Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Filariasis

ফি বছর ওষুধ খাইয়েও বাড়ছে ফাইলেরিয়া রোগী

প্রতি বছরই গণঔষধ সেবন কর্মসূচি শুরুর আগে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সমীক্ষা চালায়। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালে জেলায় ফাইলেরিয়া আক্রান্তের হার ছিল ০.৫৮ শতাংশ।

রঘুনাথপুর ২ ব্লকের একটি স্কুলে ফাইলেরিয়া প্রতিষেধক খাওয়ানো হল পড়ুয়াদের।

রঘুনাথপুর ২ ব্লকের একটি স্কুলে ফাইলেরিয়া প্রতিষেধক খাওয়ানো হল পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩০
Share: Save:

ফাইলেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যে গণঔষধ সেবন কর্মসূচি ফি বছরই হচ্ছে। তবু রোগাক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে পুরুলিয়ায়। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সমীক্ষাতেই উঠে এসেছে।

প্রতি বছরই গণঔষধ সেবন কর্মসূচি শুরুর আগে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সমীক্ষা চালায়। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালে জেলায় ফাইলেরিয়া আক্রান্তের হার ছিল ০.৫৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা বেড়ে ১.৪ শতাংশ হয়েছে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। যদিও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, সমীক্ষার এলাকা বাড়ানোয় গতবারের চেয়ে বেশি আক্রান্তের হদিশ মিলেছে।

গণঔষধ সেবন শুরুর আগে বিভিন্ন ব্লকে রাত্রিকালীন রক্তপরীক্ষা শিবিরও করে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, ফাইলেরিয়া মশাবাহিত রোগ। মূলত কিউলেক্স মশার মাধ্যমেই এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ে কিউলেক্স মশা অন্য কাউকে কামড়ালে তার শরীরে এই রোগের জীবাণু বাসা বাঁধে। ১০-১২ বছর ঘাপটি মেরে থাকার পরে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। রাত্রেই আক্রান্তের শরীরে এই রোগের জীবাণু সক্রিয় হয়। তাই রাত্রিকালীন শিবির থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে কোন এলাকায় ওষুধ খাওয়ানো হবে তা নির্ধারণ করা হয়। একটি এলাকার মোট জনসংখ্যার নিরিখে আক্রান্তের হার এক শতাংশের কম হলে সেই এলাকাকে এই কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়।

সেই নিরিখে গত বছর জেলার ১১টি ব্লক ও একটি পুরসভা এলাকায় চলতি বছরের মতোই ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে গণঔষধ সেবন কর্মসূচি হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ লক্ষ ২২ হাজারের কিছু বেশি। চলতি বছরে জেলার ১৬টি ব্লককে কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বাঘমুন্ডি, বরাবাজার, রঘুনাথপুর-১ ও বান্দোয়ান ব্লক আর তিন পুরসভাকে কর্মসূচি থেকে বাদ রাখা হয়েছে। এ বছর কমবেশি ২৩ লক্ষ মানুষকে ওষুধ খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সরকারি তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে ২০১৩ সালে লিম্ফোডেমা বা গোদ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫,৯৭৪। তার মধ্যে পুরুলিয়াতেই ১৩ হাজার মানুষ গোদে আক্রান্ত। আর জেলার রাত্রিকালীন রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুরুলিয়ায় ফাইলেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ হাজারেরও বেশি।

ফাইলেরিয়া রোগ দূরীকরণে পুরুলিয়ায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি গণ-ঔষধ সেবন কর্মসূচি শুরুর হয়। রাজ্যের এই প্রান্তিক জেলায় ২০০৪ সাল থেকে টানা এই কর্মসূচি হলেও কেন পুরুলিয়াকে ফাইলেরিয়া মুক্ত করা যাচ্ছে না, কেনই বা বাড়ছে আক্রান্তের হার, এই প্রশ্ন উঠেছে.

এ বার অবশ্য কর্মসূচির গোড়া থেকেই অত্যন্ত সতর্ক জেলা স্বাস্থ্য দফতর। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানুষজনকে ওষুধ খাওয়ানো চলবে জেলায়। এ কাজে যুক্ত রয়েছেন ৫২৮২জন প্রশিক্ষিত কর্মী। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ কর্তাদের পাশাপাশি ৫২৯জন সুপারভাইজ়ার কর্মসূচিতে নজরদারিও চালাচ্ছেন।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মতে, বিগত বছরগুলিতে গণঔষধ সেবনের ফলে ফাইলেরিয়ার জীবাণু সংক্রমণের হার কিছুটা কমেছে। তবে এই রোগ নির্মূল করতে হলে সবাইকে ওষুধ খেতে হবে। কিন্তু চলতি বছরে কেন বাড়ল আক্রান্তের সংখ্যা? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশোক বিশ্বাস বলেন, ‘‘এতদিন এই কর্মসূচি শুরুর আগে জেলার যেখানে আক্রান্তের হার বেশি সে রকম চারটি জায়গা এবং অন্য চারটি জায়গা সমীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া হত। সেই সমীক্ষার ভিত্তিতেই কোন এলাকায় ওষুধ খাওয়ানো হবে তা ঠিক করা হত। এবারের কর্মসূচী শুরুর আগে জেলার সর্বত্র রাত্রিকালীন রক্ত পরীক্ষা শিবির হয়েছে। স্বভাবতই রিপোর্টে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি দেখাচ্ছে।’’ এই রিপোর্টকে সামনে রেখেই এ বারের ওষুধ খাওয়ানোর কর্মসূচি চলছে বলে তিনি জানান। কোন বয়সী মানুষ কী মাত্রায় ওষুধ খাবেন স্বাস্থ্যকর্মীরাই তা বুঝিয়ে দেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Filariasis purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE