পৌষমেলার মাঠে শিশুদের খেলা (উপরে)। সোমবার থেকেই শুরু বিকিকিনি। নিজস্ব চিত্র।
আজ, মঙ্গলবার শুরু হতে চলেছে শান্তিনিকেতনের ১২৫ বছরের পৌষ উৎসব। পরিবেশ আদালতের নির্দেশে এ বার মেলা হবে চার দিনের। মেলা ভাঙার জন্য ব্যবসায়ীদের আরও দু’দিন সময় দিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
এখন লালমাটির দেশে লেগেছে উৎসবের রং। রবিবার থেকেই দেশ-বিদেশের মানুষ শান্তিনিকেতন আসতে শুরু করে দিয়েছেন। সর্বত্রই চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মেলা প্রাঙ্গণের পাশাপাশি আলপনা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে ছাতিমতলা, আম্রকুঞ্জ, উপাসনা মন্দির প্রভৃতি জায়গা। এ বছর পৌষমেলা নিয়ে নানা টানাপড়েন চলায় সোমবার পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণে অধিকাংশ স্টল পুরোপুরি তৈরি হয়নি। যার কারণে মাঠের অধিকাংশ জায়গা এখনও ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
এ বছর অনলাইনের মাধ্যমে ১৫৪২টি স্টল বুকিং করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। অনলাইনে বুকিং শুরু হয় ৪ ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু, মেলায় স্টলের ভাড়া বৃদ্ধি, সিকিউরিটি মানি জমা রাখা নিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বিশ্বভারতীর বিরোধ বাঁধে। তাতে মেলা নিয়ে জটিলতাও দেখা দিয়েছিল। পরে ব্যবসায়ী সমিতির দাবি মেনে মেলায় স্টল বসানোর ক্ষেত্রে ৫৫ শতাংশ এবং সিকিউরিটি মানি জমা রাখার ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয় বিশ্বভারতীর তরফে। মেলা নিয়ে জটিলতা কাটার পরে অনলাইনে ফের বুকিং এর কাজ শুরু হয়। সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১০০০ এর বেশি স্টল অনলাইনে বুকিং করা সম্ভব হয়েছে।
এ ছাড়াও যে সমস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাঁরা অনলাইন বুকিংয়ে ততটা সড়গড় নন, তাঁদের কথা বিবেচনা করে পরিচয় পত্র জমা নিয়ে এবং ন্যূনতম ভাড়া নিয়ে তাঁদেরকেও মেলা মাঠের বিভিন্ন জায়গায় বসতে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। সব দিক থেকে মেলা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে বদ্ধ পরিকর জেলা প্রশাসন ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। পৌষমেলার নিরাপত্তায় সোমবার থেকেই মাঠে বসানো হয়েছে ৮০টি সিসি ক্যামেরা, নজরদারি চালানোর জন্য মেলা প্রাঙ্গণে ছ’টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে, দুটি ড্রোন ক্যামেরার মধ্যে দিয়েও মেলায় নজরদারি চালানো হবে। নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে ২৫০০ পুলিশ কর্মী। এ ছাড়াও কেপমারি, ইভটিজিং রুখতে সাদা পোশাকের পুলিশ ও পুলিশের একটি বিশেষ দলকে রাখা হচ্ছে।
মেলায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য একাধিক ড্রপ গেট, মেলায় ঢোকার প্রত্যেকটি রাস্তায় পার্কিং জোন করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে খোলা হয়েছে পুলিশের কন্ট্রোলরুম। সেখান থেকেই সমস্ত কিছু নজরে রাখা হবে। রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি বিশ্বভারতীর নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী ও প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পাঠানো এক্স সার্ভিস ম্যানের ১০০ জনের দলও মেলায় নজরদারি চালাবে। পরিবেশ দূষণের কথা মাথায় রেখে এ বছর ১০০টি বায়ো টয়লেট বসানো হয়েছে মেলাপ্রাঙ্গণে। এ ছাড়াও বিশ্বভারতীর অস্থায়ী কিছু নিজস্ব শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০টি শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সোমবার রাত ৯টায় বৈতালিক দিয়ে পৌষ উৎসবের সূচনা হতে চলেছে। মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে বৈতালিক এবং সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ছাতিমতলায় উপাসনার পরে শুরু হবে পৌষমেলায় বেচাকেনা। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, ‘‘চার দিনের পৌষমেলার জন্য আমরা প্রস্তুত।’’ শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার বলেন, ‘‘উপাসনার মধ্যে দিয়ে মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে এ বছরের চার দিনের পৌষমেলা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy