মাচা: আগে বসতে হত মাটিতে। এ বার তৈরি হল মাচা। শনিবারের হাটে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
উত্তরের কনকনে হাওয়া জানান দিচ্ছে শীতের। সপ্তাহ পেরোলেই পৌষমেলা। এমন আবহে জমে উঠছে খোয়াই বনের অন্য হাটও।
বীরভূম তথা শান্তিনিকেতনের অন্যতম আকর্ষণ সোনাঝুরি খোয়াই। শান্তিনিকেতন লাগোয়া সেচ ক্যানালের দু’পাশেই রয়েছে খোয়াই বন। শীত পড়তেই এই বন হয়ে ওঠে পর্যটন ক্ষেত্র। এমনকি পৌষ উৎসবের সময়েও পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ, এই সোনাঝুরি বনের ভিতর খোয়াই হাট। এখন যদিও সারা বছরই ভিড় জমে সোনাঝুরিতে। তবে, শীতকালে এই ভিড় উপচে পড়ে। বিশেষ করে পৌষমেলার সময়ে।
বিশ্বভারতী কলাভবনের প্রাক্তন ছাত্রী, প্রয়াত শ্যামলী খাস্তগীরের উদ্যোগে ওই হাটটি ১৭ বছর আগে ‘শনিবারের হাট’ বলে এলাকায় পরিচিতি পায়। কারণ, হাট বসত শনিবার বিকেলে। তখন হাটটি শুরু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, এলাকার পার্শ্ববর্তী মানুষ বিশেষ করে মহিলাদের তৈরি নানা হস্তশিল্প, বাড়িতে করা খাবার বিক্রি করা। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে বিক্রি। এই ‘খোয়াই বনের অন্য হাট’কে আকর্ষণীয় করে তুলতে এ বছর নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগও।
চলতি বছরের মে মাসে বীরভূম জেলা সফরে শান্তিনিকেতনের খোয়াই ঘুরে দেখে নতুন করে সে সব সাজানোর কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খোয়াই-এ একটি ইকো ট্যুরিজম পার্ক করারও ঘোষণা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পরিবেশের কথা মাথায় রেখে খোয়াই অঞ্চলে পর্যটকদের জন্য কিছু সুবিধা দেওয়া দরকার। এ কারণে সেখানে রোদ, বৃষ্টি থেকে বাঁচতে কিছু ছাউনি, বসার ব্যবস্থা, জলের ব্যবস্থা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেই এলাকা পরিদর্শন করেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। তিনি জানান, যত দ্রুত সম্ভব পরিবেশের কথা মাথায় রেখে সাজিয়ে ফেলা হবে খোয়াই।
কথা মতোই পৌষমেলার আগে মেলার মাঠ সেজে ওঠার সঙ্গেই সাজছে ‘খোয়াই বনের অন্য হাট’। রাজ্য পর্যটন দফতর, জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব বাঁশের মাচা। মোট ১০টি মাচা তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যেই ৭টি মাচা সম্পূর্ণ হয়েছে। খোয়াইয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কোনও গাছ না কেটেই তৈরি হচ্ছে এই মাচা। কোথাও ইউক্যালিপটাস, কোথাও আবার সোনাঝুরি গাছকে ঘিরে নীচে বাঁশের মাচা, উপরে বাঁশেরই ছাউনি দিয়ে তৈরি হচ্ছে পর্যটকদের বসার জায়গা। যদিও সরকারি ভাবে হাটের বিক্রেতাদের মাচায় বসার ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।
তবে খোয়াই হাটের বিক্রেতারাই ঠিক করেছেন মাচাগুলিতে পর্যটক ছাড়া কাউকে বসতে দেওয়া হবে না। তৈরি হচ্ছে একটি বাউল মঞ্চও। সেখানেই মেলার ক’দিন পরিবেশিত হবে বাউল গান। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, ‘‘পর্যটকদের কাছে খোয়াইকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেই রাজ্য সরকারের তৎপরতায়, জেলা প্রশাসন ও বন দফতরের চেষ্টায় এই উদ্যোগ। এগনো হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতোই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy