জলাধারের আকাশে সন্ধের অন্ধকার ফুঁড়ে উড়ে যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ফানুস। নীচের জনতা তখন ধামসা-মাদলের সুরে মাতাল। শিশুদের সাথে খুনসুটি করে হাতে-হাতে চকলেট তুলে দিচ্ছে সান্তাক্লজ। বড়দিনটা এ ভাবেই পর্যটকদের উপহার দিতে চাইছে মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। নাম দেওয়া হয়েছে— ফান উৎসব।
এমনিতে ফি বছর জানুয়ারিতে হস্তশিল্পের সম্ভার নিয়ে জলাধারকে কেন্দ্র করে বসে মুকুটমণিপুর মেলা। মহকুমাশাসক (খাতড়া) তনয়দেব সরকার বলেন, “বড়দিনের আমেজ নিতে মুকুটমণিপুরে পর্যটকেরা যেমন আসেন, তেমনই চড়ুইভাতির দলেরও ঢল নামে। তাই এই বিশেষ দিনে পর্যটকদের কাছে মুকুটমণিপুরকে আরও আকর্ষণীয় করতে ‘ফান উৎসব’-র আয়োজন করেছি।”
তিনি জানাচ্ছেন, বড়দিনের বিকেলে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। প্রশাসনের তরফে ৭০০ ফানুস নিয়ে আসা হচ্ছে। সেই ফানুস ওড়াবেন প্রশাসনিক কর্তা, বিশেষ অতিথি ও পর্যটকেরা। মুকুটমণিপুরের কয়েকটি দোকানেও ফানুস মিলবে। চাইলে পর্যটকেরা সেখান থেকেও ফানুস কিনে ওড়াতে পারবেন।
ফানুস উৎসব ছাড়াও আদিবাসী দলের বর্ণময় নানা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হচ্ছে। সান্তাক্লজ সেজে শিশুদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থাও থাকছে। সে জন্য প্রস্তুতিও সারা। মহকুমাশাসক বলেন, “আমরা নিশ্চিত এ বারের বড়দিনে মুকুটমণিপুরে আসা মানুষজনের কাছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই উৎসবও বাড়তি আকর্ষণ হতে চলেছে।”
ইতিমধ্যেই ফেসবুক, হোয়্যাটসঅ্যাপের মাধ্যমে জেলা তো বটেই, বাইরের লোকজনের কাছেও ফান উৎসবের আমন্ত্রণ পৌঁছে গিয়েছে। বাঁকুড়ার ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকার যুবতী সুমিলা দত্ত বলেন, “অনেক দিন ধরেই ফেসবুকে ফান উৎসবের বিজ্ঞাপন দেখছি। সেখানে ঠিক কী হবে, তা জানার খুব ইচ্ছে রয়েছে। যাওয়ার চেষ্টা করছি।” ওন্দার বাসিন্দা অনিক পাত্রও ফেসবুকের মাধ্যমেই ফান উৎসবের কথা জেনেছেন। তিনি বলেন, “ফানুস ওড়ানো এমনিতেই বেশ মজার ব্যাপার। তার উপরে তা যদি মুকুটণিপুরের মতো জায়গায় হয়, তাহলে তা খুবই আকর্ষণীয় হবে।”
বস্তুত, বড়দিনের আগের দিন রবিবার থেকেই কার্যত পর্যটকদের ঢল নামে মুকুটমণিপুরে। আজ, সোমবার সেই ভিড় যে জনস্রোতের চেহারা নিতে যাচ্ছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত পুলিশ-প্রশাসন থেকে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরাও।
মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির উদ্যোগে ইতিমধ্যেই সেজে উঠেছে জলাধার চত্বর। ইতিমধ্যে এই পর্যটন কেন্দ্রকে প্লাস্টিক, ধূমপান ও মদ্যপান মুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন। পরিচ্ছন্নতার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়েছে মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। পিকনিক স্পটে প্রতি দিনই দফায় দফায় সাফাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে।
সম্প্রতি জলাধারে নৌকো বিহারের জন্য লাইফ জ্যাকেটও দেওয়া হয়েছে নৌকো চালকদের হাতে। জলাধারে দুর্ঘটনা এড়াতে দিনভর উদ্ধারকারী বোট নিয়ে উপস্থিত থাকছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। মুকুটমণিপুরের রাস্তাঘাট সুদৃশ্য পথবাতি ও বিশেষ আল্পনায় সেজে উঠেছে। যা দেখে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা প্রশাসন ও মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির তারিফ করে গিয়েছেন।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “মুকুটমণিপুরকে এক আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ। তার জন্য সব রকম ভাবে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy