Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ফসল ওঠার মরসুমে ঝড়, ক্ষতির আশঙ্কা

ধান কাটার সময়েই হঠাৎ ঝড়। ওই সাময়িক ঝড়েই ফলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। শুধু ফসলের ক্ষতিই নয় শনিবার বিকেলের ঝড়ে বোলপুর ও ইলামবাজার এলাকায় অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে জনজীবন। রাস্তার ধারে থাকা বড় বড় গাছ ভেঙে পড়েছে। তার জেরে যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। আবার ঝড়ের দাপটে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকার সাময়িক ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও তো বারো ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৩:১৩
Share: Save:

ধান কাটার সময়েই হঠাৎ ঝড়। ওই সাময়িক ঝড়েই ফলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

শুধু ফসলের ক্ষতিই নয় শনিবার বিকেলের ঝড়ে বোলপুর ও ইলামবাজার এলাকায় অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে জনজীবন। রাস্তার ধারে থাকা বড় বড় গাছ ভেঙে পড়েছে। তার জেরে যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। আবার ঝড়ের দাপটে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকার সাময়িক ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও তো বারো ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। রবিবার বোলপুরের বিডিও শমীক পাণিগ্রাহীর অবশ্য দাবি, “সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রধান এবং আধিকারিকদের সঙ্গে টানা যোগাযোগ রেখেছি। শনিবারের ঝড়-জলে কোনও এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত জানা নেই। চাষে ক্ষতি হয়েছে বলেও কোন অভিযোগ পাইনি।’’ তবে, কিছু এলাকায় ঝড়ের জেরে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়া এবং রাস্তার ধারে গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার কথা তিনি মেনে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, বর্তমানে অবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে। অন্য দিকে, ক্ষয়ক্ষতির কোনও অভিযোগ পেলে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস বিডিও দিয়েছেন। অন্য দিকে, বোলপুরের কৃষি সম্প্রসারণ আধিকারিক অরিন্দম চক্রবর্তী বলেন, “খরার ধানে শনিবারের ঝড় জল কী প্রভাব ফেলেছে, দফতরের কর্মীদের দিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির কোনও অভিযোগ এখন পাইনি।”

যদিও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ আচমকা ঝড় হয় এলাকায়। ঝড় থামাতে না থামতেই এক পশলা বৃষ্টিও হয়। এই মরসুমের খরার ধান জমি থেকে বাড়িতে আসার কথা দিন দু’চারের মধ্যে। কেউ কেউ আবার ধান কাটা শুরুও করেছেন। এমন অবস্থায় কিছু ক্ষণের ঝড়ে কার্যত লন্ডভন্ড গোটা এলাকা। বোলপুর ব্লকের একাধিক পঞ্চায়েত এলাকায় বিঘের পর বিঘে খরার ধান জমিতে রয়েছে। আবার কেউ কেউ কেটেছেন। ব্লকের সাত্তোর, কসবা এলাকায় ধান কাটার গাড়ি গোটা পাঁচেক এনে মজুত করেছেন চাষিরা। সাত্তোরের খরার ধান চাষি শেখ সুরজের দাবি, ‘‘ধান কাটা গাড়ির সঙ্গে কথা হয়েছিল। রবিবার কাটার কথা ছিল। কিন্তু শনিবারের ঝড় জলে ধানের গাছ জমিতে লুটিয়ে পড়েছে। আবার রবিবার আকাশের মুখ ভার। এমন অবস্থায় ধান কেটে কোথায় রাখব, সে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’’ একই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন ইলামবাজারের চাষি মোহন নায়েকও। বিঘে দশেক খরার ধান চাষ করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘ফলন এ বার ভালই হয়েছে। কিন্তু, বাড়ি নিয়ে আসার আগে প্রকৃতি এমন রুষ্ট হচ্ছে যে মনে হচ্ছে ফসল জমিতেই পড়ে থাকবে।’’ এ ক’দিন জড়ের জেরে এলাকার দুই ব্লক এলাকায় চাষের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিদের একটা বড় অংশই।

এ দিকে, শনিবারের ঝড়ে রাস্তার ধারের বড় গাছ পড়ে গিয়েছে। বোলপুর-মুলুক রাস্তার উপর আরতি সিনেমাতলার কাছে একটি বড় আমগাছ রাস্তায় পড়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ওই রাস্তায়। বড় গাড়ি ঘুরপথে লায়েকবাজার হয়ে যাতায়াত করছে। ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি তেমন অর্থে না হলেও শান্তিনিকেতনের একাধিক জায়গায় তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। বিশ্বভারতীর আনন্দ পাঠশালার কাছে বিদ্যুৎ খুঁটি উপড়ে তার ছিঁড়ে গিয়েছে। শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লি এলাকায় রবীন্দ্র ভবনের অধিকর্তা, প্রো-ভোস্ট তপতী মুখোপাধ্যায়ের আবাসনে ১৫ ঘণ্টার কিছু বেশি বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। আবার বিপজ্জনক ভাবে তার ছিঁড়ে গিয়েছে গীতা এলাকায়। তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ এলে হিতে বিপরীত হতে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন বিশ্বভারতীর সম্পত্তি আধিকারিক অশোক মাহাতো। তার ছিঁড়ে লোহার তারের বেড়া বিদ্যুতের সংস্পর্শে চলে আসায় বড় বিপদের আশঙ্কা করছেন ছাত্রছাত্রীরাও। একই রকম ভাবে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে একাধিক হোস্টেলে ও দফতরেও। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এ দিন অবশ্য তেমন ভাবে বিশ্বভারতীর কাজকর্মে ব্যাহত হয়নি। আর প্রয়োজনীয় মেরামত এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। অন্য দিকে, তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিপর্যস্ত হয়েছে ইলামবাজার থানার ধল্লা এলাকাতেও। রবিবার বিকেলে পর্যন্ত অবশ্য ওই এলাকায় জোর কদমে প্রয়োজনীয় মেরামতের কাজে লেগেছে বিদ্যুৎ দফতর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE