পুরস্কৃত ভূমিপুত্র শ্যামসুন্দর নন্দী (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
জ্বর, মাথাব্যথা, গাঁটে ব্যথা এবং ক্লান্তি— এই উপসর্গ সাধারণত ভাইরাল ফিভারের। কিন্তু এর আড়ালেই কি ঘাপটি মেরে রয়েছে নিপা ভাইরাস? এতদিন মানব শরীরে এই মারণ ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে একমাত্র উপায় ছিল ল্যাবরেটরির পরীক্ষা। কিন্তু চটজলদি নিপা ভাইরাস চিহ্নিত করার জন্য কিট আবিষ্কার করেছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর তত্ত্বাবধানে থাকা ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (এনআইভি) সহ-অধিকর্তা শ্যামসুন্দর নন্দী। চলতি মাসে তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লিতে ইন্ডিয়ান ভাইরোলজিক্যাল সোসাইটির একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শ্যামসুন্দরের এই কিট আবিষ্কারকে ‘বেস্ট ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’ সম্মান দেওয়া হয়েছে।
পুরুলিয়া জেলার হুড়ার বড়গ্রামের বাসিন্দা শ্যামসুন্দর ২০০৯ সাল থেকে এনআইভি-র সহ-অধিকর্তা পদে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই তিনি করোনা এবং সিলিকোসিস নির্ণয়ের দু’টি কিট আবিষ্কার করেছেন। শ্যামসুন্দরের দাবি, ‘‘আইসিএমআর আমার নিপা ভাইরাসের কিটের আবিষ্কারকে ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি দিয়েছে। আমার কাজ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজে লাগবে, এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে।’’
আইআইটি দিল্লি থেকে পিএইচডি, আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিনোমিক্স-এ পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ করা পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্যামসুন্দর জানান, নিপা ভাইরাস এ দেশে প্রথম ধরা পড়ে ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে। এই ভাইরাসের উৎস মূলত বাদুড়। বাদুড়ের আধখাওয়া ফল ভাল ফলের সঙ্গে মিশে থাকলে সেখান থেকেও ছড়াতে পারে এই ভাইরাস। আক্রান্তের ব্যবহৃত বিছানা, পোশাক বা অন্যান্য জিনিসপত্র থেকেও সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে নিপা ভাইরাস। এদেশে কেরলেই নিপা ভাইরাসে সব থেকে বেশি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে।
শ্যামসুন্দরের কথায়, ‘‘সাধারণ ভাইরাল ফিভারের মতো উপসর্গ হলেও নিপা ভাইরাসে মৃত্যুহার ৫০-৬০ শতাংশ। এখনও এই ভাইরাসের কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। আক্রান্তের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই তাঁকে সুস্থ করতে পারে। সে জন্য দ্রুত রোগ ধরা পড়া অত্যন্ত জরুরি। এতদিন বায়ো-সেফটি লেভেল-থ্রি স্তরের কোনও ল্যাবরেটরিতেই নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হত। এই স্তরের ল্যাবরেটরি না হলে যিনি পরীক্ষা করবেন তাঁরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ বার এই কিটের মাধ্যমে সাধারণ পরীক্ষাগারেও নিপার মতো মারণ ভাইরাসের পরীক্ষা করা যাবে। আক্রান্তের মূত্রের নমুনা বা সেরিব্রাল স্পাইনাল ফ্লুইড এই কিটে ফেললেই জানা যাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না।’’
ইন্ডিয়ান ভাইরোলজিক্যাল সোসাইটির সদস্য চিরঞ্জীব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্যামসুন্দর নন্দীর এই গবেষণার সুফল দেশের মানুষ পাবেন, এটা অত্যন্ত আনন্দের কথা। কারণ এই রোগ মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়লে তখন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার সময় পাওয়া যায় না। তখন রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই কিট খুবই কাজে আসবে। তাই তাঁর এই কিটকে সেরা আবিষ্কারের সম্মান দিয়েছে ইন্ডিয়ান ভাইরোলজিক্যাল সোসাইটি।’’
শ্যামসুন্দরের বাকি আবিষ্কারের অবদানও কম নয়। ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অব অকুপেশনাল হেল্থ সূত্রের খবর, দেশে প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ সিলিকোসিসে আক্রান্ত। প্রথম সিলিকোসিস নির্ণয়ের কিট আবিষ্কারের নেপথ্যেও রয়েছেন শ্যামসুন্দর। করোনার পরীক্ষার কিট ‘আরটি-ল্যাম্প’-ও আবিষ্কার করেন তিনি। পোলিয়ো নির্মূলের লক্ষ্যে জিনোম এডিটিং-এর অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তাঁর ‘সেল লাইন’ বিশ্বকে পোলিয়ো মুক্ত করতে সহায়তা করবে বলে দাবি এই বিজ্ঞানীর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা হু-র আমন্ত্রণে জেনিভাতে গিয়ে ১৪৬টি দেশের বিজ্ঞানীদের সামনে তাঁর এই গবেষণাপত্র তুলে ধরেছেন শ্যামসুন্দর। এই বাঙালি বিজ্ঞানীর কাজকে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে পুরস্কৃত করেছে আইসিএমআর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy