Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
এনআরএস-কাণ্ডের জেরে ভোগান্তি বাঁকুড়া মেডিক্যালে

বাইরে রোগী, দরজা রুখে ডাক্তারেরাই

হাসপাতাল সূত্রে খবর, রাত আটটা পরে জরুরি বিভাগের দরজায় সামনে থেকে জুনিয়র ডাক্তারেরা সরে গিয়ে মিছিল করেন। তবে, রোগী দেখার কাজে তাঁরা যোগ দেননি। 

জরুির বিভাগের দরজায় বাধা পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্সেই শুয়ে দুর্ঘটনায় আহত বিষ্ণুপুরের দুই যুবক। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

জরুির বিভাগের দরজায় বাধা পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্সেই শুয়ে দুর্ঘটনায় আহত বিষ্ণুপুরের দুই যুবক। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০১:৩৬
Share: Save:

কলকাতার এনআরএস-এ গোলমালের জেরে চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বাঁকুড়া মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে ঢুকতে বাধা পেলেন রোগীরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পথ আটকে বসে থাকা জুনিয়র ডাক্তারেরা মুমূর্ষু রোগীদের ছাড় দেননি বলে অভিযোগ। যার জেরে ক্ষুব্ধ রোগীর পরিজনেরা হাসপাতালের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন। পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাঁদের হটিয়ে দেয় অভিযোগ। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার বিকেল চারটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত তেতে থাকল বাঁকুড়া মেডিক্যালে। সমানে ভুগলেন রোগীরা। হয়রানির শিকার হলেন তাঁদের আত্মীয়েরা।

রাতে বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতীম প্রধান বলেন, ‘‘দফায় দফায় আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। মুর্মূর্ষু রোগী যাঁরা আটকে পড়েছিলেন, তাঁদের অন্য দরজা দিয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকিয়েছি। তবে কিছু ক্ষেত্রে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।’’

হাসপাতাল সূত্রে খবর, রাত আটটা পরে জরুরি বিভাগের দরজায় সামনে থেকে জুনিয়র ডাক্তারেরা সরে গিয়ে মিছিল করেন। তবে, রোগী দেখার কাজে তাঁরা যোগ দেননি।

তবে, পুরো ঘটনায় পুলিশ কর্মীদের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন রোগীর পরিজনেরা। তাঁদের অভিযোগ, জুনিয়র ডাক্তারেরা রাস্তা আটকে বসে থেকে রোগীদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার সময় পুলিশ কর্মীরা নীরব দর্শক হয়েছিলেন। আর রোগীর পরিজনেরা রাস্তা অবরোধ করলে সেই পুলিশই গিয়ে লাঠিপেটা করে সরিয়ে দিল। তবে জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও পুলিশের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি দাবি করেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে পুলিশও আলোচনা চালাচ্ছিল। রোগীর আত্মীয়দের উপরে লাঠিচার্জের অভিযোগ ঠিক নয়।’’

বিকেলে থেকে রাত পর্যন্ত জরুরি বিভাগের সামনে বসে থাকেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। রাত আটটা নাগাদ তাঁরা সেখান থেকে সরে যান। নিজস্ব চিত্র

দুপুরে মেডিক্যালের অধ্যক্ষ দাবি করেছিলেন, এনআরএস কাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে জুনিয়র ডাক্তাররা অবস্থান করবেন বলে ঠিক করেছেন। তবে, হাসপাতালের পরিষেবা যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য তাঁরা পালা করে অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন।

যদিও তাঁরা জরুরি বিভাগের সামনে বসে পড়েন। কিছু পরেই সেখান দিয়ে হাসপাতালে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান রোগীরা। ভিতরে ঢোকার ঘুরপথ থাকলেও যাঁরা তা চেনেন না, তাঁরা রোগীদের নিয়ে জরুরি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করতে শুরু করেন।

যেমন, এ দিন বিকেল সওয়া পাঁচটা নাগাদ পথদুর্ঘটনায় জখম বিষ্ণুপুরের লায়েকবাঁধ এলাকার দুই সঞ্জু বাগদি ও রাজু লোহারকে রক্তাক্ত অবস্থায় বাঁকুড়া মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে ঢোকাতে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের বাধা পান তাঁদের পরিজনেরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দেখেও তাঁরা আহত দুই যুবক জরুরি বিভাগের ভিতরে ঢুকতে দেননি বলে অভিযোগ।

কাতর আর্জি জানিয়েও পথ থেকে না সরায় পরিজনেরা তাঁদের নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরেই অপেক্ষা করতে থাকেন।

রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালে এসেও চিকিৎসা করাতে পাচ্ছি না। এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারিনি।’’ হাসপাতালের সুপার দেবনারায়ণ সরকার ঘটনাটি শোনার পরে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেন। কেন জরুরি বিভাগের দরজা আটকে আন্দোলন করা হচ্ছে? এ নিয়ে সদুত্তর মেলেনি।

বাঁকুড়া মেডিক্যালে পরিষেবা সচল রাখতে বড় ভূমিকা থাকে জুনিয়র ডাক্তারদের। তাঁদের আন্দোলনে নামতে দেখে উদ্বিগ্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা। তবে, এ দিন বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অল্প হলেও কয়েকজন ইন্টার্ন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি উপস্থিত ছিলেন। পরে রোগীরা ঢুকতে বাধা পাওয়ায় তেতে ওঠে এলাকা।

বাঁকুড়া জেলা তো বটেই, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার একাংশ এবং ঝাড়খণ্ডের একাংশের রোগীদেরও বড় ভরসা বাঁকুড়া মেডিক্যাল। এই পরিস্থিতিতে এখানকার পরিষেবা বিঘ্নিত হলে রোগীরা কোথায় যাবেন, তা নিয়ে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে। যদিও অধ্যক্ষের দাবি, ‘‘আমরা সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’’

তবে এ দিন জুনিয়র ডাক্তারদের বড় অংশই কাজে যোগ না দেওয়ায় ওয়ার্ডের পরিষেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে আড়ালে মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই হাসপাতালে রোগীর চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা বেশি। এই পরিস্থিতিতে কম সংখ্যায় জুনিয়র ডাক্তার নিয়ে ওয়ার্ড চালাতে গিয়ে পরিষেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি, হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এনআরএস-এর প্রসঙ্গ টেনে বাঁকুড়ার জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ বলেন, “বাঁকুড়া মেডিক্যালেও চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনার নজির রয়েছে। হাসপাতাল চত্বরেই একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তার দায়িত্বে তাঁরা থাকেন না। অন্তত হাসপাতালে ঢোকার দরজাগুলিতেও তাঁরা যদি থাকেন তাহলে অনধিকার প্রবেশ অনেকটাই রোখা সম্ভব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Patient Bankura Medical Hospital NRS Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy