পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে মেরাল গ্রামের প্রতিনিধিদের হাতে। নিজস্ব চিত্র
গত দু’বছরে পুলিশের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি এই সাতটি গ্রামের বাসিন্দাদের। গ্রামে আসার প্রয়োজন পড়েনি পুলিশের-ও। রাজনৈতিক সংঘর্ষ হোক বা চুরি ছিনতাই—অপরাধ মানচিত্র থেকে বহু দূরে ইন্দাসের এই গ্রামগুলি। সমস্যা হলে নিজেরাই মিটিয়ে নেন। থানা-পুলিশ করার প্রয়োজন হয় না। অন্য গ্রামে অশান্তি হলেও তার আঁচ নিজেদের এলাকায় পড়তে দেন না গ্রামবাসী। ‘শান্তির বার্তাবাহক’ ওই সাতটি গ্রামকে পুরস্কৃত করল ইন্দাস থানা। ইন্দাস থানার পুলিশের তরফে এমন উদ্যোগ এই প্রথম।
শনিবার ইন্দাস থানার তরফে শারদ-সম্মান অনুষ্ঠান হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানেই শংসাপত্র ও স্মারক দেওয়া হয় গ্রামগুলির প্রতিনিধিদের হাতে। রুলিশ জানিয়েছে, গ্রামগুলিতে সব রাজনৈতিক দলের কর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিরোধ হয় না, এমনটা নয়। তবে রাজনৈতিক মত পার্থক্যের প্রভাব পড়ে না রোজকার জীবনে। ‘‘ছোটখাট সমস্যা কিছু হলে,পুলিশের কাছে না গিয়ে নিজেরাই মিটিয়ে নেন গ্রামবাসী,’’ বললেন এক পুলিশ আধিকারিক।
ইন্দাস থানার ওসি বিদ্যুৎ পাল জানান, ওই গ্রামগুলি হল ইন্দাস ২ পঞ্চায়েতের মেরাল, আকুই ২ পঞ্চায়েতের কাশপুকুর, আমরুল পঞ্চায়েতের মদনবাটি, কড়িশুন্ডা পঞ্চায়েতের সেখডাঙা, ইন্দাস ১ পঞ্চায়েতের প্রতাপমাঠ ও সাঁওতারি এবং রোল পঞ্চায়েতের ভাসনা।
পুলিশ জানায়, গত দু’বছরে ওই গ্রামগুলি থেকে একটি অভিযোগও থানায় আসেনি। এক বারও পুলিশকে যেতে হয়নি গ্রামগুলিতে। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত ইন্দাস থানায় মোট ২৪১টি এফআইআর দায়ের হয়েছে।
শারদ সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশপ সরকার, বিডিও (ইন্দাস) মানসী ভদ্র চক্রবর্তী এবং এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সি। মানসীদেবী বলেন, ‘‘এই সাতটি গ্রাম অন্য গ্রামগুলিকে উৎসাহ দেবে। সেই লক্ষ্যেই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এই সাতটি গ্রামে অল্পবিস্তর সমস্যা যে হয়না, তা নয়। তবে তারা থানাপুলিশ করে না। নিজেরাই মিটিয়ে নিতে পারে।’’
লোকসভা ভোটের পরে ইন্দাসে একাধিক রাজনৈতিক আশান্তির ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি ঘটেছে রোল গ্রামে। ‘‘সেই নিরিখে ওই সাতটি গ্রাম শান্তির মরূদ্যান,’’ বললেন ইন্দাস থানার এক আধিকারিক। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এই গ্রামগুলিকে সকলের সামনে তুলে ধরতে চাই।’’
সেখডাঙা গ্রামের অশোক কোলে বলেন, ‘‘কোনও ব্যক্তির দল অথবা মত যাই হোক না কেন, বিবাদ আমাদের গ্রামে নেই।’’ মেরাল গ্রামের মহিমারঞ্জন হাটি ও নরেন্দ্রনাথ লাহার কথায়, ‘‘কখনও ঝুট-ঝামেলা বা কোনওরকম হানাহানি আমাদের গ্রামে হয়নি। কিছু সমস্যা হলে নিজেরাই মিটিয়ে নিই।’’ মদনবাটি গ্রামের অমরকুমার পাঁজা বলেন, ‘‘গ্রামে বড় কিছু ঘটতে দেওয়া হয় না। ছোটখাট সমস্যা গ্রামের ষোলোআনা মিটিয়ে দেয়।’’ মদনবাটি, কেনেটি আর পাঁজকোনা—তিনটি গ্রাম নিয়ে গঠিত ষোলোআনা। তার কথা সকলে মেনে চলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy