সভা: জেলা পরিষদের সভাকক্ষে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
বৈধ ভাবে বালিঘাটের ইজারা পেলেও মানতে হবে নিয়ম। বালিঘাটের ইজারা পেতে নিলামে মোটা অঙ্কের হাঁক দিয়েও, যাঁরা এখনও কোনও টাকা জমা দেননি তাঁদেরও সতর্ক করল প্রশাসন। মঙ্গলবার সিউড়িতে বালি কারবারি দের সঙ্গে বৈঠকে থেকে এমনই কিছু স্পষ্ট বার্তা দিলেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা।
জেলা পরিষদের সভাকক্ষে আয়োজিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী, জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নীলকমল বিশ্বাস, মহকুমাশাসক কৌশিক সিংহ এবং ই-অকশানে যোগ দেওয়া ১৪০জন বালি কারবারি (এঁদের অনেকেই নদী থেকে বালি তোলায় দীর্ঘ মেয়াদি ছাড়পত্র পেয়েছেন)।
নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের ‘ডিরেক্টরেট অফ মাইন অ্যান্ড মিনারেলস’-এর ‘কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ডিপার্টমেন্টের’ ই-অকশান হওয়ার পরই লিজপ্রাপ্তরা বালি তুলবেন। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ থেকে বালিঘাটের ই-অকশান শুরু হয়। অভিযোগ ছিল, এত দিন পর্যন্ত সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ইচ্ছে মতো বালি তুলেছেন বালি মাফিয়ারা। তেমনটা বন্ধ করা গেলে এক দিকে রাজস্ব আদায় যেমন বাড়াবে, তেমনই বেআইনি বালি কারবারও বন্ধ হবে। ই-অকশন শুরু হওয়ার পর রাজস্বের পরিমাণ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু মোট বালিঘাটের মাত্র একটা অংশের নিলাম হওয়ায় জটিলতা বেড়েছে বই কমেনি।
‘বেআইনি বালির কারবার চলছে গোটা জেলায়’— এমন অসংখ্য অভিযোগ জেলা প্রশাসনের নজরে এসেছে। বালিঘাটের দখল নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ, বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। এমনকী যাঁরা বৈধ ভাবে লিজ পেয়েছেন, সেই সব ঠিকাদারের বিরুদ্ধেও নিজের এলাকার বাইরে অন্য ব্লকে বা এলাকায় বালি তোলার এবং যন্ত্র ব্যবহার করে নদীগর্ভে ৩০-৪০ ফুট গভীর গর্ত করে বালি তোলারও আভিযোগ এসেছে। তারপরই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। বেআইনি বালিঘাট থেকে বালি তোলা বন্ধ করতে তৎপর হয় প্রশাসন। নিয়ম বহির্ভূত বালি তোলা নিয়ে সতর্ক করা হয় বালি কারবারিদেরও। এরপরই কী কী করতে হবে বৈধ বালি কারবারিদের, এ দিনের বৈঠকে তা ফের স্পষ্ট করেন প্রশাসনিক কর্তারা।
প্রশাসন জানিয়েছে, ই-অকশানে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৪০ জন প্রথম কিস্তির টাকা দিয়েছেন। কিন্তু, দীর্ঘমেয়াদি ইজারা নেওয়ার সব ধাপ অনেকেই পূরণ করেননি। মাত্র ৩২ জন সেটা করেছেন। কী সমস্যা, মূলত সেটা জানতেই বৈঠক ডাকা। জেলাশাসক বলেন, ‘‘নতুন সরকারি নির্দেশ হল, মোট দরপত্রের এক তৃতীয়াংশ দিলেই তিনি দীর্ঘমেয়াদি ইজারা নিতে পারেন। বাকি টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিতে হবে। আগে পুরো টাকা দিতে হত।’’ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রত্যেককে বালিঘাটের সীমানা নির্ধারিত করতে হবে। ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরাও লাগাতে হবে। প্রতি সপ্তাহ অন্তর সেই সিসি ক্যামেরার ছবি পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। যাতে প্রশাসন নজরদারি চালাতে পারে। নদী থেকে পাম্প করে বালি তোলা যে নিষিদ্ধ— সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলাশাসক জানান, দু’মাস আগে একটি ই-অকশান করা করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে কিছু কিছু বালিঘাটের জন্য কেউ ৮০ কোটি, ৪০ কোটি টাকা দর হাঁক দিয়ে ঘাটটি নিয়েছেন। অথচ এক টাকাও সরকারকে জমা দেননি। পি মোহন গাঁধীর কথায়, ‘‘এটা আসলে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করা। এমন সাত জনকে চিহ্নিত করে নোটিস পাঠানো হয়েছে। শুক্রবারের মধ্যে সদুত্তর না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy