Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

লাভপুরে স্কুলের গাছে ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ

কেন্দ্রীয় অনুমোদন প্রাপ্ত জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। বৃহস্পতিবার স্কুল ক্যাম্পাস চত্বরেরই একটি গাছে অনিকেত বাগদি (১২) নামে ওই ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ মেলে।

হাসপাতালে পরিবারের সঙ্গে অনিকেতের বাবা ও দাদু। নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে পরিবারের সঙ্গে অনিকেতের বাবা ও দাদু। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৪
Share: Save:

কেন্দ্রীয় অনুমোদন প্রাপ্ত জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। বৃহস্পতিবার স্কুল ক্যাম্পাস চত্বরেরই একটি গাছে অনিকেত বাগদি (১২) নামে ওই ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ মেলে। খবর পেয়ে লাভপুরের গোপালপুরে ওই স্কুল থেকে দেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।

অনিকেতের বাড়ি ময়ুরেশ্বরের মহুরাপুর গ্রামে। সাত মাস আগে সে ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। থাকত স্কুল চত্বরেই ছাত্রাবাসে। তার মৃত্যুকে ঘিরে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। অনিকেতের বাবা বাসুদেব বাগদির দাবি, ‘‘আমার ছেলেকে প্রায়ই র‍্যাগিং করা হত। যে ছাত্রাবাসে ছেলে থাকত, সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত হাউস টিচার প্রেমেনকুমার সরকারকে আমি বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তা সত্ত্বেও র‌্যাগিং থামেনি। আমাদের সন্দেহ, র‌্যাগিংয়ের জেরেই ওর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পরে দেহ গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছে সব জানিয়ে অভিযোগ করব।’’ রাত পর্যন্ত অবশ্য কোনও অভিযোগ হয়নি। পুলিশ আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ওই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির অঙ্ক ও সংস্কৃত পরীক্ষা ছিল। অনিকেত সেই পরীক্ষা দেওয়ার পরে ছাত্রাবাসে ফিরে খাওয়াদাওয়া সারে। তার পরেই বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ ওই ছাত্রাবাসের পিছনেই একটি পেয়ারা গাছে নাইলনের দড়ি দিয়ে তার দেহ ঝুলতে দেখা যায়। ওই ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ স্কুল গেটের সামনে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দেহ উদ্ধার করে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিকেতের হস্টেলে মোট ৩৭ জন ছাত্র থাকে। তার মধ্যে অনিকেত যে ‘ডি’ রুমে থাকত, সেই ঘরে ১৪ জন ছাত্র থাকে। তার মধ্যে মাত্র তিন জন ষষ্ঠ শ্রেণির। বাকিরা উঁচু ক্লাসের। এ দিন বিকেলে স্কুলে গিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির কোনও ছাত্রেরই অবশ্য দেখা মেলেনি। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, ওরা টিফিন খেতে গিয়েছে।

আরও পড়ুন:

আইপিএল নিয়ে বোর্ডের নির্দেশিকা

অষ্টম শ্রেণির ছাত্র দুই ছাত্র অবশ্য দাবি করেছে, তাদের ছাত্রাবাসে কাউকে র‌্যাগিং করা হয় না। পরীক্ষার সময় থেকেই অনিকেত কান্নাকাটি করছিল। তাদের দাবি, ‘‘পরীক্ষা খারাপ হওয়াতেই ও এই পথ বেছে নিয়েছে।’’ র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন প্রেমেনবাবুও। তাঁর দাবি, ‘‘আমার কাছে এ রকম কোনও অভিযোগ কেউ করেননি। আমাদের হস্টেলেও কোনও র‌্যাগিং হয় না।’’

মৃত ছাত্রটির বাবা বাসুদেববাবু বলেন, ‘‘স্কুল থেকে প্রথমে দুপুর ১টা নাগাদ ফোন করে জানানো হয়, ‘আপনার ছেলেকে নিয়ে সমস্যা হয়েছে। চলে আসুন।’ পরে দুটো নাগাদ আবার জানানো হয় ছেলে আত্মহত্যা করেছে। অথচ প্রেমেনবাবু আমাকে বললেন, পৌনে তিনটে নাগাদ তাঁরা মৃত্যুর খবর পান।’’ বাসুদেববাবুর প্রশ্ন, অনিকেতকে যদি পৌনে তিনটে নাগাদ গলায় দড়ি নিয়ে ঝুলতে দেখা যায়, পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগে তার মৃত্যুর খবরের ফোন কী করে এল তাঁর কাছে? এ নিয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ অনিকেতের দেহ বোলপুর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। তার দাদু হারাধন বাগদি এবং তাঁর বন্ধু শ্যামল বিত্তার ছিলেন হাসপাতাল চত্বরে। শোক সামলে কোনও রকমে হারাধনবাবু দাবি করলেন, ‘‘গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে যে সব লক্ষণ দেখা যায়, তা আমার নাতির মধ্যে ছিল না। চোখে চশমাটা পর্যন্ত পরা ছিল।’’

নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা স্বাতী মণ্ডল বলেন, ‘‘মাঠে গরু চরাতে যাওয়া কিছু লোকের কাছে, অনিকেতের গাছে ওঠার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি, ও গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছি। তার পরেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’ র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি তাঁরও।

অন্য বিষয়গুলি:

Student Dead Body Tree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy