চলছে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
প্রশ্নের মুখে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রবিবার সকালে দুর্ঘটনায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক শ্রমিকের মৃত্যুকে ঘিরে ক্ষোভ ছড়াল। মৃতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবির পাশাপাশি কর্মীরাই প্রশ্ন তুললেন পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও।
সদাইপুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বিকেলে। যে শ্রমিক মারা গিয়েছেন তাঁর নাম গণেশ মণ্ডল (৩২)। তিনিএকটি ঠিকাদার সংস্থার হয়ে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি নদিয়া জেলার কালীনারায়ণপুরে। উপযুক্ত নিরাপত্তার পরিকাঠামো না থাকায় একজন শ্রমিকের মৃত্যুতে কেন তাঁর পরিবার ভেসে যাবে এই দাবি নিয়েই রবিবার সকালে কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন শ্রমিকেরা। শেষ পর্যন্ত সব পক্ষের মধ্যে আলোচনার পরে মীমাংসা হলে শান্ত হন শ্রমিকেরা।
বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে পাঁচটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট (প্রতিটি ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন) আছে। প্রতি বছর ৪০-৪৫ দিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখে প্রতিটি ইউনিটের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এই কাজে পারদর্শী শ্রমিকদের দিয়েই। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪ নম্বর ইউনিটে সেই কাজ চলছিল। কলকাতার যে সংস্থা এই কাজের বরাত পেয়েছে তারা গত ১৯ জুলাই থেকে কাজ শুরু করে। তারাই কয়েকশো কর্মী নিয়োগ করেছিলেন এই কাজে। তাঁদের মধ্যে গণেশও ছিলেন। সহকর্মী ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত শ্রমিকদের-কর্মীদের অভিযোগ, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফাঁক থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বয়লারে কাজ করার সময় শনিবার বিকালে একটি ভারি যন্ত্রাংশ ছিটকে পড়ে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন তিনি। সময়মতো অ্যাম্বুল্যান্সও পাওয়া যায়নি। অনেকটা পরে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। শুধু গণেশ নন, কাজ চলাকালীন শুক্রবার আরেক শ্রমিকও আঘাত পেয়েছিলেন। বারবার একই ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়।
রবিবার সকাল থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি ও মৃত শ্রমিকের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান গেটে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েকশো শ্রমিক। মৃত শ্রমিকের জামাইবাবু বিকাশ দাস, সহকর্মী নিশিথ পাল, অপূর্ব ঘোষেরা জানিয়েছেন, কাজ ঠিকাদার সংস্থা করছে ঠিকই কিন্তু নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্ব পিডিসিএলের। শনিবার বিকেলে যখন দুর্ঘটনাটি ঘটে তখন একজন আধিকারিক অনুপস্থিত ছিলেন। সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়নি। মৃতের চারটি ছোট ছোট মেয়ে রয়েছে। সংসারে একমাত্র রোজগেরেও ছিলেন তিনি। বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করেন বছরভর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা অন্যান্য শ্রমিকেরাও।
এ দিন সকাল থেকে চলতে থাকা শ্রমিক বিক্ষোভ মেটাতে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের হিউম্যান রিসোর্স-এর আধিকারিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একজন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়র সৌরভ ভট্টাচার্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার আধিকারিকেরা, তৃণমূল ও বাম শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও মৃতের পরিজনেদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসেন। দীর্ঘ সময় আলোচনা চলার পরে সমাধান সূত্র মেলে। বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার অমরনাথ পাল, পিডিসিএলের হিউম্যান রিসোর্স-এর আধিকারিকেরা এই বিষয়ে মুখে কুলুপ আঁটলেও শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, মৃতের
পরিবারকে আট লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেহ সৎকার ও দু মাসের আগাম বেতন বাবদ ৩৫ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে মৃত শ্রমিকের পরিবারকে। এর পাশাপাশি অবিলম্বে নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস্ত করা হয়েছে শ্রমিকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy