সাজগোজ: মহরমের মিছিলের প্রস্তুতি। বোলপুরে। নিজস্ব চিত্র
এ বারেও অস্ত্র না নিয়ে মহরমের মিছিল বের হবে বোলপুরে। তার আগে বৃহস্পতিবার দিনভর চলল তাজিয়া তৈরির প্রস্তুতি। সব কিছু বিবেচনা করে পুরস্কৃত হবে সেরা তিন মহরম কমিটি— এমন ঘোষণা করেছে বোলপুর পুরসভা।
শহরের কয়েকটি কমিটির সদস্যেরা জানান, মহরম কোনও দিন নয়। এটি একটি মাস। ইসলামি হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম এবং পবিত্রতম মাসগুলির মধ্যে একটি হল মহরম। কোথাও পাঁচ দিন ধরে ‘মাতম’ করার পর শেষ দিন মহরমের শোভাযাত্রা বের হয়। কোথাও ওই নির্দিষ্ট দিনটিতেই শোভাযাত্রা বের হয়।
এত দিন মহরমের শোভাযাত্রায় অস্ত্র ব্যবহৃত হতো। কিন্তু মহরমের শোভাযাত্রায় অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে কিছু দিন আগে সংখ্যালঘু সেলের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সেখানে ঠিক হয়, এ বছর মহরমে কোনও কমিটি অস্ত্র নিয়ে মিছিল বের করবেন না।
মহরম কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার দিনের বিভিন্ন সময়ে কাজিয়া বের হবে। বোলপুরের চৌরাস্তার মোড়ে সন্ধ্যা থেকে প্রত্যেকটি মহরমের তাজিয়া দেখতে পাবেন এলাকার মানুষ। নতুনপুকুর সবুজসাথী মহরম কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের মহরমের শোভাযাত্রা এ বছর ৯৬ বছরে পড়বে। গত ১০ দিন ধরে তাজিয়া বানিয়েছেন তাঁরা। আগামী কাল দুপুর ২টোয় বেরিয়ে পড়বেন তাজিয়া নিয়ে। কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শেখ ওমর বলেন, ‘‘আমাদের মহরমের শোভাযাত্রায় হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে হাঁটেন, একই ভাবে দুর্গাপুজোয় আমরা একসঙ্গে বের হই। এটাই আমাদের বিশেষত্ব।’’
ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা জানালেন ভুবনডাঙা মহরম কমিটির সভাপতি মহম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি ১৯৭৪ সাল থেকে এই কমিটির দায়িত্বে আছেন। তিনি জানান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছেলেমেয়েরা যাতে মহরমের দিন অস্ত্র ব্যবহার না করেন, সে ব্যাপারে বলে এসেছেন তাঁরা। শান্তিপূর্ণভাবে শোক পালন করার প্রয়াস নিয়েছে এই মহরম কমিটি।
লায়েকবাজার মহরম কমিটির শোভাযাত্রায় থাকছে অন্য চমক। তাজিয়া তৈরির পাশাপাশি তাঁরা বানিয়েছেন ফ্লেকস। যাতে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমুখী প্রকল্পের কথা, মনীষীদের বাণী, মহরমের কথা লেখা থাকবে।
এ বিষয়ে এই মহরম কমিটির কার্যকরী সম্পাদক শেখ জয়নাল আবেদিন বলন, ‘‘আমাদের শোভাযাত্রায় শিশু থেকে মহিলা সকলেই থাকবেন। আগে অস্ত্র ব্যবহার করলেও গত বছর থেকে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বারেও থাকবে না।’’ নীচু বাঁধগোড়া, কলেজপল্লি, কাশীপুর, দর্জিপাড়া, মুলুক, মিরেপাড়া, মহিদাপুর থেকেও বিভিন্ন মহরম কমিটি শোভাযাত্রায় অংশ নেবে বলে জানা গিয়েছে।
বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের বক্তব্য— ইতিহাস ও ধর্ম অনেকক্ষেত্রেই আবেগ জাগিয়ে তোলে। নানা রকম উৎসব, অনুষ্ঠান তৈরি করে। কিন্তু আনন্দের হোক বা দুঃখের— প্রত্যেক উৎসবই মানুষকে সমবেত হওয়ার এবং অনুভূতি মিলিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। কবিতায়, গানে, নাচে বা অন্য নানারূপে অনুভূতি প্রকাশের অবকাশ দেয়। মহরমও তার ব্যতিক্রম নয়। সেই সত্যিই আরও একবার প্রমাণিত হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy