মহম্মদবাজারের ডেউচা পাঁচামির চাঁদা মৌজা এলাকায় এই গাছ সরিয়েই প্রথম শিল্পের কাজ শুরু হবে। ১৮ জানুয়ারি ২০২৫। ছবি: পাপাই বাগদি।
গাছেদের পুনর্বাসন! এই শব্দবন্ধ তেমন পরিচিত না হলেও মহম্মদবাজারের প্রস্তাবিত খনি এলাকায় সেই ঘটনাই ঘটতে চলেছে। ওই জায়গায় থাকা গাছগুলি কেটে নষ্ট না করে সেগুলিকে অন্যত্র প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্তই নিয়েছে প্রশাসন। উদ্দেশ্য, যাতে এলাকায় বসবাসকারীদের স্বার্থরক্ষার সঙ্গে পরিবেশরক্ষার বার্তাও দেওয়া যায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ কাজে দক্ষ এমন সংস্থার সন্ধান পেতে সরকারি নিয়মের মধ্যে সর্বভারতীয় দরপত্র ডাকা হয়েছিল। সব দিক খতিয়ে দেখে একাজে অভিজ্ঞ আইআইটি খড়গপুর অনুমোদিত একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে শুধু সংস্থার উপরেই নয়, ৩০-৪০ বছরের পুরনো গাছ তুলে অন্যত্র লাগানো এবং সেগুলিকে বাঁচিয়ে রাখায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত দুই সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটি থাকছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেউচা–পাঁচামির প্রস্তাবিত কয়লা খনির কাজে হাত পড়তে চলেছে চাঁদা মৌজায়। দিন কয়েক আগে মুখ্যসচিব এসে জানিয়েছিলেন প্রথম পর্যায়ের খনি এলাকায় কাজ শুরু করতে প্রথম ধাপে ৩২৬ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে প্রথমে পাথর উত্তোলনের কাজ হবে। আগামী ১৫ -২০ দিনের মধ্যে কার্যত ‘মাঠে নেমে’ কাজ শুরু হয়ে যাবে। জানা গিয়েছে, চিহ্নিত ওই এলাকাতেই রয়েছে ৯৮০টি গাছ। তার মধ্যে ৮০০-র বেশি মহুয়া। রয়েছে শাল ও অর্জুন গাছ। সেই গাছগুলিকেই স্থানান্তর বা পুনর্বাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পরিবেশের ভারসাম্য রাখতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানাচ্ছেন জেলাশাসক বিধান রায়। তিনি বলেন, ‘‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। তার সাথে সঙ্গতি রেখে এই সিদ্ধান্ত।’’ প্রস্তাবিত খনি এলাকায় প্রশাসন পাঁচ গুণ গাছ লাগিয়েছে বলে জানান জেলাশাসক। তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু বড় বড় গাছ ওখানে রয়েছে, চাওয়া ছিল সেগুলিকে ‘ট্রান্সলোকেট’ করা যায় কি না। আমরা আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদন সাড়া দিয়েছে, রাজ্য সরকার। দরপত্র চূড়ান্ত। দ্রুত কাজ শুরু হবে।’’
তবে কাজে হাত পড়লেও সব দিক বেঁধে এবং চূড়ান্ত সতর্ক হয়েই এ কাজ করতে চাইছে প্রশাসন। জানা গিয়েছে, সংস্থার সঙ্গে শর্ত, ৮০ শতাংশ গাছ বাঁচানোর। সংস্থার কাজে নজরদারি করার জন্য প্রশাসনের তরফে যে উপদেষ্টা কমিটি তৈরি হয়েছে তাতে বীরভূমের ডিএফও, উপ-অধিকর্তা উদ্যানপালন-সহ প্রশাসনের কর্তারা থাকছেন। সেই সঙ্গে দুই বিশেষজ্ঞেরও সাহায্য নিচ্ছে প্রশাসন। তাঁদের একজন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক এবং ইন্টারন্যাশনাল হর্টিকালচার সোসাইটির চেয়ারম্যান এস কে মিত্র।
অন্য জন হলেন গাছ পুনর্বাসনে বিশেষজ্ঞ হায়দরাবাদের বাসিন্দা রামচন্দ্র আপ্পারি। তিনি এখনও পর্যন্ত লাখখানের গাছের পুনর্বাসনের কাজ করেছেন। আমদাবাদ, পুণে, মুম্বই ও দিল্লিতে মেট্রোর কাজের সময়ও সেখানে গাছগুলি সরানোর সময় রামচন্দ্র আপ্পারি কাজ করেছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইছে প্রশাসন। গাছ সরানোর আগে যেখানে গাছগুলি রয়েছে সেখানকার এবং যেখানে সরানো হবে সেই দু’টি জায়গায় মাটি পরীক্ষা করা হবে। গাছ সরানোর আগে জলের ব্যবস্থাও করা হবে। তবে গাছগুলি কোথায় সরানো হবে সেটা চূড়ান্ত হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy