—প্রতীকী চিত্র।
আলু ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতির জেরে সোমবার বাঁকুড়ার কোনও হিমঘর থেকেই বার হল না আলু। বিক্রি হয়নি চাষীদের সংরক্ষিত আলুর বন্ডও। এই পরিস্থিতিতে জোগানের অভাবে খুচরো বাজারে আলুর সঙ্কট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আরও প্রবল হল। আশঙ্কা, মঙ্গলবার থেকেই খোলাবাজারে আলুর জোগান কমে যাওয়ায় বৃদ্ধি পেতে পারে দামও।
বাঁকুড়া জেলায় কমবেশি ৪০টি হিমঘর রয়েছে। এই হিমঘরগুলিতে সংরক্ষিত আলু শুধু বাঁকুড়ার বাজারগুলিতে সরবরাহ হয়, তা-ই নয়। সরবরাহ করা হয় দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম-সহ আশপাশের জেলা এমনকি পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার বিভিন্ন বাজারে। ভিন্ রাজ্যে আলু রফতানির ক্ষেত্রে রাজ্যের সীমানায় আলু বহনকারী ট্রাকের চালক ও আলু ব্যবসায়ীদের অযথা হয়রানির অভিযোগ তুলে রবিবার থেকে রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতি শুরু করে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। অধিকাংশ হিমঘর থেকে শনিবার বার করে আনা আলু রবিবার বাজারগুলিতে সরবরাহ করা হলেও রবিবার থেকে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এর জেরে সোমবার সকাল থেকে বাঁকুড়া-সহ আশপাশের বাজারগুলিতে আলুর জোগান বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসায়ী সমিতির দাবী, খুচরো বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে যে আলু মজুত রয়েছে, তা দিয়ে সোমবারের চাহিদা মিটলেও মঙ্গলবার থেকে ভাঁড়ারে টান পড়তে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে ফের আলুর দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ দিকে সোমবার থেকে হিমঘরের আলু না নামানোয় হিমঘরে সংরক্ষিত আলুর বন্ড বিক্রির প্রক্রিয়াও কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। আর এতেই বিপাকে পড়েন হিমঘরে আলু সংরক্ষণ করে রাখা জেলার আলু চাষীদের একাংশ। কোতুলপুরের আলু চাষী নাজির আলি খাঁ বলেন, ‘‘বিগত মরসুমে আমার যে আলু উৎপাদন হয়েছিল, তার বেশির ভাগটাই আমি জমি থেকে তুলেই বিক্রি করে দিয়েছি। শুধুমাত্র ৮৫ বস্তা আলু আমি সংরক্ষণ করেছিলাম। এখন আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংরক্ষিত আলুর বন্ড বিক্রির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কর্মবিরতি করায় সেই বন্ড কেউ কিনছেন না। এই অবস্থায় আমি মার-স্ত্রীর চিকিৎসা কী ভাবে করাবো জানি না। ফসল সংরক্ষণ করে এমন বিপাকে পড়তে হবে, আমার জানা ছিল না।’’
কোতুলপুরের একটি বেসরকারি হিমঘরের মালিক রাধেশ্যাম আগরওয়াল বলেন, ‘‘প্রতিদিন আমার হিমঘরে ৭০ থেকে ৮০ জন শ্রমিক আলু বাছাই ও প্যাকেটজাত করার কাজ করেন। ব্যবসায়ীরা রবিবার থেকে কর্মবিরতি করায় শ্রমিকেরাও কাজ হারিয়েছেন। রবিবার থেকেই কোনও ব্যবসায়ী হিমঘর থেকে আলু বার করেননি। স্থানীয় চাষীরা নিজেদের পারিবারিক প্রয়োজনে সামান্য আলু বার করে নিয়ে যাচ্ছেন। এমনটা চলতে থাকলে বাজারে আলুর আকাল দেখা দেবে।’’ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য কমিটির উপদেষ্টা বিভাস দে বলেন, ‘‘আলুর দাম বৃদ্ধির জন্য আমাদের কর্মবিরতি নয়। কিন্তু কর্মবিরতি চলতে থাকলে স্বাভাবিক নিয়মেই জোগানের অভাবে বাজারে আলুর দাম বৃদ্ধি পাবে। আমরা আশা করি, রাজ্য সরকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত আমাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজে বার করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy