বেলিয়াড়া থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান খুনে অভিযুক্ত বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী আগেই গ্রেফতার হয়েছে। এ বার বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে তাঁদের ফাঁকা ঘর থেকে পিস্তল ও বোমা উদ্ধার করল পুলিশ। রবিবার বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর থানার বেলিয়াড়া গ্রামের ঘটনা।
এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী বলেন, “খবর পেয়ে অভিযুক্তদের বাড়ি ও বাড়ির আশপাশ থেকে তিনটি দেশি পিস্তল, তিনটি কার্তুজ, ১০টি বোমা, বোমা ছোঁড়ার লোহার পাইপ ও কিছু ছুরি ও তরোবারি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। কোথা থেকে, কারা, কী উদ্দেশ্যে এই সব আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করেছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
যাঁর বাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে সেই রহিম মণ্ডল উলিয়াড়ার বর্তমান তৃণমূল প্রধান তসমিনা খাতুনের স্বামী। কয়েক সপ্তাহ আগে রহিম ওই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান শেখ বাবর আলি খুনে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রহিম ছাড়াও স্থানীয় সবুর মণ্ডল, নুরজামাল মণ্ডল ও শামসুর পালওয়ানের বাড়ি থেকে এ দিন আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা উদ্ধার করেছে। তারাও বাবর আলি খুনে অভিযুক্ত।
তবে তসমিনার দাবি, ‘‘১ অগস্ট রাতে বাবর আলিকে তাঁরই ঘনিষ্ঠেরা খুন করে আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় জড়ায়। পরের দিনেই আমাদের বাড়িতে ওরা লুটপাট চালায়। তারপর থেকে বাড়িঘর খোলাই পড়ে রয়েছে। প্রায় ৩০০ জন পুরুষ-মহিলার সঙ্গে আমিও ঘরছাড়া। আর এত দিন পরে গ্রামবাসী আমাদের ঘরে আগ্নেয়াস্ত্র পেলেন! আমরাও চাই কারা ওই সব জিনিস আমাদের ঘরে ঢুকিয়েছে, পুলিশ তা তদন্ত করে দেখুক।’’
তবে এই ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিরোধীদের মধ্যে। বিজেপির বিষ্ণুপুর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি হরকালী প্রতিহারের অভিযোগ, “এত আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জঙ্গলের রাজত্ব চালাচ্ছে। সেখানকার প্রতিটি বাড়িতেই তল্লাশি চালানো দরকার।” যদিও বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরার দাবি, ‘‘আমাদের দলে দুষ্কৃতীদের স্থান নেই। পুলিশ যদি বাড়ির ভিতর থেকে বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র পায়, কোথা থেকে তা এল, তদন্ত করে দেখুক।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, গোলমালের সূত্রপাত উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদ। ২০১৩ সালে উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রধান হন বাবর। তিনি বিষ্ণুপুরের তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে শ্যামবাবু হেরে যান। তারপরেই অনাস্থায় প্রধানের পদ হারান বাবর। তাঁর বাড়িতে ভাঙচুরও চলে বলে অভিযোগ। উত্থান ঘটে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী বলে পরিচিত রহিম মণ্ডলদের। সেই থেকে বাবর একপ্রকার গ্রাম ছাড়া ছিলেন।
কয়েক মাস আগে বিষ্ণুপুর ব্লক সভাপতির দায়িত্ব পান শ্যামবাবু। তারপরেই বাবর ও তাঁর ঘনিষ্ঠেরা এলাকায় ফের সক্রিয়তা বাড়ায়। যার জেরে তেতে ওঠে এলাকা। জুলাই মাসের শেষের দিকে উলিয়াড়ায় কিছু দিন বোমাবাজি চলে। তার মধ্যেই ইদ উপলক্ষে বাড়ি ফেরা বাবরের উপরে ১ অগস্ট রাতে এক দল দুষ্কৃতী বোমা ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়ে খুন করে।
অভিযোগ ওঠে রহিম ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। রহিম-সহ কয়েক জন গ্রেফতার হলেও অনেকে অধরা। আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পরে এ দিন বাবরের ছেলে শেখ ফিরোজ বলেন, ‘‘পুলিশের কাজে খুশি। তবে বাবার খুনের সঙ্গে জড়িত সবাই ধরা পড়ুক।’’ আর শ্যামবাবু বলছেন, ‘‘বাবরকে যে ভাবে খুন করা হয়েছে, তারপরে এ সব উদ্ধার অস্বাভাবিক কিছু নয়। পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। ব্যক্তি হিংসার কোনও জায়গা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy