পাড়ুইয়ের গ্রামে স্কুল চালাচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
রাজনৈতিক হিংসায় বীরভূমের পাড়ুই বারবারই খবরের শিরোনামে এসেছে। খুন, ভাঙচুর, ধরপাকড়, পুলিশ পিকেটের চেনা ছবিটার থেকে একদম অন্য এক পাড়ুইয়ের দেখা মিলল স্থানীয় বাঁধের পাড় গ্রামে। এই গ্রামের বাসিন্দা ছ’জন সিভিক ভলান্টিয়ার ডিউটি থেকে ফিরে শ’খানেক পড়ুয়াকে নিয়ে আস্ত একটা স্কুল চালাচ্ছেন। ক্লাসঘর বলতে স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘরটি। সেখানে অঙ্গনওয়াড়ির ক্লাস শেষ শুরু হয় পুলিশ কাকুদের স্কুল। এই নামেই এই স্কুলকে চেনে গ্রামের ছোটরা। কারণ পাড়ুই থানার উদ্যোগে পরিচালিত হয় স্কুলটি। পড়ুয়াদের বই-খাতা, থেকে চক, পেন্সিল, ডাস্টার সবই যোগায় থানা। আর বিনা বেতনে শিক্ষা দান করেন এলাকার বাসিন্দা ওই সিভিক ভলান্টিয়াররা।
এই স্কুল শুরুর কাহিনিটা অবশ্য মর্মান্তিক। পাড়ুইয়ের কসবা পঞ্চায়েতের বাঁধের পাড় ও বড়াল পাড়া মূলত আদিবাসী প্রধান দুটি গ্রামের ধারেকাছে কোনও প্রাথমিক স্কুল না থাকায় এই গ্রাম দুটির পড়ুয়াদের যেতে হতো চার কিলোমিটার দূরে বেড় গ্রামে। সিউড়ি - বোলপুর প্রধান সড়ক ধরে হেঁটেই যেতো গরীব পরিবারের শিশুরা। এই পথে মালবাহী গাড়ি চলে। ২০১৫ সালে ওই রাস্তায় স্কুলে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় দুই পড়ুয়া-সহ এক অভিভাবকের মৃত্যু হয়। এরপরেই গ্রামের সব অভিভাবকেরা সিদ্ধান্ত নেন জীবন বাজি রেখে এ
ভাবে আর স্কুলে পাঠাবেন না সন্তানদের। স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় এলাকার শিশুদের। পাড়ুই থানার মাধ্যমে এই খবর পৌঁছোয় বোলপুরের তৎকালীন এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষের কাছে। তিনি গ্রামবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করে আশ্বস্ত করেন থানার তরফ থেকে এলাকার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করবেন। গ্রামবাসীরা জানান, সেই থেকে শুরু হয় গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পুলিশ কাকুদের স্কুল।
দুপুরে অঙ্গনওয়াড়ি শেষ হওয়ার পরে শুরু হয় এই প্রাথমিক বিদ্যালয়। শেখ মোজাম্মেল হক, শেখ নাজিবুল হক, সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, আব্বাস উদ্দিন, শেখ নাজিম উদ্দিন, মহম্মদ আজাহার উদ্দিন – এই ছ’জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে বাছা হয় ওই এলাকা থেকে। যাঁরা থানায় ডিউটি সেরে গ্রামে ফিরে ছাত্র পড়ানোর কাজটি করবেন। পাঁচ বছরে এর অন্যথা হয়নি। এরা সকালে পাড়ুই থানায় ডিউটি করেন তারপর গ্রামে ফিরে ছাত্র পড়ান। পড়ুয়ার সংখ্যাও বেড়েছে গত কয়েক বছরে। এই স্কুলের পড়ুয়া সুকল মান্ডি, সাবিত্রী হেমব্রমেরা বলে, ‘‘গ্রামেরই দাদারাই স্কুলে পড়ান। তাই আমাদের লেখাপড়া হচ্ছে, নইলে তো স্কুলে যাওয়াই বন্ধই হয়ে গিয়েছিল।’’ অভিভাবক শ্রীদাম টুডু, মটর মাড্ডিরাও বলেন, ‘‘আমরা ভাবতেই পারিনি যে এইভাবে গ্রামের বাচ্চাদের লেখাপড়া আবার শুরু হবে।’’
এই বিষয়ে বীরভূম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি প্রলয় নায়েক বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা এই বিষয়টি আমাদেরকে জানিয়েছেন। ওই গ্রামে স্কুল তৈরির জন্য একটি জায়গাও ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিক্ষা দফতর থেকে অনুমতি পাওয়া গেলেই খুব তাড়াতাড়ি স্কুল তৈরির কাজ শুরু করা হবে।’’ আর শিক্ষক সিভিক ভলান্টিয়াররা জানিয়েছেন, থানার কাজ সেরে স্কুলে পড়ানো একদম অন্যরকমের কাজ। সমাজের জন্য কিছু করতে পারায় খুশি তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy