Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
DWarika Industrial Estate

শিল্পের পুনরুজ্জীবনে ধাক্কার আশঙ্কা

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ একটি কারখানা ২০২১ সালে কিনে সেখানে ফেরোঅ্যালয় কারখানা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে একটি শিল্প সংস্থা।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিজিৎ অধিকারী
বাঁকুড়া,  বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪ ০৭:১২
Share: Save:

নতুন করে বড় বিনিয়োগ এসেছে। বড় কোম্পানি স্টিল কারখানা, ফেরোঅ্যালয় কারখানা গড়তে এগিয়ে এসেছে। এ সব চালু হলে ধুঁকতে থাকা বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলে সুদিন ফিরবে, আশায় এলাকার বেকার যুবক-যুবতী থেকে শ্রমিকেরা। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীর কারখানার ডাম্পার আটকে টাকা চাওয়ার অভিযোগকে ঘিরে বিভিন্ন মহলে হতাশা তৈরি হয়েছে। এতে শিল্পের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা না ধাক্কা খায়, আশঙ্কা তা নিয়েও। যদিও জেলাশাসক সিয়াদ এন আশ্বাস দিয়েছেন, “দ্বারিকা-সহ জেলার প্রতিটি শিল্পাঞ্চলের উপরেই পুলিশ ও প্রশাসনের কড়া নজর রয়েছে। যে কোনও ঘটনায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করছে। কোনও রকম অনৈতিক কাজকর্ম বরদাস্ত করা হবে না।”

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ একটি কারখানা ২০২১ সালে কিনে সেখানে ফেরোঅ্যালয় কারখানা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে একটি শিল্প সংস্থা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেই কারখানার বর্জ্য বোঝাই দু’টি ডাম্পার আটকে তোলাবাজির অভিযোগে নাম জড়িয়েছে এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত কয়েকজনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কারখানা কর্তৃপক্ষ সমস্যা মেটাতে গেলে তাঁদেরও রেয়াত করেনি দুষ্কৃতীরা। কারখানা কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ না খুললেও আড়ালে এক কর্মকর্তা বলেন, “এ ভাবে তোলাবাজি চললে শিল্প চালানো সম্ভব নয়। মালিকপক্ষও হতাশ।’’

দ্বারিকার একটি কারখানার প্রাক্তন শ্রমিক বর্তমানে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শ্রমিক বলেন, “আমাদের বয়স বেড়ে গিয়েছে। তবে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হবে যদি নতুন করে কলকারখানা চালু হয়। কিন্তু এলাকার একশ্রেণির লোকজন এখন থেকেই যে ভাবে মাতব্বরি শুরু করেছে, তাতে আদৌ ভাল কিছু হবে কি না সন্দেহ রয়েছে।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, কিছু ক্লাব সমাজসেবী সংগঠনের নাম করে কলকারখানার গাড়ি আটকে টাকা আদায় শুরু করেছে। শ্রমিক নিয়োগ নিয়েও নানা জটিলতা পাকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

দ্বারিকার শিল্প পরিবেশ নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা মুখপাত্র দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “তৃণমূলের একাধিক শিবিরের নেতারা এখন থেকেই দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলের দখল নেওয়ার চেষ্টায় নেমে পড়েছেন। কে, কোথায়, কত শ্রমিক নিয়োগ করবেন, কে, কোন এলাকা থেকে তোলা তুলবেন, তা নিয়ে টানাপড়েন চলছে দলের অন্দরে। এমন আবহে শিল্পের পরিবেশ গড়ে তোলাটাই মুশকিল।” সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন ঘোষ দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলে তোলাবাজি ঠেকাতে প্রশাসনের যথেষ্ট নজরদারির অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “বিরোধীরা রাজনৈতিক স্বার্থে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ গড়তে দ্বারিকায় শিল্পের অগ্রগতি করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।”

জেলা পুলিশ ও প্রশাসন অবশ্য দ্বারিকায় শিল্পের পরিবেশে কোনও ব্যাঘাত ঘটতে দেওয়া হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, “শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করে নিরাপত্তাজনিত যে কোনও সমস্যা মেটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক বছর আগেই দ্বারিকার একটি কারখানা থেকে কিছু জিনিসপত্র লরিতে করে চুরি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আমরা খবর পেয়ে রাস্তাতেই গাড়িটি আটকেছি। ডাম্পার আটকানোর খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে।’’

পুলিশ সুপার জানান, দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলে নিয়মিত পুলিশ টহল, রাতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথাও কোনও রকম গোলমাল হলে দ্রুত কড়া ব্যবস্থা নিতে তৎপর রয়েছে পুলিশ।তিনি বলেন, “শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ একেবারে স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনও রকম সমস্যা নেই।”

অন্য বিষয়গুলি:

Dwarika
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy