আক্রান্ত: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খিচুড়ি খেয়ে অসুস্থদের আনা হচ্ছে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। শনিবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
ফের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাবারে টিকটিকি থাকার অভিযোগ উঠল। শিশু ও গর্ভবতী মহিলা মিলিয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন ৪০জন। তাঁদের মধ্যে ন’জন এখনও সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি বলে জানা গিয়েছে। শনিবার মহম্মদবাজার ব্লকের আঙ্গারগড়িয়া পঞ্চায়েতের মালডিহা গ্রামের ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার ৬৪ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাবার ৪৫জন শিশু ও ১২জন গর্ভবতী নিয়মিত খান। রান্না করা খাবার অনেকেই বাড়িতে নিয়ে যান, খাওয়ার সুবিধার জন্য। এ দিন খাবার বাড়ি নিয়ে গিয়ে খাওয়ার সময় টিকটিকির শরীরের নানা অংশ পান বেশ কয়েকজন। খবর জানাজানি হতেই যাঁরা এ দিনের রান্না করা খাবার খেয়েছিলেন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সকলেই। অনেকেই বমি করতে শুরু করেন। অসুস্থদের প্রথমে প্যাটেলনগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। বমির সঙ্গে অনেকে মাথা যন্ত্রণার কথা বলায় তাঁদের সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা মল্লিকা দাস, বুলবুলি দাসেরা বলেন, ‘‘অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে খিচুড়ি নিয়ে এসেছিলাম। ছেলেদের খাওয়ানোর সময় টিকিটিকির শরীরের নানা অংশ দেখতে পাই। কিছুক্ষণ পর থেকেই ছেলেরা বমি করতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে জানাই।’’ অঙ্গনওয়াড়ির কেন্দ্রের কর্মী পূর্ণিমা বাগদি এবং সহায়িকা করুণা বাগদি গ্রামবাসীদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খিচুড়ি না খাওয়ার কথা জানান। কিন্তু ততক্ষণে অনেকেরই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা কারণ জানতে চাওয়ায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরাও খাবারে টিকটিকি পাওয়ার কথা জানান। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, অধিকাংশই আতঙ্কিত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে এ দিন পুলিশও যায়। হাসপাতালে যান ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা। সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার শোভন দে বলেন, ‘‘মোট ৪০ জন খাতায় কলমে ভর্তি হয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত ন’জন ভর্তি আছেন।’’ অন্যদিকে, বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রী আড়ি বলেন, ‘‘অসুস্থদের সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রত্যেকের যথাযথ চিকিৎসা হয়েছে।’’
তবে এই ঘটনা নতুন নয়। ব্যাঙ, সাপ, টিকটিকি রান্না করা খাবারে পড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বীরভূমের একাধিক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। দিন পনেরো আগে কীর্ণাহারের মাস্টারপাড়ায় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাবারে টিকটিকি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। বাড়িতে খাবার নিয়ে গিয়ে খাওয়ার সময় মরা টিকটিকিকে মাছ ভেবে খেতে গিয়েছিল একটি শিশু। সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে হুলুস্থুলু বেধে যায়। বিডিওকে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। গত বছর ৭ মে রাজনগরের রানিগ্রমের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খিচুড়িতে মিলেছিল গোটা একটা সাপ। যিনি রান্না করেছিলেন খেয়ালই করেননি যে রান্নার সঙ্গে সাপটিও সিদ্ধ হয়ে খাবারে মিশে গিয়েছে। সেবার ৪৪ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ১ জন ছাড়া সকলকেই প্রাথমিক চিকিৎলার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আগে রাজনগরেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রান্নায় সিদ্ধ ব্যাঙ মিলেছিল। প্রতিবারই অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীরা দুর্বল পরিকাঠামোর অজুহাত দিলেও সুসংহত শিশু বিকাশ দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক অনির্বাণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘পরিকাঠামোর সঙ্গে পরিচ্ছন্নভাবে রান্না করার কোনও যোগ নেই। রান্না করার সময় আনাজ ধুয়ে রান্না করতেই হবে। এটা চূড়ান্ত গাফিলতির লক্ষণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy