মাটিতে হাতির পায়ের ছাপ। ছবি: শুভ্র মিত্র
কুয়াশাঘেরা ভোরে বাড়ি লাগোয়া বাঁশবাগানে যে হাতি এসে দাঁড়িয়েছে, ঠাহর করতে পারেননি বৃদ্ধ অশোক সর্দার (৬০)। সেখানেই তিনি শৌচকর্ম করতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ তাঁর চিৎকারে পড়শি ও বাড়ির লোকেরা গিয়ে দেখেন, তিনি মাটিতে পড়ে। পাশে পড়ে হাতির পায়ের ছাপ। হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। শনিবার বিষ্ণুপুর ব্লকের চিতরং গ্রামে হাতির হানায় ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনায় ফিরে এসেছে আতঙ্ক।
এক সময়ে দলমা থেকে দলে দলে হাতি বাঁকুড়া জেলায় এসে ছড়িয়ে পড়ত জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে। সেই সময়ে অশোকবাবুর মতো ভোরে শৌচকর্মে গিয়ে হাতির হানায় মৃত্যুও ঘটেছে অনেক। তবে গত কয়েক বছরে ছবিটা কিছুটা পাল্টে ছিল। দলমা থেকে হাতি আসা অনেকটাই কমে গিয়েছে। হাতির হানায় মৃত্যুতেও রাশ পড়েছে। তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছিলেন জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা।
ডিএফও (বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত) নীলরতন পান্ডা বলেন, ‘‘ওই হাতিটি রেসিডেন্সিয়াল। হাতিটি প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম মেদিনীপুরের হুমগড় রেঞ্জের হদহদির জঙ্গলে ছিল। আমলাগোড়া, গড়বেতা রেঞ্জ পেরিয়ে বাঁকুড়ায় ঢুকেছে। সাধারণত এক রাতে হাতি এতটা পথ হাঁটে না। গভীর রাতে অতর্কিতে চলে এসেছে।’’ তিনি জানান, হাতিটি শনিবার দিনভর বাঁকাদহ রেঞ্জের দুন্দুর জঙ্গলে রয়েছে। ‘এলিফ্যান্ট স্কোয়াড’-এর লোকজন নজরে রেখেছে। সতর্কতা হিসাবে জঙ্গল লাগোয়া মড়ার, বাসুদেবপুর, পানশিউলি, লোটিহিড়, মোলকারি, তসরা, ঘঘরা, গোঁসাইপুর গ্রামে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে।
তবে এই ঘটনায় বিষ্ণুপুরের জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় নতুন করে হাতির আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এডিএফও (পাঞ্চেত) অনুপম খান বলেন, ‘‘শেষ তিনটি আর্থিক বছরে আমাদের ডিভিশনে এই ঘটনাকে ধরে দু’জনের হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে একটি গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বিষ্ণুপুর ব্লকের বাঁকাদহ রেঞ্জেরই আস্থাশোল গ্রামে।’’ তিনি জানান, দলমার এক দল হাতি রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় রেঞ্জে। আপাতত তাদের এ দিকে আসার সম্ভাবনা বিশেষ নেই।
তিন ছেলে ও পুত্রবধূদের নিয়ে অশোকবাবুর সংসার। তাঁর বড় ছেলে তিলক সর্দার বলেন, ‘‘রোজকার মতোই বাবা বাঁশঝাড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এমন কাণ্ড যে ঘটবে ভাবিনি। বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচাতে পারলাম না।’’ ডিএফও জানান, নিয়ম মেনে মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
বাসিন্দাদের দাবি, চিতরং গ্রামেও আগে হাতি হানা দিয়েছে। তাই তাঁরা গ্রামে হাতি ঢোকা ঠেকাতে বিদ্যুৎচালিত তার লাগানোর দাবি তুলেছেন। বাঁকাদহ পঞ্চায়েতের প্রধান বাসন্তী ঠাকুর বলেন, একশো দিনের প্রকল্পে চিতরং গ্রামে হাতি ঠেকাতে বড় নালা খোঁড়া হচ্ছে।
এ দিকে, সারেঙ্গার জঙ্গলে বড়সড় একটি হাতির দল থেকে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন বন-কর্তারা। বৃহস্পতিবার রাতে ঝাড়গ্রামের রামগড় রেঞ্জ থেকে সারেঙ্গায় ঢুকে হাতির দলটি বেলেপাল, মাকড়কোল প্রভৃতি এলাকায় আলু, সর্ষে, কলাবাগান নষ্ট করে। সেই রাতে ফের রামগড়ে ফিরে গেলেও বন দফতর জানাচ্ছে, শুক্রবার রাতে দলটি ঝাড়গ্রামের সীমানায় সারেঙ্গার কাঁড়ভাঙার জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত সেখানেই রয়েছে তারা।
সারেঙ্গার রেঞ্জ অফিসার রাজীব লামা জানান, প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে ওই দলে ৩৫-৪০টি হাতি রয়েছে। দলটিকে গোয়ালতোড়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা।
তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয়েরা যাতে কোনও ভাবেই হাতির দলটিকে উত্তেজিত না করেন সে জন্য বনকর্মীরা বাসিন্দাদের সতর্ক করছেন।’’ ডিএফও (বাঁকুড়া দক্ষিণ) দেবাশিস মহিমা প্রধান বলেন, ‘‘হাতির দলটি ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়ার সীমানা লাগোয়া এলাকায় রয়েছে। বনকর্মীরা নজর রাখছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy