সজাগ: ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা জয়পুর ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে চলছে পুলিশের টহল। নিজস্ব চিত্র
গুলিতে দু’জনের মৃত্যু ও একাধিক জায়গায় গোলমালের পরে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল পুরুলিয়া জেলার বহু পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন। এ বার তাই আগাম সতর্ক হয়েই আজ, বুধবার থেকে সেই সব পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে চলেছে প্রশাসন।
প্রতিটি এলাকাতেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এমনকি, আশপাশের জেলা থেকেও পুলিশ বাহিনী নিয়ে আসা হয়েছে পুরুলিয়ায়। সংশ্লিষ্ট এলাকায় পুলিশের টহলও শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে গ্রামে-গ্রামে গিয়ে পুলিশ বহিরাগতদের সম্পর্কে খোঁজখবরও নিচ্ছে।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া মঙ্গলবার বলেন, ‘‘যে সব এলাকায় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হবে, সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথাও যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেই বিষয়ে পুলিশ সর্তক আছে।”
আজ, বুধবার প্রথম দফায় ছ’টি থানার ১৯টি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করার কথা। তার মধ্যে হুড়া বাদ দিয়ে বান্দোয়ান, বলরামপুর, জয়পুর, পাড়া, রঘুনাথপুর থানা ঝাড়খন্ড ঘেঁষা। কিছু দিন আগে জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়খণ্ড থেকে দুষ্কতীরা এসে গোলমাল পাকাচ্ছে বলে সতর্ক করে গিয়েছিলেন। তাই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের কিছু দিন আগে থেকেই ওই সব এলাকায় বাড়তি বাহিনী পাঠিয়ে টহল শুরু করা হয়েছে। চলছে নাকা তল্লাশিও।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ঝাড়খণ্ড সীমানায় এরিয়া ডোমিনেশন থেকে শুরু করে এলআরপি ও কর্ডন অ্যান্ড সার্চ অপারেশন (ক্যাসো) শুরু হয়েছে। কোনও রকম ঝুঁকি রাখা হচ্ছে না। সূত্রের খবর, পুরুলিয়া পুলিশ লাইন ও ভিন জেলা থেকে তিনশোর বেশি পুলিশকে বোর্ড গঠনের সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই সব জায়গায় পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পুরুলিয়া পুলিশ লাইনে তৈরি রাখা হচ্ছে জলকামানও।
জয়পুরের ঘাঘরা পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনকে ঘিরে গুলিতে দু’জনের মৃত্যু ও বিভিন্ন জায়গায় বোমা, গুলি চলার পর উত্তেজনাপ্রবণ পঞ্চায়েত ও সমিতিগুলি চিহ্নিত করে সেখানে বোর্ড গঠন স্থগিত করে দিয়েছিল প্রশাসন। অবশেষে ডিসেম্বরের গোড়ায় জেলার ১৪টি ব্লকের ৪৪টি পঞ্চায়েত ও সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে ১২-১৪ ডিসেম্বর বোর্ড গঠনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেন জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়। যদিও আইন-শৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি এখনও আশানুরূপ না হওয়ার কারণ দেখিয়ে বলরামপুর ও জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠন এ পর্বে স্থগিত রেখেছে প্রশাসন।
ঘটনা হল, বুধবার যে ১৯টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হওয়ার কথা, তার প্রায় অর্ধেক পঞ্চায়েতই এখন ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে। বেশ কয়েকটিতে শাসকদল তৃণমূলকে আটকাতে হাত ধরার কথা জানিয়েছেন বিজেপি, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের স্থানীয় নেতৃত্ব। বাকি অর্ধেক পঞ্চায়েতে সে সমস্যা নেই। সেখানে হয় বিজেপি, না হয় তৃণমূল— এই দু’টি দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে রয়েছে।
পুলিশ ও প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতগুলিই। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘ত্রিশঙ্কু থাকা পঞ্চায়েতগুলিতে সব পক্ষেরই মরিয়া হয়ে ওঠা স্বাভাবিক। আর তাতেই ফের গন্ডগোলের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।” প্রশাসনের আশঙ্কা, ওই পঞ্চায়েত ভবনগুলির সামনে সব দলই কর্মী-সমর্থকদের জমায়েত করতে চাইবে। জয়পুরের ঘাঘরা পঞ্চায়েতও ত্রিশঙ্কু ছিল। সেখানে দু’দলেরই প্রচুর কর্মী-সমর্থক পঞ্চায়েত ভবনের কাছে জমায়েত করেছিলেন। তারপরেই উত্তেজনা ছড়ায়।
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, যে সমস্ত পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হচ্ছে, আগের মতোই এ বারও বুধবার সকাল থেকেই সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হবে। পঞ্চায়েত ভবনের কাছাকাছি এলাকায় জমায়েত যাতে না হয়, সে দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকেই এ ব্যাপারে সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকায় মাইকে প্রচার করা হয়েছে।
বোর্ড গঠনে পুলিশ আগের থেকে এ বার যথেষ্ট কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে জেনেও নিশ্চিন্ত নয় বিরোধী দলগুলি। তাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতগুলি শাসকদলকে পাইয়ে দিতে পুলিশ-প্রশাসন চেষ্টা করবেই। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘কর্মীরা সংযতই। পুলিশ, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। তা না হলে কিন্তু মানুষ প্রতিরোধ করবেই।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর পাল্টা দাবি, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন নিরপেক্ষই রয়েছে। বিজেপির যা অবস্থা, তারা বোর্ড গড়লেও পরে তৃণমূলেই চলে আসবে। আমাদের কর্মীরা কেন গোলমাল করবেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy