দোকানে ব্যস্ত কবিতা। নিজস্ব চিত্র
এত দিন সংসার টানছিলেন বাবা। কিন্তু পথ দুর্ঘটনায় হাত ভেঙেছে তাঁর। সংসারের চাকা থমকে যেতে দেখে এগিয়ে এসেছেন মেয়ে। এক হাতে সাইকেল ভ্যান টানছেন বাবা। পিছন থেকে ভ্যান ঠেলছেন নবম শ্রেণির ছাত্রীও। কখনও বা সে খদ্দেরদের এগিয়ে দিচ্ছে ফুচকা। আবার গুনে নিচ্ছে পয়সাও।
এমনই ঘটনা রোজ ঘটে চলেছে বীরভূমের বোলপুরের বাঁধগোড়ার বাসিন্দা কবিতা শাহের জীবনে। কবিতা বোলপুরের বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের নবম শ্রেণির ছাত্রী। কবিতার বাবা কপিলদেব শাহ দীর্ঘ দিন ধরেই বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের গেটের সামনে ফুচকা বিক্রি করতেন। এ ভাবেই চলত তাদের সংসার। কিন্তু কিছু দিন আগে বোলপুরের চৌরাস্তা এলাকায় একটি টোটোর সঙ্গে দুর্ঘটনার জেরে হাত ভেঙে যায় কপিলের। তাঁর হাতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু ফের সংসারের হাল ধরার জন্য সেই হাত যে এখনও উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি তা জানাচ্ছেন কপিল নিজেই। এমন পরিস্থিতিতে সংসারের হাল ধরতে এগিয়ে এসেছে তাঁর মেয়ে কবিতা। বয়স ১৪। কিন্তু এই বয়সেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালাচ্ছে সে। মেয়ের লড়াকু মানসিকতা দেখে কপিল বলছেন, ‘‘ও আমাকে অনেক সাহায্য করে। কবিতা না থাকলে এই অবস্থায় সংসার চালানো যেত না।’’
পরিবারের হাল ধরতে গত দেড় মাস ধরে বিশ্বভারতীর গেটের সামনে একা একাই ফুচকা বিক্রি করছে কবিতা। বিকেল হলেই সে বসে দোকান সাজিয়ে। এখন সে পাকাপোক্ত ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছে। এত কিছুর মধ্যেও অবশ্য পড়াশোনা বন্ধ হয়নি তার। কবিতা বলছে, ‘‘এখন করোনার জন্য অনলাইনে পড়াশোনা চলছে। আমিও অনলাইনে পড়াশোনা করছি। আগামী বছর আমার মাধ্যমিক পরীক্ষা। তবে সংসারের যা অবস্থা তাতে বাবার পাশে আমাকে দাঁড়াতেই হবে। তাই ফুচকা বিক্রি করে আমি যতটা পারছি পড়াশোনায় সময় দিচ্ছি।’’ কবিতার পাশে দাঁড়িয়েছেন বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক শিক্ষিকারাও। পড়াশোনার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর এমন লড়াকু মানসিকতা দেখে তারিফ করছেন বোলপুরের বাসিন্দারা। অনেকেই উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন কবিতাকে। অনেকে বলছেন, ‘‘এমন কবিতা জন্মাক ঘরে ঘরে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy