এই সেই অভিযোগপত্র। —নিজস্ব চিত্র।
রাস্তায় পাথর বোঝাই গাড়ি আটকে ডিসিআর (ডুপ্লিকেট চালান রিসিপ্ট) কেটে জরিমানা আদায় করছে প্রশাসন। অভিযোগ, তার জেরেই সারাদিন রাস্তায় যানজট লেগে আছে। জনজীবনও বিপর্যস্ত। পরিস্থিতি শোধরাতে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হলেন মহম্মদবাজারের পাঁচামি ও তালবাঁধ পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ।
জেলাশাসকের কাছে লিখিত আবেদনপত্রে ওই দুই এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেছেন, চলতি মাসের ১৬ তারিখ থেকে রাস্তায় ট্রাক-লরি-ডাম্পার দাঁড় করিয়ে জরিমানা আদায়ের জন্য ২৪ ঘণ্টা সোঁতশাল থেকে পাঁচামি ও তালবাঁধ পর্যন্ত রাস্তা কার্যত অচল হয়ে থাকছে। ওই রাস্তা দিয়ে চলাচাল করতে গিয়ে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে স্কুল পড়ুয়ারা। সঙ্গে রয়েছে দুর্ঘটনার ভয়। অবিলম্বে সমস্যা মেটাতে ব্যবস্থা জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন বলেও হুঁশিয়ারি এলাকাবাসীর।
বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘এমন আবেদন এসে থাকতে পারে। তবে দিন কয়েক বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় আমি সেটা দেখিনি। যানজট হলে পুলিশকে বলে সেটা মেটানোর ব্যবস্থা করব।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর আগে ২০ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা পাথরখাদান মালিক, ক্রাশারমালিক, বালি ঘাটের লিজপ্রাপ্ত এবং পরিবহণ ব্যবসায় যুক্ত লরি ও ডাম্পার মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, কোনও ভাবেই ওভারলডিং করা যাবে না। কেন না ওভারলোডিংয়ের জন্য সেতু দুর্বল হচ্ছে। রাস্তা খারাপ হচ্ছে। দুর্ঘটনা বাড়ছে। এমনকি,
স্কুলছুটের সংখ্যাও বাড়ছে রাস্তা ঘেঁষে থাকা স্কুলগুলিতে। বাড়ছে দূষণও। প্রশাসনেরই একটি সূত্রের দাবি, ওভারলোডিং বন্ধ করার সঙ্গে সরকারের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যেও পাঁচামি ও তালবাঁধ এলাকায় পাথরের গাড়িগুলি থেকে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে পাথর খাদান মালিকদের এবং পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত লরি ও ডাম্পার মালিকদের বক্তব্য ছিল, অনুমতি ছাড়া ভূগর্ভস্থ কিছু তোলা যাবে না, এই আইনি জটিলতায় কাগজে কলমে বন্ধ রয়েছে জেলার সিংহভাগ পাথর খাদান ও ক্রাশার। কিন্তু বাস্তবে বাজারে পাথরের চাহিদা এবং স্থানীয় মানুষের রুজিরুটির জন্য খোলা রয়েছে প্রায় সব খাদানই। ফলে পাথর বহনের সঙ্গে যুক্ত লোকজন সবাই কাজে নিযুক্ত। কিন্তু এই কারবার বেআইনি জানিয়ে প্রশাসনের তরফে ওভারলোডিংকে ঢাল করে জরিমানা করা হচ্ছে। তাঁদের প্রস্তাব ছিল, জাতীয়
সড়ক বা অন্য প্রধান রাস্তা কিংবা বিভিন্ন চেকপোস্টে নয়, যাবতীয় যাচাই পর্ব শেষ হোক পাঁচামি, শালবাদরা, নলহাটি, রামপুরহাট ও রাজগ্রামের পাথর শিল্পাঞ্চলে ঢোকা এবং বেরনোর মুখেই।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘খাদান-ক্রাশার এবং ডাম্পার মালিকদের দাবি মেনে আমরা ক্রাশারের সামনেই যাবতীয় পরীক্ষা সারছি। মাঝরাস্তায় কোথাও গাড়ি আটকানো হচ্ছে না। জাতীয় সড়কে যানজটও অনেক কম।’’ জেলা ভূমি ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে শুধু ওভারলোডিং কমেছে তা-ই নয়, সরকারের আয়ও বেড়েছে কয়েক গুণ। ক্রাশার মালিকদেরও এখন অনেক বেশি রয়্যালটি দিতে হচ্ছে। তবে, পাঁচামি-তালবাঁধ পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকায় যানজট যে হচ্ছে, তা প্রশাসন মানছে। মহম্মদবাজার ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তাপস সিংহ বলেন, ‘‘ওই এলাকার মানুষজন যানজটের সমস্যায় ভুগছেন বলে আমিও শুনেছি। তবে বিশদে বিষয়টি জানি না।’’
অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা ভূমি ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি বলছেন, ‘‘পাঁচামি ও তালবাঁধ এলাকায় ক্রাশার থেকে পাথর নিয়ে ঢোকা-বেরনোর জন্য ১৬টি পয়েন্ট রয়েছে। বাছাই ৪টি পয়েন্টেই লোক রেখে ওভারলোডিং পরীক্ষা এবং ডিসিআর কাটা হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, ১৬টি পয়েন্টেই লোক দিতে হবে। কিন্তু কর্মীর অভাবে সেটা এখনই করা যাবে না। তবে সমস্যা দেখে আরও দু-একটি পয়েন্ট বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy