বাঁকুড়া আদালতে ধৃত হায়দর মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র
তিনি তৃণমূল কর্মী। আর তাই তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। সোমবার বাঁকুড়া আদালতে সাংবাদিকদের কাছে এমনই দাবি করলেন সোনামুখীর তরুণীকে ধর্ষণ করা ও দেহব্যবসায় নামোর অভিযোগে ধৃত তাঁর পিসেমশাই হায়দর মণ্ডল। রবিবার সন্ধ্যায় বড়জোড়ার তাজপুরের ওই বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন আদালত চত্বরে হায়দর দাবি করেন, “আমি নির্দোষ। তৃণমূল করি বলেই আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হল।”
বস্তুত, হায়দারের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ ওঠার পরে তৃণমূলের পখন্যা অঞ্চল সভাপতি জীতেন ভাণ্ডারী হায়দরকে দলের সক্রিয় কর্মী বলে উল্লেখ করে তাঁকে ‘ভাল মানুষ’ বলেই দাবি করেছিলেন। যদিও এ দিন বিষয়টি নিয়ে উল্টো কথাই শোনা গেল বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মুখে। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে হায়দারকে তিনি চেনেন না বলেই দাবি করেন। বিধায়ক বলেন, “আমি ব্যক্তিগত ভাবে হায়দরকে চিনি না। সে তৃণমূল করে কি না, তাও আমার জানা নেই। পুলিশের তদন্তে আমরা কোনও ভাবেই নাক গলাতে যাব না। নিরপেক্ষ ভাবেই তদন্ত হবে।”
শনিবার বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালার কাছে সোনামুখীর ওই ধর্ষিতা তরুণী তাঁর পিসেমশাই হায়দর-সহ আরও দুই যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। ওই তরুণীর অভিযোগ, কাজ দেওয়ার নাম করে বড়জোড়ার একটি ঘরে আটকে রেখে হায়দর একাধিকবার তাঁকে ধর্ষণ করে। আরও অনেক জনের সঙ্গে তাঁকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্যও করে সে। এই সব ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গেলে ওই যুবতীকে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া ও মারধর করা হতো বলেও অভিযোগ। সেখান থেকে হায়দরের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে তিনি এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। সেখানে বড়জোড়ার এক যুবকের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই যুবকও তাঁকে একাধিকবার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। এরপরে একদিন বিয়ের আশ্বাস দিয়ে যুবকটি এক বন্ধুর মারফত দুর্গাপুরের একটি হোটেলে ওই তরুণীকে ডেকে পাঠায়। সেখানে প্রেমিকের বন্ধু তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। এরপর এক গাড়িচালকের সাহায্যে পিসেমশাই ও প্রেমিকের হাত থেকে পালিয়ে অন্য জেলায় লুকিয়ে ছিলেন ওই তরুণী। বাঁকুড়ার এক আইনজীবীর মারফত শেষ পর্যন্ত ওই তরুণী মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হন শনিবার। পুলিশও অভিযোগ গ্রহণ করে।
পুলিশ হায়দরকে গ্রেফতার করলেও বাকি দুই অভিযুক্তের কোনও হদিস পায়নি বলে জানাচ্ছে। তবে বড়জোড়ার যে যুবক ওই তরুণীকে প্রেমের প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ, সেই দীপ ঘোষালের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে তার বাবার দাবি, ‘‘আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই মেয়েটির সঙ্গে তার শুধু বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। দুর্গাপুরের ওর বন্ধু মেয়েটিকে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করেছে। আমার ছেলে কোনও ভাবেই যুক্ত নয়।’’ তিনি জানান, ছেলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছে।
এ দিন আদালতে গোপন জবানবন্দি দেন ওই তরুণী। এ দিকে হায়দরকে তিনদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “হায়দরকে আরও জেরা করার দরকার রয়েছে।” তরুণীর পাশে দাঁড়ানো আইনজীবী সোমনাথবাবু এ দিন বলেন, “ওই তরুণীর সঙ্গে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। দোষী ব্যক্তিদের কড়া শাস্তি যাতে হয় সে জন্য আমি যা করার করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy