সব্যসাচী গোস্বামী। —ফাইল চিত্র।
বারবার গ্রেফতার হয়েও মুক্তি পেয়েছে। আর তারপর ফের মাওবাদী কার্যকলাপেই ফিরে গিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সব্যসাচী গোস্বামী ওরফে কিশোর। এ বার রাজ্যে মাওবাদীদের সংগঠনকে ফের চাঙ্গা করতে লোক নিয়োগ করতে এসেই ধরা পড়লেন তিনি।
শুক্রবার পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অতীতে এই নেতা ২০০৫, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে গ্রেফতার হন। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পরেই নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন সব্যসাচী।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালের অক্টোবরে বান্দোয়ানের কাঁটাগোড়া জঙ্গলে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে বান্দোয়ানের তৎকালীন ওসি নীলমাধব দাসের মৃত্যুর পরে ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ২০০৫ সালে তাঁকে গ্রেফতার করে সিআইডি। ২০১৩ সালে কলকাতার যাদবপুর থেকে গ্রেফতার হন তিনি। ২০১৮ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল এসটিএফ।
পুরুলিয়ায় মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াড একসময়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরেও এখানে তৃণমূলের একাধিক নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠকে মাওবাদীরা খুন করেছে। পরে প্রথম সারির একাধিক মাওবাদী নেতানেত্রী আত্মসমর্পণ করেন ও গ্রেফতার হন। শেষে ২০১২ সালের জুলাইয়ে অযোধ্যা স্কোয়াডের প্রতিষ্ঠাতা বিক্রম ওরফে অর্ণব দাম জেলা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে মাওবাদী নাশকতার অবসান ঘটে। এলাকায় শান্তি ফেরে।
সূত্রের দাবি, এই রাজ্যের মুখ থুবড়ে পড়া সংগঠনকে চাঙ্গা করে তুলতে কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে সব্যসাচীকে বেঙ্গল ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল সংগঠনকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে এনে রাজ্যে ফের প্রাসঙ্গিক করে তোলা। সেই অযোধ্যাপাহাড় লাগোয়া মাঠা বনাঞ্চলের চাউনিয়ার জঙ্গলেই বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে তল্লাশি চালিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ওই জঙ্গলে তিনি একটি বৈঠকে যোগ দিতে আসছেন বলে পুলিশের কাছে নির্দিষ্ট সূত্রে খবর ছিল।’’
গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে এ রাজ্যের একটি করিডর গড়ার পরিকল্পনা ছিল মাওবাদীদের। কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে যে কাজের দায়িত্বভার অর্পিত হয়েছিল সব্যসাচীর উপরেই। ২০২২ সালে অসমের গুয়াহাটিতে উত্তর-পূর্ব ভারতে মাওবাদী কার্যকলাপ সংক্রান্ত একটি মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তারপরেই আইএনএ সব্যসাচীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।
এ দিকে মাওবাদীদের বেঙ্গল কমিটির দায়িত্বভার গ্রহণের পরে রাজ্য পুলিশ সহ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল। সূত্রের দাবি, ২০২১ সালের পরে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সন্ধানে হানা দিলেও শেষ মূহূর্তে জালে তুলতে পারেনি। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ বাঁকুড়ার বারিকুল থানার গোসদা গ্রামে একটি অনলাইন পরিষেবা কেন্দ্রে সব্যসাচী বৈঠক করছেন বলে খবর পেলেও তারা যাওয়ার আগেই তিনি গা ঢাকা দেন। ২০২৩ সালের মার্চে ঝাড়গ্রামের ধরমপুরে তাঁর উপস্থিতির খবর পেয়েও তাঁকে ধরতে ব্যর্থ হয় পুলিশ
পুলিশের দাবি, জঙ্গলমহলে সম্প্রতি কিছু নিয়োগ করেছে মাওবাদীরা। আরও নিয়োগের চেষ্টা চলছিল। নিয়োগ করা নতুন লোকজন কী ভাবে সংগঠনের হয়ে কাজ করবে, সে পরিকল্পনা সংক্রান্ত বৈঠকেরই ব্যবস্থা ছিল চাউনিয়ার জঙ্গলে। নাশকতার পরিকল্পনাও ছিল এই বৈঠকের অঙ্গ। পুলিশের অভিযানে ভেস্তে গেল সেই বৈঠক। জালে পড়লেন সব্যসাচী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy