একশো দিনের কাজে চলছে পুকুর খনন.আড়শার হেটগুগুই গ্রামে। —ফাইল চিত্র।
নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যের মধ্যে দরিদ্রতম জেলা পুরুলিয়া। অথচ একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকে ওই জেলারই ৪৭ শতাংশ শ্রমিকের নাম জবকার্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে! সঠিক পদ্ধতি মেনে এত নাম বাদ দেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
বিভিন্ন মহলে।
প্রকল্পের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া জেলায় ৫ লক্ষ ৪১ হাজার ৩৬২টি পরিবারের ১১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৬৬৪ জনের নাম শ্রমিক হিসেবে নথিভুক্ত ছিল। সম্প্রতি ওই ওয়েবসাইটে দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৫ লক্ষ ৫১ হাজার ৯৫৯ জনের নাম জবকার্ডের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি’ এত নাম কী করে বাদ পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
সংগঠনের রাজ্য কমিটির মুখপাত্র অনুরাধা তলোয়ার বলেন, ‘‘দরিদ্রতম জেলা পুরুলিয়ায় সাড়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি নাম বাদ পড়ার পরে বিভিন্ন গ্রামে খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, জীবিতকেও মৃত দেখিয়ে বা কাউকে কাজ করতে অনিচ্ছুক দেখিয়ে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা কেন হবে?’’
সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘জবকার্ডের সঙ্গে আধারকার্ডের সংযোগ করানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। তারপরেই দেখা যাচ্ছে, এই জেলায় সাড়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি নথিভুক্ত শ্রমিকের নাম বাদ পড়েছে। দরিদ্রতম জেলার পক্ষে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’
তাঁর দাবি, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুরুলিয়া জেলায় বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ৩৩.৮৬ লক্ষ। তার মধ্য়ে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ ১৪.৫৫ লক্ষ মানুষ শ্রমজীবী। তার মধ্যে ১১.৮৩ লক্ষ মানুষ ১০০ দিন কাজের প্রকল্পের উপরে নির্ভরশীল ছিলেন। একে ২২ মাস শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ায় বন্ধ। তারই মধ্যে অর্ধেকের কাছাকাছি শ্রমিকের নাম বাদ দেওয়া মানা
যায় না।
প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন প্রকল্পে কাজ না করলে, আধারকার্ড ও জবকার্ডের সংযোগ না করে থাকলে, মারা গেলে বা অন্যত্র চলে যাওয়ার মত নানা কারণে জবকার্ড বাতিল করা হয়। ২০০৬ সাল থেকে জবকার্ড তৈরির কাজ শুরু হয়। আগে কখনও এত নাম বাদ হয়নি বলে সমিতির দাবি। তবে বাদ দেওয়ার আগে ব্লক স্তরে শুনানি করা দরকার। এই পদ্ধতি মেনে কত জায়গায় নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সমিতি।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের একটি নির্দেশের প্রেক্ষিতে শ্রমিকদের নামের তালিকা সংশোধনের কাজ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে। কিন্তু এ নিয়ে কোনও অভিযোগ প্রশাসনের কাছে আসেনি।’’
জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘এত নাম কী ভাবে বাদ পড়ে? এত কার্ড ভুয়ো বা এত মানুষ মারা গিয়েছেন না কি? জবকার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্তিকরণের অজুহাতে যদি সিংহভাগ শ্রমিকের নাম বাদ পড়ে, তাহলে এই নির্দেশ শ্রমিকের কল্যাণে কি না সে প্রশ্ন উঠছেই।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘গরিব মানুষের জন্য এই প্রকল্প কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে পারলে বাঁচে। শুধু বলছে ভুয়ো কার্ড রয়েছে। ভুয়ো কার্ড যদি থাকে তা তৃণমূল ক্ষমতায় আসার অনেক আগে থেকেই রয়েছে। কেন্দ্র তদন্ত করুক। কিন্তু নিয়মের ফাঁসে প্রকৃত শ্রমিকের নাম যাতে বাদ না পড়ে প্রশাসনকেও তা দেখতে হবে।’’
খেতমজুর সমিতির মুখপাত্র অনুরাধা তলোয়ার বলেন, ‘‘প্রায় দু’বছর এই প্রকল্পের কাজই বন্ধ। শ্রমিকেরা জানবেন কী করে যে তাঁদের অজান্তে নাম জবকার্ডের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে?’’ তবে প্রশাসনের আশ্বাস, শ্রমিকেরা পুনরায় নাম তোলার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy