Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Corona

সংক্রমণ কমতেই ফিরল সেই আড্ডা

মঙ্গলবার বাঁকুড়া শহরের মাচানতলার মোড়, পুরভবনের সামনের চায়ের দোকান, গলির ভিতর আড্ডা চলেছে দূরত্ববিধি উড়িয়েই।

ঝুঁকি: বাঁকুড়া শহরের বড়বাজারে ভিড়ের মধ্যেই মাস্ক-ছাড়া।

ঝুঁকি: বাঁকুড়া শহরের বড়বাজারে ভিড়ের মধ্যেই মাস্ক-ছাড়া। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২১ ০৭:২০
Share: Save:

সংক্রমণের হার কমতেই আবার বেপরোয়া অনেকে।

দু’জেলার অনেক জায়গায় পাড়ার মোড়ে, চায়ের দোকানে সকাল থেকে জমিয়ে চলছে আড্ডা। কোথাও মাস্ক নেই, কোথাও তা ঝুলছে গলায়। সচেতন বাসিন্দাদের অভিযোগ, নজরদারির অভাবেই এমন গা-ছাড়া মনোভাব ফিরে এসেছে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘‘পুলিশ নজরদারির সঙ্গে সঙ্গে সচেতনতা প্রচারও চালাচ্ছে। তবে মানুষকে নিজে থেকেও সতর্কতা মানতে হবে।’’

এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া কিছু দিন আগে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, দেশে লকডাউন শিথিল হতেই মানুষজন যে ভাবে কোভিড বিধি ভাঙতে শুরু করেছেন, তা চলতে থাকলে আগামী ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের শিকার হতে হবে। করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন ‘ডেল্টা প্লাস’-এর হানায় অতীতের সংক্রমণের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে বলেই আশঙ্কা করেছেন তিনি।

তার পরেও সতর্ক হচ্ছেন ক’জন?

মঙ্গলবার বাঁকুড়া শহরের মাচানতলার মোড়, পুরভবনের সামনের চায়ের দোকান, গলির ভিতর আড্ডা চলেছে দূরত্ববিধি উড়িয়েই। মাচানতলার দোকানে আড্ডা দিতে দিতে এক ব্যক্তি জোরের সঙ্গে বলেন, ‘‘করোনা কোথায়? সংক্রমণ কমে গিয়েছে। তৃতীয় ঢেউ বিশেষ কিছু ক্ষতি করতে পারবেনা।’’ তাঁর সঙ্গী এক জনের জবাব, ‘‘করোনায় ক্ষতি হলে হবে। কত দিন আর ঘরে থাকব?’’

বিষ্ণুপুর শহরে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে চায়ের দোকানের আড্ডায় মজছেন কেউ কেউ। শহরের বাসিন্দা বুবাই ভট্টাচার্য, আলোক সেনদের বক্তব্য, ‘‘কোথায় বসলে দু’-চার জন বন্ধু আসছেন। তা ছাড়া, এই সময়ে মানসিক ভাবে ভাল থাকার জন্য একটু গল্পগাছা করা ভাল।’’

তাঁরা মাস্ক পরলেও বিষ্ণুপুরেরই মটুকগঞ্জ, গোপালগঞ্জের চায়ের দোকানগুলিতে দেখা যায়, খোলা মুখেই আড্ডা চলছে।

মাস্ক পরেননি কেন? প্রশ্ন করলে উত্তর এসেছে— ‘‘আর ভাল লাগছে না। পকেটে আছে, প্রয়োজনে পরে নেব।’’ বিষ্ণুপুর শহরের এক মাস্ক বিক্রেতা রীতেশ ঘোষ বলেন, ‘‘মাস্কের বিক্রি একেবারেই কমে গিয়েছে।’’ বড়জোড়া, বিষ্ণুপুর, পাত্রসায়রের বিভিন্ন গ্রামে মাচায় যথারীতি আগের মতোই জমজমাট আড্ডা শুরু হয়েছে। মাস্ক পরার প্রশ্নে মাচা থেকে উত্তর এসেছে, ‘‘আমাদের পাড়ায় করোনা নেই।’’

পুরুলিয়া পুরসভা চত্বরে অশোকগাছের নীচে চায়ের দোকান থেকে বিটি সরকার রোড, রঘুনাথপুর শহরে জীবন বিমা অফিসের সামনে চায়ের দোকানগুলিতে আড্ডা জমে উঠেছে। অনেকেরই মাস্ক ছিল না। পুরুলিয়ার চাঁইবাসা রোডের আনাজ বাজারেও বেশির ভাগ বিক্রেতা মাস্কহীন ছিলেন। কারও থাকলে তা ঝুলেছে থুতনিতে। শহরের বাসিন্দা পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘চায়ের দোকানের ওই দেদার আড্ডা নিয়েই বেশি ভয়।’’ আদ্রা বা রঘুনাথপুরে লোকজন মাস্ক পরে দোকানে ঢুকলেও অনেককেই চা খেয়ে বেরিয়ে মাস্ক খুলে ফেলছেন।

এ দিন থেকে ‘অম্বুবাচী’ শুরু হওয়ায় বাজারগুলিতে মাছ, মাংস, আম, কাঁঠাল কেনার ভিড় ছিল। খাতড়ার পাম্পমোড়, সুপুর, সাহেববাঁধ, পাপড়া থেকে রাইপুরের হলুদকানালি, সারেঙ্গার পিড়লগাড়ি, সুখাডালি, সিমলাপালের বিক্রমপুর, পুখুরিয়ায় বাজার করতে আসা মানুষের ভিড়ে কম লোককেই মাস্ক পরতে দেখা গিয়েছে।

মুখে মাস্ক ছাড়া, খাতড়ার পাম্পমোড়ে মাংস কিনতে আসা সঞ্জীব মাহাতো নামে এক যুবক দাবি করেন, ‘‘মুখে মাস্ক নিয়ে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে। তাই খুলে রেখেছি।’’ তালড্যাংরার পাঁচমুড়া হাটতলা, ইঁদপুরের বাংলায়, হিড়বাঁধের হাতিরামপুর ও মলিয়ান হাটতলায় অনেক ক্রেতা-বিক্রেতার মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। বান্দোয়ানের কুচিয়ায় অম্বুবাচীর কেনাকাটার ভিড়ে মাস্কবিহীন অনেকে ছিলেন। একই ছবি বান্দোয়ানের হাটেও। হিড়বাঁধের বাসিন্দা প্রদীপ্ত মহান্তি বলেন, ‘‘প্রশাসনের নজরদারি একটু কমতেই অনেকে বিনা মাস্কে ঘোরাঘুরি করছেন।’’

তবে কিছুটা হলেও অন্য ছবি দেখা গিয়েছে খাতড়ার সাহেববাঁধ মোড়ে স্থানীয় যুবকদের আড্ডায়। সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানা না হলেও মুখে মাস্ক রয়েছে প্রত্যেকেরই। তাঁদের মধ্যে দীপক মাহাতো নামে এক যুবক বলেন, ‘‘মাস্ক ছাড়া, কোনও বন্ধুকে আমরা আড্ডায় যোগ দিতে দিই না। ’’

পুরুলিয়া মেডিক্যালের চিকিৎসক তথা বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়ার সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘দেশ থেকে করোনা ভাইরাস চলে গিয়েছে, বিষয়টি আদপে তা নয়। সংক্রমণের গতি কমেছে মাত্র। মানুষজনের উদাসীনতা চলতে থাকলে ফের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে আমাদের।”

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Coronavirus in West Bengal COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy