এই বাসেই পিষ্ট হয়েছে স্কুলছাত্র। দুবরাজপুর শহরের স্টেশন মোড়ের কাছে শনিবার। নিজস্ব চিত্র।
শহরের মধ্যে ‘বেপরোয়া’ গতিতে ছুটতে থাকা বাসের চাকার নীচে পিষে গেল এক স্কুলছাত্র। শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ ওই দুর্ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় দুবরাজপুর শহরের স্টেশন মোড়ের কাছে। উত্তেজিত জনতা বাসের কাচ ভাঙচুর করে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণের দাবি তোলা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত স্কুলছাত্রের নাম নজরুল হক ওরফে মেহেতাব খান (১৩)। বাড়ি দুবরাজপুর থানার আদমপুরে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নজরুল দুবরাজপুরের বালিজুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। গ্রাম থেকে এ দিন দুবরাজপুরে এসেছিল সাইকেল সারাতে। সঙ্গী ছিল তারই এক সহপাঠী। বক্রেশ্বর-দুবরাজপুর রাস্তা ধরে দুবরাজপুর রেলসেতু পেরোতেই ঝাড়খণ্ডের কুণ্ডহিত–আসানসোল রুটের একটি বাস দ্রুত গতিতে পিছন থেকে নজরুলের সাইকেলে ধাক্কা মারে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রাস্তায় ছিটকে পড়লে বাসের চাকা ওই পড়ুয়ার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই নজরুলের মৃত্যু হয়। অন্য সাইকেলে তার সহপাঠী একটু এগিয়ে গিয়েছিল বলে বরাত জোরে বেঁচে যায়।
চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন আশপাশের অনেকে। বাসের কাচ ভাঙচুর করা হয়। যাত্রীরা ভয়ে বাস থেকে নেমে পড়েন। সুযোগ বুঝে চালক পালিয়ে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। নজরুলের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে বাসটি আটক করা হলেও নথিপত্র ঠিক থাকায় বাস মালিকের বিরুদ্ধে নয়, চালকের বিরুদ্ধে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে এক কিশোরকে মেরে ফেলার মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
দুঃসংবাদ পাওয়া মাত্রই সেখানে ছুটে আসেন মৃত পড়ুয়ার বাবা, প্রান্তিক ব্যবসায়ী সুবের আলি খান এবং মা মেহেরুন বিবি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। ছাত্রের মৃত্যুতে বালিজুড়ি স্কুলে এ দিন ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। ভরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিনয় সৌ বলেন, ‘‘চলতি বছরেই নজরুল আমাদের স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। খুবই দুঃখজনক ঘটনা।’’
দুর্ঘটনার পর যান নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁরা জানান, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, তার ১০০ মিটারের মধ্যে তিনটি স্কুল রয়েছে। সেই স্কুলের পড়ুয়ারা তো বটেই, আরও দু’টি স্কুলের পড়ুয়া ওই রাস্তায় দিয়েই রোজ যাতায়াত করে। ব্যস্ত ওই রাস্তায় এমনিতেই প্রচুর যানবাহন চলে। মাস কয়েক আগে সংস্কারের ফলে রাস্তা মসৃণ হওয়ায় গাড়ির গতি বেড়েছে। পাশাপাশি স্টেশনে যাওয়ার রাস্তাও মিশেছে। কিন্তু, ট্রাফিক সামলাতে ওই রাস্তায় থাকেন না কোনও ট্রাফিক পুলিশ বা সিভিক ভলান্টিয়ার। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা না-হলে ফের এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy