— পুলিশ, প্রশাসন, চাইল্ডলাইন মিলে সে কথা বোঝানোর পরে বিয়ে বন্ধে রাজি হয় সন্তোষীর পরিবার।
চাইল্ডলাইন সূত্রে জানা যাচ্ছে, মেয়েটির বাবা-মা দু’জনেই নিরক্ষর। পরিবারে সন্তোষী-ই প্রথম, যে মাধ্যমিকের গণ্ডী ডিঙিয়েছে। সেই সন্তোষীই এ দিন বাবার হয়ে মুচলেকা লিখেছে। টিপসই দিয়েছেন বাবা, পেশায় চাষি সঞ্জিত গরাই। তিনি বলেন, ‘‘নিয়মকানুন আমাদের জানা নেই। কাছেপিঠের মধ্যে ভাল পাত্র পাওয়ায় মেয়ের বিয়ে ঠিক করি। পাত্রপক্ষও বিয়ে তাড়াতাড়ি করার জন্য বলেছিল। যাই হোক, এখন আইন জানার পরে ঠিক করেছি, মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত ওর বিয়ে দেব না।’’
পুলিশ বিয়ে বন্ধ হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে রাঘবপুর গ্রামে পাত্রের পরিবারকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy