বাঁকুড়া মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে ঢোকার পথ। নিজস্ব চিত্র
মূল দরজায় দাঁড়িয়ে কিছু পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার। বাড়ানো হয়নি নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী। এখনও চত্বরে বসানো হয়নি সিসিটিভি ক্যামেরা। বহিরাগতদের প্রবেশ রুখতে নিয়োগ হয়নি ‘ট্রলিবয়’-ও। কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত রোগীর আত্মীয়দের হাতে জুনিয়র ডাক্তার প্রহৃত হওয়ার জেরে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিরাপত্তা বাড়ানো নিয়ে একগুচ্ছ প্রস্তাব নেওয়া হয়। যদিও তার অনেক কিছুই কার্যকর হয়নি। তা নিয়ে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে এখানকার ডাক্তারি পড়ুয়া ও কর্মরত ডাক্তারদের মধ্যে। তাঁদের প্রশ্ন, ওই সব ব্যবস্থা শুধু ডাক্তারদের নিরাপত্তার জন্যই নয়, রোগীদের স্বার্থেও প্রয়োজনীয়। তা হলে অবহেলা করা হচ্ছে কেন?
বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধানের বক্তব্য, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। স্বাস্থ্যভবনের কাছেও কিছু প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দাবিগুলি শীঘ্রই মেটানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব দিয়েই আমরা বিষয়টি দেখছি।’’ জুনের গোড়ায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই নিগ্রহের ঘটনাকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা আন্দোলনে নামেন। তার জেরে রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হয়। টানা কয়েকদিন বন্ধ থাকে আউটডোর পরিষেবা। শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে কাজে যোগ দেন আন্দোলনকারীরা। সরকার আশ্বাস দেয়, হাসপাতালগুলির সমস্যা সমাধান করা হবে। সে জন্য বড় হাসপাতালগুলি থেকে প্রস্তাব চেয়ে পাঠানো হয়।
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ ও জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস এবং পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও। বেশ কিছু প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানোও হয়। কিন্তু ঘটনার পরে দেড় মাস পার হলেও কেন সব প্রস্তাব কার্যকর হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এখানে ইন্ডোর ওয়ার্ডগুলিতে মোট বেড রয়েছে ১৪০০-র বেশি। আউটডোরে গড়ে দৈনিক ৬০০০ রোগী আসেন। রোগীদের সঙ্গে আসা লোকজনের সংখ্যাও কয়েক হাজার। ডাক্তারদের একাংশ জানাচ্ছেন, এত ভিড় সামলানোর জন্য তাঁরা বারবার নিরাপত্তা কর্মী বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু, এখানে বর্তমানে সাকুল্যে ৬৮ জন নিরাপত্তা কর্মী রয়েছেন। তাঁরা তিনটি সিফটে কাজ করেন। ফলে হাসপাতালের ভিতরেও সবসময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী দেওয়া যায় না। হাসপাতালের তরফে স্বাস্থ্যভবনে বারবার নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর আর্জি জানানো হলেও তা পাওয়া যায়নি। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পরে নতুন করে আরও ১০০ জন নিরাপত্তা কর্মী চাওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে রোগীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘ট্রলিবয়’ নেই। জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের দাবি, রোগীদের ট্রলি বয়ে দেওয়ার নাম করে এক দিকে যেমন দালাল চক্র চলছে, অন্যদিকে এই অছিলায় অনধিকার প্রবেশও ঘটে যাচ্ছে হাসপাতালের ভিতর। সূত্রের খবর, সম্প্রতি স্বাস্থ্যভবনের কাছে অন্তত ৩০ জন ট্রলিবয় নিয়োগের দাবি তুলেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে হাসপাতাল চত্বরে আরও পুলিশ কর্মী মোতায়েন, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোরও দাবি জানানো হয়।
বাস্তবে কী হয়েছে? জুনিয়র ডাক্তারেরা জানাচ্ছেন, আন্দোলন তুলে নেওয়ার পরে সপ্তাহ খানেক হাসপাতাল চত্বরে পুলিশের সক্রিয়তা বেড়েছিল। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে, ততই পুলিশ কর্মীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।” যদিও জেলা পুলিশ সুপারের দাবি, ‘‘বাঁকুড়া মেডিক্যালে পর্যাপ্ত সংখ্যায় পুলিশ রয়েছে। দরকার পড়লে আরও পুলিশ পাঠাব।’’
তবে হাসপাতালের ভিতরে সিসিটিভি থাকলেও, চত্বরে কবে বসানো হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। জেলাশাসক বলেন, “হাসপাতালের তরফেই চত্বরে সিসিটিভি বসানোর পরিকল্পনা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরকে জানানোর কথা।” যদিও বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধানের দাবি, “বছর দুয়েক আগে পুলিশের তরফেই হাসপাতাল চত্বরে সিসিটিভি বসানোর জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইন্ডোরে সিসিটিভি বসিয়েছে। কিন্তু বাইরে পুলিশ সিসিটিভি বসাবে ভেবেই আমরা এখনও কিছু করিনি। এ নিয়ে শীঘ্রই পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।” পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই সিসিটিভি বসানোর কথা।’’
চাপানউতর কাটিয়ে কবে পাকাপোক্ত হবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অপেক্ষায় জুনিয়র ডাক্তারেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy