গৌরীপুর কুষ্ঠ কলোনির বাড়ি পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় দল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
কাঁচাবাড়িতে বাস। কিন্তু মোটরবাইক থাকায় আবাস প্রকল্পে বাড়ি পায়নি একটি আদিবাসী পরিবার। যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের যোগ্য উপভোক্তা বাছাইয়ে আরোপিত শর্তগুলির প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠল খোদ কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দলের সামনে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে রবিবার রাতেই দুই সদস্যের কেন্দ্রীয় দল বাঁকুড়ায় আসেন। সোমবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁরা বাঁকুড়া ১ ব্লকে পরিদর্শনে যান।
এ দিন বাঁকুড়ার কালপাথর পঞ্চায়েতের সেন্দুয়া, খাসবহর ও গৌরীপুর কুষ্ঠকলোনি ঘুরে দেখেন পরিদর্শকেরা। সেন্দুয়ার বাসিন্দা সাবিত্রী কিস্কু মাটির বাড়িতে বাস করেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তা তালিকায় তিনি আছেন কি না সাবিত্রীর কাছে জানতে চান কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। সাবিত্রী জানান, তাঁর নাম নেই। এরপরেই বাঁকুড়া ১ ব্লকের বিডিও অঞ্জন চৌধুরীর কাছে সাবিত্রীর বাদ পড়ার কারণ জানতে চান ওই দলের প্রধান মনোজ কুমার। বিডিও জানান, সাবিত্রীর স্বামীর মোটরবাইক থাকায় শর্ত অনুযায়ী উপভোক্তা তালিকায় তাঁকে রাখা যায়নি।
সাবিত্রী বলেন, “দিনমজুরি করে সংসার চলে। পাকা বাড়ি করার সামর্থ নেই। স্বামী লটারিতে মোটরবাইক পেয়েছিলেন। সে জন্যই পাকাবাড়ি পাওয়ার সরকারি প্রকল্প থেকে আমাদের নাম বাদ পড়েছে!”
সূত্রের খবর, ঘটনাটি জেনে অবাক হন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যেরাও। সাবিত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরেই প্রধামন্ত্রী আবাস যোজনায় উপভোক্তা বাছাইয়ের শর্তাবলী আরও কিছুটা শিথিল করা উচিত কি না তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে তাঁরা মুখ খোলেননি। বিডিও বলেন, “সাবিত্রীদের জন্যই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা। তবে মোটরবাইক থাকলে ওই প্রকল্পের উপভোক্তা হওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়েই তাঁর নাম বাদ দিতে হয়েছে আমাদের। বিষয়টি কেন্দ্রীয় সদস্যদের জানিয়েছি।”
সেন্দুয়াতেই কেন্দ্রীয় সদস্যদের কাছে স্থানীয় এক বাসিন্দা অন্যায় ভাবে তাঁর নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। বিষয়টি জেনেই কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা অভিযোগকারী ব্যক্তির বাড়ি দেখতে চান। তাঁরা গিয়ে দেখেন অভিযোগকারী পাকাবাড়িতে বাস করেন। ওই ব্যক্তি কোনও ভাবেই কেন্দ্রের আবাস যোজনা প্রকল্পের আওতায় আসতে পারবেন না বলে কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা তাঁকে জানিয়ে দেন।
কালপাথর এলাকায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের উপভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে বাড়ি দেওয়ার বিনিময়ে কেউ টাকা চেয়েছিলেন কি না জানতে চান কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা। যদিও উপভোক্তারা এ নিয়ে অভিযোগ করেননি। কালপাথর পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে প্রকল্পের নথিপত্র খুঁটিয়ে দেখেন তাঁরা। গৌরীপুর কুষ্ঠকলোনির আবাসিকদের জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি করে দেওয়া পাকা বাড়ি ঘুরে দেখেন কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা। বিডিও বলেন, “নির্দিষ্ট খরচের মধ্যে কুষ্ঠ কলোনির আবাসিকদের বাড়ি বানানো হয়েছে। সেই বাড়ির কাঠামোর প্রশংসা করে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা।”
বিজেপির বাঁকুড়া ১ মণ্ডল সভাপতি বিকাশ ঘোষের দাবি, “বহু দুঃস্থ মানুষকে ওই প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা তাঁদের সমস্যা শুনুক।” তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র বলেন, “কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করবেন। এ নিয়ে কিছু বলার নেই।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরা আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত জেলায় থাকবেন। বাঁকুড়া ১, বাঁকুড়া ২, ওন্দা, ;তালড্যাংরা ও হিড়বাঁধের মতো বিভিন্ন ব্লকে তাঁরা পরিদর্শনে যেতে পারেন বলে সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy