Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Purulia

সহপাঠীদের সমস্যায় আছে ‘বড়দি’

পুরুলিয়া জেলায় ২৭৪টি কন্যাশ্রী ক্লাব রয়েছে। প্রতিটি ক্লাবে এক জন করে ‘কন্যাশ্রী বড়দি’ বাছাই করা হচ্ছে। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানান, তাদের একটি করে ব্যাজ দেওয়া হবে।

তৈরি ব্যাজ। নিজস্ব চিত্র

তৈরি ব্যাজ। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫১
Share: Save:

যে পড়ে, সে ক্যারাটেও করে। কন্যাশ্রীদের হাত ধরে মেয়েদের সম্বন্ধে সমাজের ধারণার খোলনলচে বদলে দিতে চাইছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। কাল, বুধবার, কন্যাশ্রী দিবসে ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের সামনে হাজির করা হবে ‘কন্যাশ্রী বড়দি’দের।

পুরুলিয়া জেলায় ২৭৪টি কন্যাশ্রী ক্লাব রয়েছে। প্রতিটি ক্লাবে এক জন করে ‘কন্যাশ্রী বড়দি’ বাছাই করা হচ্ছে। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানান, তাদের একটি করে ব্যাজ দেওয়া হবে। তাতে লেখা থাকবে— ‘আমার মেয়ে সব জানে’। ওই ব্যাজ পরে প্রতিদিন স্কুলে যাবে তারা। আর প্রতি মাসে সমস্ত স্কুলের কন্যাশ্রী বড়দিরা যাবে ব্লকের কন্যাশ্রী ভবনে। সেখানে বৈঠক করবে। থাকবেন ব্লক প্রশাসনের প্রতিনিধি, মহিলা পুলিশের প্রতিনিধি, মহিলা সুরক্ষা আধিকারিক, বিএমওএইচ। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ে যে সব জানে, সেই বিশ্বাসটা আমরা গোড়ায় মায়েদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। তা হলে একটু একটু করে সমাজের কাছেও বার্তাটা পৌঁছবে।’’

কী করবে এই কন্যাশ্রী বড়দিরা? জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, তাদের কাজটা মূলত সমন্বয়ের। স্কুলের অন্য মেয়েরা সহপাঠীদের কাছে মন খুলে নানা সমস্যার কথা বলে। কেউ হয়তো ইভটিজিং-এর শিকার। কেউ সাইবার অপরাধের। কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যদের থেকে সে সব সমস্যার কথা পৌঁছে যাবে বড়দিদের কানে। পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে সে সবের সুরাহা করার বন্দোবস্ত করবে তারাই। দরকারে সেই ছাত্রীকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে বৈঠকে। প্রশাসনের কর্তাদের মতে, যে সব সমস্যার কথা জড়তা কাটিয়ে বড়দের বলতে পারে না কিশোরী মেয়েরা, সেগুলির মোকাবিলায় বড়দিরা
সহায় হবে।

বীণা কালিন্দী আর আফসানা খাতুনদের পুরুলিয়ায় এখনও নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা পুরোদস্তুর রোখা যায়নি। জেলাশাসক জানাচ্ছেন, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এখনও ৪৩ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় আঠারো বছর বয়স হওয়ার আগেই। তিনি বলেন, ‘‘অল্প বয়সে মা হতে হয় অনেক মেয়েকে। শিশুও অপুষ্টির শিকার হয়।’’ চাইল্ড লাইনের কর্মীদের অভিজ্ঞতা বলছে, নাবালিকার বিয়ে রুখতে গিয়ে এই সমস্ত কথাই অভিভাবকদের বোঝাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। জেলা প্রশাসনের আশা, কন্যাশ্রীরা নিজেদের ভাল-মন্দ সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা পেলে নাবালিকা বিয়ে রোখার কাজটাও সহজ হয়ে যাবে।

জেলা প্রশাসন সমীক্ষায় দেখেছে, ১৩ বছর বয়সী মেয়েদের ৮০ শতাংশই স্কুলে যায়। ১৮ বছর বয়সে সেই হারটাই কমে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ যাদের হয়ে ওঠে না, তাদেরও পায়ের তলার মাটি শক্ত করার কাজ স্কুল থেকেই শুরু করতে চাইছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক জানাচ্ছেন, স্বনির্ভর দলের কাজকর্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে কন্যাশ্রী বড়দিদের। কন্যাশ্রী ভবনে যে বৈঠক হবে, তাতে স্বনির্ভর দলকেও ডাকা হবে। কখনও ব্যাঙ্কের আধিকারিক আসবেন পাঠ দিতে। কখনও কৃষি বা পশুপালন আধিকারিকেরা আসবেন।

কন্যাশ্রী মেয়েরা সব জানবে। রেশনে পরিবারপিছু কতটা চাল প্রাপ্য, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কতটা খাবার একটি শিশু বা মা পাবেন— সব প্রশাসন জানিয়ে দেবে কন্যাশ্রীদের। পরিবার বা পড়শিরা দরকারে তাদের শরণ নেবে। আর ক্রমশ বুঝবে, মেয়েরা মস্ত বড় অবলম্বন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘কন্যাশ্রীদের আমরা সমাজ পরিবর্তনের দূত হিসেবে দেখতে চাইছি। এই প্রকল্পকে সামনে রেখে তাঁরা নিজেদের জীবন বদলাবে, সহপাঠীদের জীবন সুন্দর করবে আর সমাজকেও নতুন ভাবে গড়ে তুলবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy