Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

মঞ্চ গড়েও রোখা যাচ্ছে না দূষণ

সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব। এলাকার বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার কথা উঠে আসে। সঞ্চালনায় ছিলেন শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল। সেখান থেকে রইল বাছাই কিছু প্রশ্নোত্তর।সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব। এলাকার বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার কথা উঠে আসে।

সরবড়ি থেকে পাঞ্চেত যাওয়ার রাস্তার পাশে পঞ্চকোট পাহাড়ের কাছে স্পঞ্জ আয়রন কারখানার ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। —পৌলমী চক্রবর্তী।

সরবড়ি থেকে পাঞ্চেত যাওয়ার রাস্তার পাশে পঞ্চকোট পাহাড়ের কাছে স্পঞ্জ আয়রন কারখানার ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। —পৌলমী চক্রবর্তী।

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৫
Share: Save:

এলাকার অনেক প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে জল ও পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। কেলিয়াসূতা প্রাথমিক স্কুলে পাঁচিল নেই। পাথরডি ও আসনমণি প্রাথমিক স্কুলে জলের সমস্যা থাকায় শৌচলায় তৈরি হলেও ব্যবহার করা যায় না। লালপুর রমণীবাবা হাইস্কুলে পর্যাপ্ত ক্লাসঘর নেই। পঞ্চায়েত সমিতির এই ব্যাপারে কিছু করতে পারে না?

শিবপ্রসাদ মণ্ডল, হরিডি

সভাপতি: এই কাজ পঞ্চায়েত সমিতি একা করতে পারে না। তবে আমরা চেষ্টা করে চলেছি। সর্বশিক্ষা মিশন থেকে অর্থ বরাদ্দ করে কেলিয়াসূতা প্রাথমিক স্কুলে পাঁচিল তৈরির ব্যবস্থা হচ্ছে। পাথরডি গ্রামে আগে পিএইচই জল সরবারহ করত। স্কুলের ব্যাপারে দফতরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। রমণীবালা হাইস্কুলের সমস্যা নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই দফতর থেকে অর্থ বরাদ্দ করিয়ে ক্লাসঘর তৈরি করা হবে।

বিবেকানন্দ মোড় থেকে ভামুরিয়া গ্রামের নদীঘাট পর্যন্ত রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। কিন্তু কাজ হয়নি। ওই রাস্তা দিয়ে ভামুরিয়া, হীরাকুন, আলকুশা ও আসনমণি গ্রামের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। রাস্তার পাশেই ভামুরিয়া হাইস্কুল। রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বেশ কয়েকবার পথ অবরোধ পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। উল্টে স্কুলের সময়ে বালির গাড়ির উৎপাতে সমস্যা আরও বেড়েছে।

জিতেন মাজি, ভামুরিয়া

সভাপতি: ভামুরিয়ার ওই রাস্তাটির বিষয়ে ইতিমধ্যেই ইসিএল-এর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের আবেদনের ভিত্তিতে সিএসআর প্রকল্প থেকে ইসিএল কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি ঢালাই করার জন্য ৪৯লক্ষ টাকা বরাদ্দ করছে। টাকা পেলেই কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। আর স্কুলের সময়ে ওই রাস্তা দিয়ে বালি পরিবহণ বন্ধ করার জন্য পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গড়পঞ্চকোট পাহাড় ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু পরিকাঠামোর আরও উন্নয়ন প্রয়োজন। এ ছাড়াও পাহাড়ে পিকনিক করতে এসে অনেকে প্লাস্টিকের থালা, গ্লাস, বোতল ফেলে যায়। দূষণ ছড়ায়। পঞ্চায়েত সমিতি এই সমস্ত ব্যাপারে কী ভাবছে?

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সড়বড়ি

সভাপতি: গড়পঞ্চোকোটকে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম পর্যটনস্থল হিসাবে তুলে ধরতে চাইছি আমরা। এই বিষয়ে মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি মন্দিরক্ষেত্র এলাকায় জলের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে কমিউনিটি শৌচালয় তৈরি করা হবে। ঠিক হয়েছে, পঞ্চকোটকে প্লাস্টিকমুক্ত এলাকা করা হবে। পিকনিক করতে আসা লোকজনের থেকে থার্মোকল বা প্লাস্টিকের থালাবাটি নিয়ে স্বনির্ভর দলগুলি শালপাতার থালাবাটি দেবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য স্থানীয় বাসিন্দা ও ধারা উন্নয়ন সমিতিকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হচ্ছে।

এলাকায় জলপ্রকল্প থাকলেও নিতুড়িয়া-সহ অন্তত পাঁচটি গ্রাম জল পায় না। দামোদর থেকে উত্তোলনের পরে রিজার্ভারে পোঁছানোর আগেই অর্ধেক জল চুরি হয়ে যায়। এই ঘটনা রুখতে পঞ্চায়েত সমিতি কী করছে?

তরণী চক্রবর্তী, নিতুড়িয়া

সভাপতি: সড়বড়ি জলপ্রকল্পে জলচুরি দীর্ঘদিনের সমস্যা। আমরা পিএইচই-র সঙ্গে আলোচনা করেছি। অবৈধ ভাবে জলের সংযোগ যাঁরা নিয়েছেন তাঁদের একটি তালিকা আমাদের দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে তালিকাটি নিয়ে আলোচনা করব। স্থির হয়েছে, যাঁরা অবৈধ ভাবে জলের সংযোগ নিয়েছেন, তাঁদের নোটিস দিয়ে পঞ্চায়েত সমিতিতে ডেকে পাঠানো হবে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওযা হবে।

স্পঞ্জ আয়রন কারখানার দূষণ নিতুড়িয়া ব্লকের চারটি পঞ্চায়েতের অন্যতম সমস্যা। এলাকায় দূষণ প্রতিরোধ মঞ্চ গড়ে আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু তার পরেও অনেক কারখানা দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র চালাচ্ছে না। দূষিত ধোঁওয়া বেরোচ্ছে। আজকাল আবার কারখানা থেকে জনবহুল রাস্তার পাশে ছাই ফেলা হচ্ছে। এই বিষয়ে কিছু করা যায় না?

নবনী চক্রবর্তী, নিতুড়িয়া

সভাপতি: স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলি বামফ্রন্ট আমলে শুরু হয়েছিল। এখন সেখানে কয়েক হাজার লোক কাজ করেন। ফলে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে আমরা কারখানাগুলি বন্ধ করতে পারি না। কিন্তু দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ পেলেই কারখানা কর্তৃপক্ষকে ডেকে সতর্ক করা হয়। ফলে এখন অনেকেই দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র চালাচ্ছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এর পরে কোনও কারখানার বিরুদ্ধে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ পেলেই পঞ্চায়েত সমিতির তরফে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে জানানো হবে। পাশাপাশি পরিবেশ দফতরেও অভিযোগ জানানো হবে। ছাই ফেলার কয়েকটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করেছি। ছাই মাটি চাপা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গোবাগে কৃষক বাজার তৈরি হলেও পুরোদমে শুরু হয়নি। এই ব্যাপারে পঞ্চায়েত সমিতি কি উদ্যোগী হচ্ছে?

পিন্টু মণ্ডল, গোবাগ

সভাপতি: আমরা চেষ্টা করছি। তবে কিছু সমস্যা আছে। গোবাগের পাশেই রামকানালিতে অনেক পুরনো দৈনিক বাজার রয়েছে। নিতুড়িয়া থানা এলাকায় পড়ে না বলে আমরা সেটিকে কৃষক বাজারে আনতে পারছি না। অন্য এলাকার কিছু বিক্রেতাকে কৃষক বাজারে আনা হয়েছে, কিন্তু ক্রেতারা খুব একটা যাচ্ছেন না। সবাই মিলে আলোচনায় বসে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

গোবাগ ব্লক সদর। বেশ কয়েকটি দফতর আর স্কুলও রয়েছে। কিন্তু যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের অভাবে সদরে আসা মানুষজনকে খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়। পুরনো প্রতীক্ষালয়টি জীর্ণ। দূরে নতুন যেটি তৈরি হয়েছে, সেখানে বাস থামে না। সমস্যাটি কি পঞ্চায়েত সমিতির নজরে আছে?

সত্যজিৎ মণ্ডল, গোবাগ

সভাপতি: গোবাগ মোড়েই নতুন যাত্রী প্রতীক্ষালয়টি তৈরির কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু জমির অভাবে করা যায়নি। নতুন প্রতীক্ষালয়ের সামনে বাস দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু মোড় থেকে দূরে বলে যাত্রীরাই সেখানে যান না। আমরা মোড়ে জমির সন্ধানে আছি। পেলে প্রতীক্ষালয় তৈরি করা হবে।

পারবেলিয়াতে বাস ও অটো মিলে দৈনিক গোটা পঞ্চাশেক গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক বাস সেখান থেকেই ছাড়ে। কিন্তু পুরোদস্তুর বাসস্ট্যান্ড বলতে যা বোঝায়, সেটা এই এলাকায় এখনও তৈরি হয়নি। শৌচালয়, পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। এমনকী যাত্রী প্রতীক্ষালয় দখল করে দোকান চলছে। এই বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতি কি কিছু করার কথা ভাবছে?

উজ্জ্বল রজক, হিজুলি

সভাপতি: পারবেলিয়াতে স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সমস্যা সেই জমি। এখন যেখানে বাস দাঁড়ায় সেটি ইসিএল-এর জমি। আমরা সেখান থেকে দু’শো মিটার দূরে সরকারি জায়গায় নতুন বাসস্ট্যান্ড করার পরিকল্পনা নিয়েছি। কিন্তু সেই কাজ পঞ্চায়েত সমিতির একার পক্ষে সম্ভব নয়। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। টাকা পাওয়া গেলেই কাজ শুরু হবে।

ভালডুবি থেকে বাথানবাড়ি পর্যন্ত প্রায় তেরো কিলোমিটার রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। ওই রাস্তা দিয়েই রায়বাঁধ ও গুনিয়াড়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। ঝাড়খণ্ডের যেতে হলে দামোদরের বাথানবাড়ি নদীঘাট হয়ে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রেও ওই রাস্তাটিই ভরসা। সংস্কারের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও কাজ হয়নি। পঞ্চায়েত সমিতি কি কিছু করার কথা ভাবছে?

চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, রায়বাঁধ

সভাপতি: রায়বাঁধ এলাকার ওই রাস্তাটি আমূল সংস্কার করা দরকার। প্রয়োজনে নতুন করে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা পঞ্চায়েত সমিতি ইতিমধ্যেই নিয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত প্রোজেক্ট রিপোর্ট ও আনুমানিক ব্যয় হিসাব করা হয়েছে। কমবেশি আড়াই কোটি টাকা খরচ হবে। আগামী আর্থিক বছরে কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে আশা করছি।

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Air Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy