Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
চিকিৎসককে খুনের নালিশ
Murder

Murder: খোঁজ নেই ছেলে-স্বামীর, দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি সংগঠনের

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা জানান, গত সোমবার বিকেলে শেষ তাঁরা সুচিত্রাদেবীকে আবাসনে দেখে ছিলেন। তারপর থেকে তাঁকে দেখা যায়নি।

সুচিত্রার (ইনসেটে) আবাসনে তদন্তে পুলিশ।

সুচিত্রার (ইনসেটে) আবাসনে তদন্তে পুলিশ। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৪৭
Share: Save:

আবাসনের তালা বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে নিখোঁজ থাকা মহিলা চিকিৎসকের পচা-গলা দেহ উদ্ধারের ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করল পুলিশ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়ার বরাবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি আবাসন থেকে দেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে, বিএমওএইচ এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা দেহটি তাঁদের মহিলা চিকিৎসক সুচিত্রা সিং-এর (৩৮) বলে শনাক্ত করেন। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরে।

বিএমওএইচ রবীন সরেনের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করেছে বরাবাজার থানার পুলিশ। শনিবার দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পুরুলিয়া মেডিক্যালের মর্গে পাঠানো হয়।

এসডিপিও (মানবাজার) রাহুল পান্ডে বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা দেহটি মহিলা চিকিৎসকের বলে শনাক্ত করেছেন। অজ্ঞাত পরিচয়ের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ জানতে দেহের ময়না-তদন্ত করানো হচ্ছে। আশা করছি, শীঘ্রই ঘটনার কিনারা করা যাবে।’’

পুরুলিয়া মেডিক্যালের সুপার সুকোমল বিষয়ী বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তের জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গড়া হয়েছে, ভিডিয়ো রেকর্ডিং-ও করা হয়েছে।’’

তবে মৃত্যুর তদন্তে নেমে বেশ কিছু প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশকে। নিহত চিকিৎসকের সঙ্গে থাকা তাঁর চার বছরের ছেলের খোঁজ এখনও মেলেনি। তাঁর স্বামী শান্তনু পালেরও খোঁজ নেই। তিনি পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ।

তাঁদের খোঁজে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বরাবাজার থানার পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যা জানানোর পুরুলিয়া পুলিশকেই জানানো হবে।’’

আবাসনে শনিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, তদন্ত করছে পুলিশ। আবাসন থেকে চাদর, বালিশ উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, আবাসন থেকে সংগ্রহ করা আরও কিছু নমুনা ফরেন্সিক-তদন্তে পাঠানো হয়।

পুলিশ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে বরাবাজারে চিকিৎসা করছিলেন সুচিত্রাদেবী।

এলাকায় তাঁর পরিচিতও ভাল। বিয়ে হয়েছে বছর দশেক। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি আবাসনে চার বছরের ছেলেকে নিয়ে থাকতেন তিনি। তাঁর স্বামী মাঝেমধ্যে সেখানে আসতেন।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা জানান, গত সোমবার বিকেলে শেষ তাঁরা সুচিত্রাদেবীকে আবাসনে দেখে ছিলেন। তারপর থেকে তাঁকে দেখা যায়নি। তাঁদের ঘরের বাইরে দরজায় তালা দেখে অনেকে ভেবেছিলেন, বাইরে কোথাও গিয়েছেন।

কিছু রোগী শুক্রবার বিকেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আবাসনের কাছে ভিড় করেন। তাঁরা দুর্গন্ধ পেয়ে বিএমওএইচ-কে জানান।

পরে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বরাবাজার থানার পুলিশ। তালা ভেঙে আবাসনের ভিতরে ঢুকে পুলিশ দেখে, একটি ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে পচা-গলা দেহ।

তার উপরে একটি চাদর ঢাকা দেওয়া রয়েছে।

বরাবাজারের বিএমওএইচ বলেন, “রবিবার সুচিত্রার পরীক্ষা ছিল দুর্গাপুরে। সোমবার তাঁকে শেষ দেখা গিয়েছিল। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁর ‘ডিউটি’ ছিল। সে দিন সকালে একটি নম্বর থেকে তাঁর স্বামীর নাম করে এক ব্যক্তি ফোনে জানান, সুচিত্রার শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাঁকে নিয়ে তিনি মেদিনীপুরে চলে গিয়েছেন। সে দিনই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। আমরা নিশ্চিত ছিলাম, হয়তো তিনি তার বাড়ি গিয়েছেন। কিছু দিন পরে ফিরবেন। কিন্তু আবাসনের মধ্যেই তাঁর দেহ পড়ে রয়েছে বলে অনুমান করতে পারিনি।’’

মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে ময়না-তদন্ত করা এবং পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফির জন্য এ দিন পুরুলিয়া মেডিক্যালের সুপারের কাছে তাঁরা দাবি করেন বলে জানিয়েছেন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর পুরুলিয়ার মুখপাত্র অজিত মুর্মু।

ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ও উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবিতে ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা-সহ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেয় ‘সার্ভিস ডক্টরর্স ফোরাম’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা কোন জায়গায় পৌঁছেছে।’’

সুচিত্রাদেবীর বাপের বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে শুক্রবার রাতেই যোগাযোগ করে বরাবাজার থানার পুলিশ। তাঁর স্বামীকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এ দিন বরাবাজার থানায় যান সুচিত্রাদেবীর বড় দাদা ও মেজো দিদি।

মেজো দিদি সুলেখা সিং বলেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন আগে বোনের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল, কিন্তু কোনও সমস্যার কথা সে জানায়নি। কিছু দিন আগে ওদের স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই ফোন করেছিলাম। ফোনগুলো বেজে গেলেও ওরা না ধরায় ভেবেছিলাম, ব্যস্ত বলে ধরতে পারছে না। কিন্তু এমনটা ঘটে যাবে, আঁচ করতে পারিনি। যাই ঘটুক, সত্য উদ্ঘাটন হোক। যে বা যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করুক পুলিশ।’’

সুচিত্রাদেবীর স্বামীকে এ দিন ফোনে পাওয়া যায়নি। মেসেজেরও জবাব মেলেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy