Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
soma das

SSC-Soma Das: ‘শরীর সাথ দিলে পিছু হটব না’

নলহাটি শহরের আশ্রমপাড়ায় সোমার পরিবারের সদস্যেরা জানান, ছোট থেকেই সোমা পড়াশোনায় ভাল ছিলেন।

চিকিৎসার নথি নিয়ে বাড়িতে সোমবার মা ও ভাই। ইনসেটে সোমা দাস। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসার নথি নিয়ে বাড়িতে সোমবার মা ও ভাই। ইনসেটে সোমা দাস। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

তন্ময় দত্ত 
নলহাটি শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২২ ০৯:০৩
Share: Save:

আদালতে চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে সহ আন্দোলনকারীদের আন্দোলনের শামিল হয়ে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন বীরভূমের নলহাটির সোমা দাস। বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতির সামনে স্কুলশিক্ষিকার পদে চাকরিপ্রার্থী সোমা জানিয়ে দেন, তাঁর একার নিয়োগের দরকার নেই। তাঁর সঙ্গে এত দিন ধরে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের সকলেরই চাকরি প্রয়োজন। ব্লাড ক্যানসার আক্রান্ত যুবতীর এ হেন সিদ্ধান্তে বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশীরা গর্বিত।

নলহাটি শহরের আশ্রমপাড়ায় সোমার পরিবারের সদস্যেরা জানান, ছোট থেকেই সোমা পড়াশোনায় ভাল ছিলেন। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধমিক ও উচ্চ শিক্ষায় ভাল ফল করেছেন। বরাবর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর মনে। ২০১৯ সালে মার্চ মাসে সোমার জ্বর হয়। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসক দেখালেও জ্বর না-কমায় রামপুরহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুদিন পরে ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করায় সোমার শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। সেখানেই ব্লাড ক্যানসারের বিষয়টি প্রথম জানতে পারেন পরিবার। তড়িঘড়ি সোমাকে মুম্বই নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। অভাবের সংসারে চিকিৎসার খরচ কেমন ভাবে জোগাড় হবে এই চিন্তায় পরিবারের দুঃশ্চিন্তা বেড়ে যায়। কেননা, সোমার বাবাও অসুস্থ। মা অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী। অল্প রোজগারে সোমা ও তার ভাইয়ের পড়াশোনা, সংসার ও ওষুধের খরচ চালিয়ে জমানো এক টাকাও বাড়িতে ছিল না। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের আর্থিক সাহায্য সোমাকে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবার।

আট মাস চিকিৎসার পরে একটু সুস্থ হলে সোমাকে নলহাটির বাড়ি নিয়ে আসা হয়। বছর খানেক সুস্থ থাকলেও আবারও সোমা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবার মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপালের কাছে চিকিৎসার জন্য সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু, কোন উত্তর না পেয়ে আবারও আত্মীয় ও বন্ধুদের জানান। এ বারও সোমার পাশে দাঁড়ান অনেকেই। বেশ কয়েক মাস চিকিৎসার পরে নভেম্বরে বাড়ি ফিরেই চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিতে কলকাতা চলে যান সোমা। ক্যানসারকে পিছনে ফেলে আন্দোলন শুরু করেন।

ন্যায্য দাবির জন্য যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সোমা, এলাকার অনেকেই তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার নলহাটির বাড়িতে বসে সোমার মা অপর্ণা দাস বললেন, ‘‘মেয়ের স্বপ্ন ছিল শিক্ষকতা করার। অল্প রোজগার হওয়ায় ছেলেমেয়ের অনেক শখ পূরণ করতে পারিনি। তবে মেয়ে সব সময় বলত, ‘চাকরি করে ভাইয়ের পড়াশোনা, বাবার ওষুধ ছাড়াও তোমার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব’। মেয়ে এখন কলকাতায় আছে।’’ তিনি জানালেন, সোমাই ফোন করে তাণঁকে জানিয়েছেন, বিচারপতি ডেকে পাঠিয়ে অন্য চাকরির কথা বলেছেন। অপর্ণাদেবীর কথায়, ‘‘মেয়ে তাতে রাজি হয়নি শুনে খুবই ভাল লাগছে। ও অসুস্থ হয়ে থাকার সময় চাকরির জন্য যাঁরা আন্দোলন করলেন, তাঁদের ফেলে নিজে চাকরি করলে তা ভাল হত না। মেয়ের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছি।’’

সোমাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিচারপতিকে সম্মান জানিয়ে আমি অন্য চাকরির প্রস্তাবে রাজি হয়নি। আমি যখন অসুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলাম, সেই সময় আমার হয়ে চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। শরীর যদি সাথ দেয়, তা হলে এই আন্দোলন থেকে আমি পিছু হটব না। ন্যায়ের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।’’ তাঁর সংযোজন, যোগ্য প্রার্থীরা এই ভাবে বঞ্চিত হবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। কথা বলতে বলতে এক জনের নাম বার বার সোমার গলায় শোনা যায়। তিনি মনীষা লক্ষ্মণেশ্বর। তিনি হচ্ছেন সোমার বান্ধবীর দিদি। সোমার কথায়, ‘‘মনীষা দিদি আমার জন্য প্রচুর করছেন। তিনি আমার কাছে ভগবান। যদিও অসুখের সময় যে সমস্ত আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধবী আমার পাশে ছিলেন, সকলকেই ধন্যবাদ জানাতে হবে। তাঁদের সাহায্য ও মনে সাহস জোগানোর জন্য আমি এখনও লড়াই চালিয়ে যেতে পারছি।’’

মনীষা বলেন, ‘‘সোমার এই সিদ্ধান্তে আমরা গর্বিত। পরিবারের অভাব ও ক্যানসারের ওষুধের খরচের জন্য চাকরি না নিয়ে আন্দোলনকারীদের পাশে থেকে সমাজকে যে বার্তা দিল সোমা, তা সকলের মনে থাকবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

soma das SSC Blood Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE