Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Satyaghat Mela

আজ শুরু সত্যঘাট মেলা, স্মৃতি নিয়ে ‘অনাদরে’ সংগ্রহশালা

সত্যকিঙ্কর দত্তের নামে বছর দু’য়েক আগে স্মারক সংগ্রশালার উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। 

আড়ালে: ঝালদা শহরের প্রান্তে মায়া সরোবর রোডে। নিজস্ব চিত্র

আড়ালে: ঝালদা শহরের প্রান্তে মায়া সরোবর রোডে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০০:২২
Share: Save:

আজ, বৃহস্পতিবার সত্যঘাট মেলা শুরু হচ্ছে পুরুলিয়ার ঝালদায়। যাঁর স্মৃতিতে, সেই সত্যকিঙ্কর দত্তের নামে বছর দু’য়েক আগে স্মারক সংগ্রশালার উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

কেমন রয়েছে সেটি? বুধবার ঝালদা শহরের একপ্রান্তে মায়া সরোবর রোডে গিয়ে দেখা গেল, সংগ্রহশালা ঘিরে মাথা তুলেছে আগাছা। চত্বরের ভিতরে যত্রতত্র পড়ে রয়েছে এঁটো পাতা, প্লাস্টিকের গ্লাস, মদের বোতল। কোল্যাপ্সিবল গেটের ভিতরে, সংগ্রহশালার মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে কাচের টুকরো। সত্যকিঙ্করের পরিবারের বর্তমান সদস্যদের মধ্যে শ্যামলী দত্ত বলেন, ‘‘আমি কয়েক দিন আগে গিয়ে দেখেছি, যত্রতত্র আবর্জনা, এমনকি, মদের বোতলও পড়ে রয়েছে। খুবই খারাপ লেগেছে। এক দিন পরে এখানে মেলা বসবে। গতবারও পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম, এখানে যেন জুয়াখেলা না হয়। এ বারও করব।’’

জেলার ইতিহাস গবেষক দিলীপকুমার গোস্বামী জানান, ১৯২৯ সালের এপ্রিলে ঝালদায় মানভূম কংগ্রেসের একটি সম্মেলন হয়। তার পরেই ওই এলাকায় কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হতে শুরু করে। সত্যকিঙ্কর ছিলেন ওই সম্মেলনের স্বেচ্ছাসেবক। তিনি একটি আখড়ায় ছেলেদের লাঠিখেলা শেখাতেন। ওই বছর ১০ ডিসেম্বর গুপ্তঘাতকের বিষ মাখানো কুঠারের আঘাতে তিনি আহত হন। তিন দিন পরে পুরুলিয়া হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘মানভূমের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহিদ হিসাবে ধরা হয় সত্যকিঙ্করকে।’’

বিধায়কের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল সত্যকিঙ্কর স্মারক সংগ্রহশালা। তিনি বলেন, ‘‘সংগ্রহশালা অনাদরে পড়ে রয়েছে, এটা সত্যি। আসলে দেখভালের জন্য লোক প্রয়োজন। এখানে তা নেই। আমি বছরখানেক আগে প্রশাসনকে চিঠি লিখেছিলাম। তার পরেও এই অবস্থায় পড়ে রয়েছে, সেটা সত্যিই দুর্ভাগ্যের। ফের লিখব।’’

অথচ, সত্যকিঙ্করের স্মৃতি অনেক মূল্য দিয়ে আঁকড়ে রেখেছিল ঝালদা। তাঁর মৃত্যুর এক মাস দু’দিন পরে, মাঘের প্রথম দিনে সত্যঘাট মেলার আয়োজন করেছিল ঝালদা যুব সঙ্ঘ। সত্যকিঙ্করের চিতার উপরে স্মৃতিমন্দির স্থাপিত হয়। গড়ে ওঠে স্মৃতিরক্ষা কমিটি। ঠিক হয়, প্রতি সোমবার সেখানে হাট বসবে।

রাজাদের পরিচালিত মঙ্গলবারের সাপ্তাহিক হাটের বদলে সোমবার পৃথক হাট বসানোর ঘটনা শোরগোল ফেলে। মেলার দায়িত্বে থাকা আট জন কংগ্রেসকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন রাজা। তাঁদের মধ্যে পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করে।

পরের বছর গুলি চলে সত্যমেলায়। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বাজনা বাজাতে বাজাতে মেলায় শয়ে শয়ে মানুষ হাজির হতে থাকেন। পুলিশ গুলি চালায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সহদেব মাহাতো, মোহন মাহাতো, গোকুল মাহাতো, শীতল মাহাতো ও গণেশ মাহাতো। আহত হন আরও অনেকে।

নেপালবাবু বলেন, ‘‘সত্যকিঙ্করের মৃত্যু সে সময় গোটা বিহার ও ওড়িশাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ঝালদার ও জেলার নতুন প্রজন্ম যাতে তাঁর সম্পর্কে জানতে পারেন, সে কথা ভেবে সংগ্রহশালা গড়তে উদ্যোগী হয়েছিলাম।’’ মহকুমাশাসক (ঝালদা) সুশান্তকুমার ভক্ত বলেন, ‘‘সংগ্রহশালাটির যে এই অবস্থা, তা জানা ছিল না। অবশ্যই খোঁজ নেব।’’

তবে ঝালদার শিক্ষক তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বিপ্লবীর স্মৃতি বিজড়িত স্থানের পবিত্রতা রক্ষার দায় তো আমাদের সবার।’’ শহরের প্রবীণ ভক্তিপদ মোদকও বলেন, ‘‘আমরা লজ্জিত ও মর্মাহত। নিজেদের ইতিহাসকেই কলঙ্কিত করছি। শুধু প্রশাসন কেন, ঝালদাবাসীরও এই ব্যাপারে দায় রয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Satyaghat Mela Jhalda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy