দুর্ভোগ: জোড়ের জলে ভেসেছে রাস্তা। কাঁটাবনি গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
বন্যার ক্ষত এখনও সার্বিক ভাবে কাটিয়ে উঠতে পারেনি জেলা। কোথাও জলের তোড়ে রাস্তা উড়ে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে গ্রাম, কোথাও আবার কজওয়ে ভেঙে পারাপার বন্ধ। এই অবস্থায় জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় উন্নয়নের কাজে বড়সড় ধাক্কা খেতে আশতে চলেছে বলে আশঙ্কা করছেন বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ শনিবার থেকেই বাঁকুড়া জেলার ১৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের চলতি বোর্ডের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। জেলার ২২টি পঞ্চায়েত সমিতির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১ সেপ্টম্বর। জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে ১২ সেপ্টেম্বর। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে পঞ্চায়েতগুলি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিডিওদের। তবে বিডিওরা পঞ্চায়েতের দৈনন্দিন কাজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও নতুন কোনও প্রকল্প নেওয়া বা পঞ্চায়েতের অর্থ খরচের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। কাজেই এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতগুলির তহবিলে পড়ে থাকা অর্থ কোনও ভাবেই খরচ করা যাবে না বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনিক কর্তারা। ফলে উন্নয়নের কাজের গতি যে শ্লথ হবে, তা নিয়ে সংশয় নেই বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী ২৮ ও ২৯ অগস্ট গ্রাম পঞ্চায়েত ও ৬ সেপ্টেম্বর জেলার পঞ্চায়েত সমিতিগুলির বোর্ড গঠন হওয়ার কথা। কিন্তু, জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নির্বাচন না হওয়া আসনগুলি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। ফলে সব ক’টি আসনেই নির্বাচন হয়েছে শুধুমাত্র এমন গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিগুলিতেই বোর্ড গঠন করা যাবে। সেই নিয়ম মেনেই জেলার ১৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে কেবল মাত্র ৪৯টিতে, এবং ২২টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে কেবল ছ’টিতে বোর্ড গঠন করা হবে প্রশাসনের নির্ধারিত দিনে। জেলা পরিষদের বোর্ড গঠনের দিন ধার্য হবে সুপ্রিম কোর্টের শুনানির শেষে।
গত ৪ অগস্ট রাতভর বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় বাঁকুড়ার ছাতনা, বাঁকুড়া ১, বাঁকুড়া ২, গঙ্গাজলঘাটি ও মেজিয়া ব্লকে। প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। রাস্তা, সেতু ভেঙে বহু গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জোড়ের জলে প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনার রাস্তা ভেসে যাওয়ায় বাঁকুড়া ২ ব্লকের কাঁটাবনি, চামকড়া, ভিরকুডাংয়ের মতো কয়েকটি গ্রাম মানকানালী থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জোড়ের বালি বেশ কয়েক বিঘা জমি ঢেকে দিয়েছে।
কাঁটাবনির বাসিন্দা অরুণ বাউরি কিছু দিন আগে হাঁপানিকে কষ্ট পাচ্ছিলেন। তাঁর ছেলে লালচাঁদ বলেন, ‘‘রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় কোনও গাড়িই বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। সেখানে নিয়ে যেতে পারলে হয়তো চিকিৎসাটুকু দিতে পারতাম। কিন্তু, রাস্তা না থাকায় বাড়িতেই বিনা চিকিৎসায় মরতে হল বাবাকে।”
বাঁকুড়া ২ ব্লকের এক আধিকারিক বলেন, “পঞ্চায়েতের তহবিল থেকে আপাতত মোরামের রাস্তা গড়া যায়। কিন্তু বোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে।” বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) নবকুমার বর্মনের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘ওই রাস্তাটি নতুন করে তৈরির জন্য জেলা পরিষদ টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।’’ বিদায়ী সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী ও বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস আশ্বাস দিয়েছেন।
পঞ্চায়েতের এই পরিস্থিতিতে একশো দিন, মিশন নির্মল বাংলার মতো বহু প্রকল্পের কাজের গতিও ধাক্কা খেতে পারে। জেলাশাসক অবশ্য বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারীরা পদক্ষেপ করতে পারেন। সেই নিয়ম রয়েছে। ফলে তেমন ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না।’’
এই পরিস্থিতির জন্য সিপিএম ও বিজেপি একযোগে রাজ্য সরকারকেই দায়ী করছে। বিজেপির রাজ্য নেতা সুভাষ সরকার বলেন, “জোর করে ক্ষমতা দখল করতে গিয়েই এই বিপদ ডেকে এনেছে তৃণমূল সরকার।” সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “সুষ্ঠ ভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন হলে এমন পরিস্থিতি কখনওই আসত না।” বিরোধীদের সমালোচনাকে উড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খানের পাল্টা দাবি, “বিরোধীদের তো দোষারোপ করাই কাজ। রাজ্য সরকার পরিষেবা সচল রাখতে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy