দুয়ারে সরকারের শিবির করে পরিযায়ী শ্রমিকদের নথি সংগ্রহ করতে নামছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন —ফাইল চিত্র।
পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। তবে প্রকৃত সংখ্যা কি প্রকাশ্যে আসবে? এ নিয়ে কিন্তু সংশয় ঘনাচ্ছে।
বিরোধীদের মতে, রাজ্যের দরিদ্রতম জেলা পুরুলিয়ায় পরিযায়ী শ্রমিকের প্রকৃত সংখ্যাটা সামনে এলে রাজ্যে কর্মসংস্থানের হাঁড়ির হাল বেআব্রু হয়ে পড়বে। তাই করোনাকালেও এই সংখ্যা গোপনের চেষ্টা চলেছে। তাঁদের আরও দাবি, এই তথ্য সংগ্রহ করে থামলেই হবে না, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা মোচনেও সরকারকে তৎপর হবে হবে। কারণ, পরিযায়ীদের কর্মসংস্থানেও নানা ঘোষণা হয়ে চলেছে। তবে কাজের কাজ হচ্ছে না।
লকডাউনে রাজস্থানের জয়পুর থেকে ফেরার পথে উত্তরপ্রদেশের ঔরৈয়ায় লরি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল পুরুলিয়ার সাত পরিযায়ী শ্রমিকের। তারপর আবার রাজস্থান থেকে আসার পথে কানপুর-এলাহাবাদ সড়কে বাস উল্টে আহত হন পুরুলিয়ার ২২ জন পরিযায়ী শ্রমিক। কয়েক সপ্তাহ পরে বেঙ্গালুরু থেকে ফেরার পথে পুরুলিয়ার লাগদায় বাস উল্টে আহত হন ১২ জন শ্রমিক। গত জুনে ওড়িশার বাহানাগা বাজার স্টেশনের অদূরে রেল দুর্ঘটনায় পুরুলিয়ার চার পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
করোনাকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর সরকার এমন সব প্রকল্প করবে যাতে পরিযায়ীদের আর ভিন্ রাজ্যে যেতেই হবে না। তখনকারমতো একশো দিনের কাজ পেয়েছিলেন একাংশ পরিযায়ী শ্রমিক। তবে নিজের রাজ্যে কর্মসংস্থানের দিশা তাঁদের দেখাতে পারেনি রাজ্য সরকার। যেমন, জেলার রঘুনাথপুরে শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠলেও কর্মসংস্থানের অভাব রয়ে গিয়েছে। তাই কার্যত একফসলি কৃষি-নির্ভর এই জেলার প্রায় সব ব্লক থেকেই যুবকেরা পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিন্ রাজ্যে কাজে যাচ্ছেন।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, জেলার কত মানুষ যে পেটের দায়ে বাইরে কাজ করতে যান, তা করোনাকালেই বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার এতদিন তাদের সম্পর্কে কোনও তথ্যই রাখেনি। তাই করোনাকালে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য চালু করা ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্নযোজনা’র সুবিধা পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘‘কোনও জেলায় ২৫ হাজার বা তার বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ঘরে ফিরলেই কেন্দ্রের ওই সুবিধা পাওয়া যেত। জেলা প্রশাসনের কাছে সে তথ্য ছিল না। পরে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করে জানতে পারি, সে সময় ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক ফিরেছিলেন।’’
বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে তথ্য গোপন করেছে প্রশাসন। করোনাকালে আমাদের সমীক্ষায় জেলায় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের হিসেব উঠে এসেছিল। প্রশাসন অনেক গড়িমসি করে জানe/, সংখ্যাটা ৫৮ হাজার। এ বারও সঠিক তথ্য ওরা সামনে আনবে কি না সন্দেহ। কর্মসংস্থানের ঘোষণাই সার, কলকারখানা জেলায় কিছুই হচ্ছে না।’’
অভিযোগ উড়িয়ে জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তৃণমূলের সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘করোনার সময় প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিককে একশো দিনের কাজ দেওয়ার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের তৈরি করা বিশ্বকর্মা পোর্টালের মাধ্যমে প্রায় ১৪০০ শ্রমিককে বিভিন্ন সংস্থায় কাজ দেওয়া গিয়েছে। রঘুনাথপুরেও বিনিয়োগ আসছে। তবে অনেকে দীর্ঘদিন ধরেই বাইরের রাজ্যে কাজ করেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে সরকার ভাবে বলেই পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।’’
যদিও সরকারের অতীতের ঘোষণা দেখার পরে এ বারের উদ্যোগ নিয়ে আশাবাদী নয় অনেকেই। মিজ়োরামে নির্মীয়মাণ সেতু বিপর্যয়ে মালদহের শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের কানপুরেও সেতু নির্মাণের কাজে যুক্ত আড়শার বামুনডিহা গ্রামের সাগর লায়া বলেন, ‘‘ঝুঁকি যতই থাক, ভিন্ রাজ্যে কাজে যাওয়াই আমাদের ভবিতব্য। এলাকায় কাজ কোথায়?’’ ওই গ্রামের মধুসূদন যোগীও সেখানেই কাজ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘লকডাউনে ফেরার পরে প্রশাসন বলেছিল, দোকান খুলতে ৫০ হাজার টাকা দেবে। সে আর কোথায় পেলাম!’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপালের মতে, ‘‘শুধু তথ্য নিলেই হবে না। ভিন্ রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা সমস্যায় পড়লে তাঁরা কী ভাবে প্রশাসনকে জানাবেন তা জানাতে হবে। সরকারকেও সমাধান করতে হবে।’’
পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, ‘‘১ সেপ্টেম্বর থেকে দুয়ারে সরকারের শিবিরে পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহে পৃথক কাউন্টার থাকবে। তারপরে কী হবে, তা নিয়ে বিশদ নির্দেশ আসেনি। যে রকম নির্দেশ আসবে, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’ (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy