Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

ভাতাপ্রাপক নিয়ে বিতর্ক, কড়া প্রশাসন

সূত্রের খবর, তালিকা থেকে কিছু নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা শুরু হওয়ায় বিপত্তি দেখা দিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রশান্ত পাল
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৫৭
Share: Save:

ভাতা প্রাপকদের নামের তালিকায় নতুন করে নাম সংযোজন বা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও রকম প্রভাব খাটানো বরদাস্ত করা হবে না বলে বিডিও এবং পঞ্চায়েতের নোডাল অফিসারদের স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার বিডিও এবং পঞ্চায়েতের নোডাল অফিসারদের বৈঠকে ডেকে এ কথা স্পষ্ট করে দেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘ভাতা চেয়ে ২০ হাজার আবেদনকারীর নাম নবান্নে পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকা থেকে কারা যোগ্য তা তদন্ত করতে প্রতিটি ব্লককে জানানো হয়। কিন্তু তারপরেও কিছু কিছু ব্লকে নতুন করে নাম ঢোকানো বা বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কোনও ভাবেই করা যাবে না। এ নিয়ে দু’-দু’বার ব্লককে চিঠি দিয়েছি। আর সময় দেব না। যাঁদের নাম পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের নামই তালিকায় থাকবে। যদি কোনও নাম বাদ দেওয়া হয়, তাহলে কেন ওই আবেদনকারীর নাম বাদ দেওয়া হল, তা ব্লকের সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে ব্যাখ্যা দিয়ে সই করে পাঠাতে হবে।’’ জেলাশাসক জানান, দু’দিনের মধ্যে ব্লক থেকে উপভোক্তাদের নামের চূড়ান্ত তালিকা চাওয়া হয়েছে। কোনও নাম বাদ দিলে তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে শো-কজ করা হবে।

হঠাৎ এ ভাবে ঘোষণা করতে হল কেন? সূত্রের খবর, বিভিন্ন ভাতার উপভোক্তাদের মধ্যে কিছু নাম কোনও কোনও মহল থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে খবর যায়। গত শনিবার জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে বিষয়টি জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী অসন্তুষ্ট হন। তারপরেই জেলা প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে জেলার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে আদিবাসী ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা ও মানবিক প্রকল্পের ভাতার জন্য জমা পড়া ২০ হাজার আবেদন নবান্নে পাঠানো হয়। সমাজকল্যাণ দফতর ও আদিবাসী উন্নয়ন দফতর যৌথ ভাবে নামের তালিকা পাঠায়। রাজ্য থেকে তালিকা ধরে বিভিন্ন ব্লককে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। জানা গিয়েছে, ওই তালিকার ১৬ হাজারের কিছু বেশি নাম নিয়ে কোনও অসুবিধা না থাকলেও তিন হাজারের কিছু বেশি নাম নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আড়শা, বাঘমুণ্ডি, বলরামপুর, বান্দোয়ান, বরাবাজার, হুড়া, জয়পুর এবং পুরুলিয়া ১ ব্লকে এই ধরনের সমস্যা বেশি। বেশ কিছু ব্লক থেকে জানানো হয়েছে, অনেক আবেদনকারী ভাতা পাওয়ার যোগ্য নন। সে প্রেক্ষিতেই তাঁরা কেন যোগ্য নন, তা বিভিন্ন ব্লকের কাছে লিখিত ভাবে ব্যাখ্যা চেয়েছে জেলা প্রশাসন।

সূত্রের খবর, তালিকা থেকে কিছু নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা শুরু হওয়ায় বিপত্তি দেখা দিয়েছে। অভিযোগ, কোনও কোনও আবেদনকারীকে বিরোধী দলের সমর্থক বলে দেগে দিয়ে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার জন্য ব্লক প্রশাসনের উপরে চাপ আসছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী সমাজ কল্যাণ দফতরের আওতায় থাকা বিভিন্ন প্রকল্পের ভাতা সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে এই তথ্য সামনে আসে। তাঁর সচিবালয়ে পাঠানো নামের তালিকা থেকে কিছু নাম প্রভাব খাটিয়ে বা কোনও অজুহাতে ছেঁটে ফেলার চেষ্টা চলছে জেনে অসন্তুষ্ট হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি দ্রুত এই তালিকা কার্যকর করার নির্দেশ দেন বলে জানা গিয়েছে।

এ দিন বৈঠকে অসন্তুষ্ট জেলাশাসক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও যাঁদের জন্য এই কাজ আটকে রয়েছে, তাঁদের মূল্য চোকাতে হবে। এই ব্যাখ্যাই সরাসরি রাজ্যস্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলেও এ দিন তিনি আধিকারিকদের জানিয়ে দিয়েছেন।’’

এই নির্দেশকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের দাবি, ‘‘সরকারি কাজে শাসকদল তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা প্রভাবিত করেন, এ আর নতুন কী? কাটমানি নিয়ে যা হল, সেটাই তো মস্ত প্রমাণ। স্বচ্ছতা চাইলে, প্রশাসন প্রকাশ্যে উপভোক্তাদের নামের তালিকা টাঙিয়ে দিক।’’ জেলা বিজেপি সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘উপভোক্তাদের কাছ থেকে কিছু নিয়ে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি তৃণমূল নেতাদের স্বভাব হয়ে গিয়েছে।’’ যদিও তা মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমাদের দলের কেউ সরকারি কাছে নাক গলান না। মানুষ যাতে তাঁর প্রাপ্য সুবিধা পান, তা সব সময় মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia District Administration Government Allowance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy