Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Municipality of Birbhum

তিন শহরে কি ব্যবস্থা? চর্চা দলেই

জেলা সদর সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট তিন শহর মিলিয়ে মোট ৬১টি ওয়ার্ড রয়েছে।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৮
Share: Save:

একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিয়েছেন, যে-সব জায়গায় আশানুরূপ ফল হয়নি, সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ হবে। তার পরেই জল্পনা শুরু হয়েছে বীরভূমের তিন পুরসভা নিয়ে। কারণ, সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট— তিন পুরসভাতেই লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বিজেপির থেকে পিছিয়ে তৃণমূল।

রবিবার ধর্মতলায় একুশে জুলাইয়ের সমাবেশের মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দেন যে, পুরসভা এবং পঞ্চায়েতে যে যে এলাকায় লোকসভা ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে, সেখানে পুরসভার চেয়ারম্যান, শহর তৃণমূলের সভাপতি, পঞ্চায়েত প্রধান এবং অঞ্চল সভাপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন দলীয় নেতৃত্ব। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের এই কড়া বার্তার পরে সিউড়ি, বোলপুর ও রামপুরহাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরপ্রধান ও শহর সভাপতিরা কি দুশ্চিন্তায়?

প্রকাশ্যে তাঁরা বলছেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে সূত্রের খবর, শাস্তির খাঁড়া নেমে আসতে পারে ধরে নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে দলেঅভিষেক স্পষ্টই জানান, পঞ্চায়েত বা পুরসভা ভোটে অনেক নেতা যে পরিশ্রম করেন, লোকসভা বা বিধানসভায় তা করেন না। জেলার এক নেতার কথায়, ‘‘এই যুক্তির পাল্টা যুক্তি খুঁজে পাওয়াই শক্ত। বীরভূমের তিন পুরসভার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।’’

জেলা সদর সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট তিন শহর মিলিয়ে মোট ৬১টি ওয়ার্ড রয়েছে। ২০২২ সালের পুর ভোটে ওই ৬১টি আসনের মধ্যে রামপুরহাটে মাত্র ১টি আসন পেয়েছিল বিরোধীরা। জিতেছিলেন সিপিএম প্রার্থী। তিন শহর মিলিয়ে বাকি সব আসনে জয় পায় তৃণমূল। সেখানে লোকসভা নির্বাচনে ঠিক উল্টো ছবি। ওই তিন পুর-শহরের ৬১টি ওয়ার্ডের ৪০টিতেই পিছিয়ে গিয়েছে শাসক দল। বীরভূমের দুই লোকসভা আসনে যখন বিপুল জয় এসেছে, সেখানে জেলার তিন পুরসভায় তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে ১৮ হাজারেরও বেশি ভোটে। পুরসভাগুলির এমন হাল কেন, সেই প্রশ্ন তাই উঠছে ভোটের পর থেকেই।

সেই প্রশ্ন তুলেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ‘ব্যবস্থার’ নিদান দিয়েছেন। অভিষেক জানিয়েছেন, গত দেড়মাসে তিনি ভোটের ফলাফল ‘পর্যালোচনা’ করেছেন। সেই বিশ্লেষণের যা ফল তিনি দেখেছেন, তার অভিঘাত আগামী তিন মাসের মধ্যে সকলে দেখতে পাবেন বলেও জানিয়ে দেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে-ভাবে জানি, তাতে তিনি যা বলেন, সেটা তিনি করেন।’’

জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির আর এক সদস্যের দাবি, ‘‘গোটা রাজ্য জুড়ে ব্যবস্থা নেওয়া হলে বীরভূমের জন্যও নিশ্চয়ই তা প্রযোজ্য হবে।’’ অস্বস্তি তৈরি হয়েছে তা নিয়েই।

আড়ালে পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্তদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, ‘‘যেভাবে পুরভোটে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানো হয়েছিল, লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই গুরুত্ব দিয়ে সেটা করা হয়েছিল। তবু কাঙ্ক্ষিত ফল মেলেনি।’’

এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘পুরভোটের সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের প্রকৃতিও আলাদা। তবে গত বিধানসভা ও লোকসভা নিরিখে দেখলে আগের তুলনায় ভাল ফল হয়েছে। আসলে শহরের মানুষ ভিন্ন ভাবনায় ভোট দিয়েছেন।’’ তবে সে জন্য দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত বলেও জানিয়ে দিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

বিরোধীদের কটাক্ষ, পুরভোট আদৌ হয়নি। তা হলে এই ফলের আগাম আঁচ তৃণমূল পেতে পারত বলে দাবি বিরোধীদের। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি বাবন দাস বলেন, ‘‘পুরভোট রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকে। ভোট হতে দেওয়া হয় না। যদি ভোট হত, তাহলে যে প্রতিফল লোকসভায় দেখা যাচ্ছে সেটা পুরভোটেই দেখা যেত।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলছেন, ‘‘বোলপুর সিউড়ি ও রামপুরহাট, তিন জায়গাতেই বিরোধীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই দেওয়া হয়নি। যেটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে সেখানেও ভোট লুট হয়েছে। অভিষেক কি চাইছেন সব ভোটে লুট করেই জেতাতে হবে?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Birbhum Abhishek Banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE