সাসপেন্ড করা হল রামপুরহাট থানার আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিককে। নিজস্ব চিত্র
বীরভূমের বগটুই গ্রামের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাসপেন্ড করা হল রামপুরহাট থানার আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিককে। কর্তব্যে গাফিলতির জন্য ওই আইসি-কে সাপপেন্ড করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে রাজ্য পুলিশের তরফে। বৃহস্পতিবার বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীকে চিঠি দিয়ে ত্রিদীপকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দ্রুত কার্যকর করতে বলেছেন রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি (আইনশৃঙ্খলা)।
রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের জেরে আট জনের মৃত্যুর ঘটনার পরেই সোমবার আইসি ত্রিদীপ এবং এসডিপিও সায়ন আহমেদকে ‘ক্লোজ’ করেছিল রাজ্য পুলিশ। রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয় এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এ বার কর্তব্যে গাফিলতির জন্য ত্রিদীপকে সাসপেন্ড করা হল। তবে সায়নকে নিয়ে এমন কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি বলেই জানা গিয়েছে রাজ্য পুলিশের তরফে।
বগটুই-কাণ্ডে শুরু থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, যখন একের পর বাড়িতে আগুন জ্বলছিল, তখন পুলিশ কোথায় ছিল? রাতে কেন পুলিশ সেখানে যায়নি? তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখের মৃত্যুর পর বাগটুই যে ভাবে অশান্ত হয়ে উঠেছিল, তাতে যে কোনও মুহূর্তে বড় কিছু ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কেন আগাম পদক্ষেপ করল না পুলিশ, উঠছে এমন প্রশ্নও।
জেলা পুলিশের এক সূত্র জানাচ্ছে, সোমবার রাতে ভাদুর খুনে অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ এতটাই ব্যস্ত ছিল যে গোটা গ্রাম ‘অরক্ষিত’ থেকে গিয়েছে। রামপুরহাট থানার কর্তব্যরত অফিসারেরা সঙ্কটকালে সঠিক পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের দাবি, এলাকায় অশান্তি ছড়াতে পারে, এমন সম্ভাবনার কথা পুলিশ বুঝলে হয়তো পশ্চিমপাড়ায় আট জনের আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনা রুখে দেওয়া যেত।
ঘটনাস্থল থেকে রামপুরহাট থানার এসডিপিও-র আবাসনের দূরত্ব সামান্যই। এর পরেও কেন এত বড় ঘটনা ঠেকাতে ‘ব্যর্থ’ হল পুলিশ, প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। শুধু তাই নয়, ঘটনাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে নিহত উপপ্রধান ভাদু শেখের বাড়িতেও ওই রাতে কেন পুলিশ যায়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বৃহস্পতিবার বাগটুই গিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পুলিশ মন্ত্রীও। তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনা কানে আসার পর আমাদের সরকার দ্রুত পদক্ষেপ করেছে। অন্তত ৫০ বার আমার কাছে ফোন এসেছিল। দ্রুত খবরাখবর নিয়েছি এবং পদক্ষেপ করতে বলেছি। রামপুরহাট থানার আইসি ও এসডিপিও-কেও ক্লোজ করেছি আমরা। ঘটনার তদন্ত নিরপেক্ষই হবে। দোষীরা রেহাই পাবে না।’’
নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময়েই অভিযুক্ত আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন মমতা। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও কঠোর মন্তব্য করেছেন। মমতা বলেন, ‘‘ডিআইবি, আইসি নিজের দায়িত্ব পালন করেননি। ঘটনার পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে। পুলিশ সঠিক সময় সক্রিয় হলে ওই ঘটনা এড়ানো যেত। যে সব পুলিশ অফিসারেরা জড়িত, তাঁদেরও ছাড়া হবে না।’’ ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী বগটুই ছাড়তেই সাসপেন্ড করা হল আইসি ত্রিদীপকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy