Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

দত্তকদের দেখতে গ্রামে কর্তারা

প্রশাসনের কর্তা, কর্মী এবং সাধারণ মানুষজনকে একটি করে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর স্বাস্থ্য দত্তক দেওয়া হয়েছিল তখন। প্রশাসন দেবে ওষুধ এবং পুষ্টিকর খাবার। তাঁদের দায়িত্ব, ওই শিশু এবং তাদের মায়েরা সেই সমস্ত ঠিকমতো খাচ্ছে কি না, সেই খোঁজ রাখা।

দেখভাল: ওজন কতটা বাড়ল? দেখছেন এসডিও। নিজস্ব চিত্র

দেখভাল: ওজন কতটা বাড়ল? দেখছেন এসডিও। নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২২
Share: Save:

স্বাস্থ্য দত্তক নিয়েছিলেন। মাস খানেকের মধ্যে তার কতটা উন্নতি হল সেটা নিজের চোখে দেখে গেলেন মানবাজারের প্রশাসনিক কর্তারা।

স্বাস্থ্য দত্তক ব্যাপারটা কী?

‘অগ্নিশ্বর’ ছায়াছবির ডাক্তার অগ্নিশ্বর মুখোপাধ্যায় অপুষ্টিতে ভোগা এক রোগিণীকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সে সমস্ত যোগা়ড় করার সামর্থ্য নেই বলেই না অপুষ্টি। অগত্যা পথ্যের বন্দোবস্ত করলেন ডাক্তার। কিন্তু তার পরেও স্বাস্থ্যের অবস্থা যে-কে-সেই। ডাক্তার খোঁজ নিয়ে দেখেন, নিজের জন্য বরাদ্দ দুধে ক্ষীর বানিয়ে স্বামীকে দেন রোগিণী। কর্তা আফিমের নেশা করেন। তাঁর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বধূ নিজেই এমন বন্দোবস্ত করেছেন।

বাস্তবেও অপুষ্টির সঙ্গে লড়াই এমনটাই বহুমুখী। অনেক সময়ে পরিবারের দারিদ্রের জন্য মায় এবং শিশু অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগে। আবার সঠিক পরিচর্যার অভাবেও শিশু পুষ্টি পায় না অনেক সময়ে। সব ক্ষেত্রেই শুধু পথ্য এবং ওষুধের বন্দোবস্ত করলেই হয় না। সেগুলি আদৌ খাওয়া হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত না করা ইস্তক স্বস্তি নেই। তাই ‘শিশু সঙ্গী প্রয়াস’ নামে একটি উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

গত ১৪ নভেম্বর, শিশুদিবসে মানবাজার থানার জিতুঝুড়ি গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু ও মায়েদের জমায়েত হয়েছিল। মানবাজার মহকুমা, ব্লক অফিস, স্বাস্থ্য দফতর ও আইসিডিএস-এর প্রশাসনিক কর্তা এবং কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের কর্তা, কর্মী এবং সাধারণ মানুষজনকে একটি করে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর স্বাস্থ্য দত্তক দেওয়া হয়েছিল তখন। প্রশাসন দেবে ওষুধ এবং পুষ্টিকর খাবার। তাঁদের দায়িত্ব, ওই শিশু এবং তাদের মায়েরা সেই সমস্ত ঠিকমতো খাচ্ছে কি না, সেই খোঁজ রাখা। এ ছাড়াও, অসুখ হলে চিকিৎসা করাবেন, নিয়মিত টিকাকরণের ব্যাপারে খোঁজ রাখবেন। শিশুর স্বাস্থ্য এবং ওজন ঠিক না হওয়া পর্যন্ত এই দায়িত্ব বহাল থাকবে। ওই সময়ে মহকুমাশাসক (মানবাজার) সঞ্জয় পাল জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারির মধ্যে আমরা মহকুমা এলাকায় অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা শূন্যতে নামিয়ে আনা তাঁদের লক্ষ্য।

জিতুঝুড়ি অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা আইসিডিএসের সুপারভাইজার মঞ্জুশ্রী সিংহ মহাপাত্র বলেন, ‘‘তিনটি রঙে ভাগ করে শিশুদের স্বাস্থ্যের গ্রাফ তৈরি হয়। সবুজ, হলুদ ও লাল রঙ দিয়ে স্বাভাবিক, মাঝারি ও অপুষ্ট শিশু বোঝানো হয়। লাল রঙের মধ্যে যে শিশুরা পড়ে, তাদের স্বাস্থ্য দত্তক দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এই এক মাসেও প্রশাসনের কর্তারা তাঁদের থেকে দত্তক নেওয়া শিশুদের খোঁজ নিয়েছেন। কোথাও কোনও অসুবিধা রয়েছে কি না, জানতে চেয়েছেন।

তার পরে, গত শুক্রবার এসডিও (মানবাজার) সঞ্জয় পাল, এসডিপিও আফজল আবরার, বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি সরকার, সিডিপিও অনুপ সাহা জিতুঝুড়ি, পারকিডি ও মৌজাডি গ্রামে যান। অনুপবাবু বলেন, ‘‘আমরা সবাই একটি করে শিশুর স্বাস্থ্য দত্তক নিয়েছি। শুক্রবার ওই শিশুদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।’’

গিয়ে কী দেখলেন প্রশাসনের কর্তারা?

মানবাজার ১ ব্লকের শিশু বিকাশ প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লক এলাকায় সদ্যোজাত থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ১৩ হাজারের কিছু বেশি। সিডিপিও জানান, ১৪ নভেম্বর মানবাজার ১ ব্লকে ১৪৯ জন অপুষ্ট শিশু ছিল। তা এখন কমে ১১৭ জনে দাড়িয়েছে। কিন্তু নবজাতকদের মধ্যে আরও ১০ জন অপুষ্টির শিকার হয়েছে। ফলে এখন অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যাটা ১২৭।

শুক্রবার বাড়ির উঠোনে প্রশাসনের কর্তাদের দেখে পারকিডি গ্রামের দম্পতি সৃষ্টিধর সিংহ সর্দার এবং তারামণি সিংহ সর্দার তো অবাক! তারামণি বলেন, ‘‘আমার যমজ ছেলে—সুদীপ আর শুভদীপ। শুভদীপের স্বাস্থ্য ভাল। কিন্তু সুদীপের ওজন কম রয়েছে। তাই এসডিও ওর স্বাস্থ্য দত্তক নিয়েছেন।’’ পারকিডি গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মীরা মাহাতো জানান, এই এক মাসে সুদীপের ওজন সামান্য বেড়েছে। এসডিপিও আফজল আবরার যান জিতুঝুড়ি গ্রামের শিশু শ্রুতি কর্মকারের বাড়িতে। বিডিও নীলাদ্রি সরকার গিয়েছিলেন পারকিডি গ্রামের শিশু বৃষ্টি সিংহ সর্দারকে দেখতে। অপুষ্ট শিশুদের জন্য তাঁরা ছাতু, ফল এবং উলের পোশাক নিয়ে গিয়েছিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Malnutrition Officials Weight
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE