নাগালে। বৃহস্পতিবার সিউড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
দলের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করাই হোক বা প্রবীণ নেতাকে কান ধরে ওঠবোস করানো— সংবাদের শিরোনামে বারবার উঠে এসেছে এই জেলা। বিধানসভা ভোটের মুখে শাসকদলের সেই খাসতালুকে দাঁড়িয়েই বড় জমায়েত করল বামেরা। আর সেই সভা থেকেই তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ‘‘অনুব্রতই হোক, দাঙ্গাবাজ-তোলাবাজ— যেই থাকুক। এই মাটিতে লাল ঝান্ডা ছিল, আছে, থাকবে।’’
বস্তুত, ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো এ জেলাতেও দ্রুত পায়ের তলা থেকে মাটি হারিয়েছে বাম। জেলার ১১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে চারটি কেন্দ্রে বামেরা জিতলেও পরবর্তী সময়ে দলের সংগঠনে আরও বেশি করে থাবা বসিয়েছে শাসকদল তৃণমূল। পঞ্চায়েত, লোকসভা ও পুরভোটেও ভরাডুবি হয়েছে। মাঝে বারবার আক্রান্ত হয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। তবে কয়েক মাস আগেই জাঠার মাধ্যমে জেলার প্রতিটি বুথে বুথে গিয়ে সংগঠন মজবুত করা শুরু করেছে বামেরা। তারই মধ্যে প্রবীণ সিপিএম নেতা ধীরেন লেটকে মারধর করে কান ধরে ওঠবোস করানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। ক’দিন আগেই বীরভূম লাগোয়া কেতুগ্রাম এলাকায় বামেদের মিছিলে সেলিমের গাড়িতেও হামলা চলে বলে অভিযোগ। আর এ ভাবেই বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে বারবার খবরের শিরোনামে উঠে আসছে বামেরা। যা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব মোটেই ভাল চোখে দেখছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত। এমন এক পরিস্থিতিতে অনুব্রতর জেলাতেই বামেদের সভার ভিড় দেখে ভ্রু কুঁচকেছে তৃণমূল নেতাদের।
বৃহস্পতিবার বামফ্রন্টের ডাকা ওই সভায় ভরে গিয়েছিল সিউড়ির জেলা স্কুল মাঠ। সেখানেই প্রধান বক্তা ছিলেন সেলিম। তৃণমূলের বিরুদ্ধে চড়া সুরেই সভা শুরু করেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা। সেই রেশেই সভা শেষ করেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা জেলার প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম। মঞ্চে ছিলেন সিপিএমের দুই প্রবীণ নেতা ব্রজ মুখোপাধ্যায় ও দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়, সিপিআই-এর অপূর্ব মণ্ডল, ফব নেতা রেবতী ভট্টাচার্য প্রমুখ। একে একে বক্তব্য রাখেন আরসিপিআই নেতা মিহির বাইন, মার্ক্সবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের চিত্ত মালাকার, আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য, ফব-র নরেন চট্টোপাধায়, সিপিআই-এর রণজিৎ গুহ।
ঘাসফুলের মাঠ ভরল লালে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিউড়িতে জেলা স্কুলের
মাঠে বামেদের জনসভার ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিন সভার শুরুতেই মনসাবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের আমলে কোথাও কোনও শিল্প হয়নি। যা হয়েছে, তা কেবল তোলাবাজি, বোমাবাজি, চিটিংবাজির শিল্প। এ সব করেই কিছু লোক কোটি কোটি টাকা করছে। এই লুটেরাদের হাত থেকে পশ্চিমবঙ্গকে উদ্ধার করতে হবে।’’ অন্য দিকে, সিঙ্গুরে শিল্প সম্ভাবনা নষ্টের জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেন নরেনবাবু। বীরভূমকেই সব থেকে ‘আক্রান্ত জেলা’ বলে দাবি করে ওই ফব নেতার কটাক্ষ, ‘‘মা-মাটি-মানুষের যাত্রাপালা বন্ধ করতে হবে। এ বার ২০১৬-য় শুরু হবে নতুন যাত্রাপালা— ‘দিদি গেল জেলে’। এর পরেই নিজের বক্তৃতায় স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তৃণমূলকে আক্রমণ করা শুরু করেন সেলিমও। তাঁর দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভেবেছিলেন লাল ঝান্ডাকে মেরে ফেলবেন। পারলেন কি? আসলে গুন্ডা, মাস্তান, বিরোধীদের উপরে হামলা-মিথ্যা মামলা, আর চিটফান্ডের গামলা ভর্তি টাকা— এ সবই হল তৃণমূল। টেট পরীক্ষার নামে তোলাবাজি চলছে। রোগীরা বেড পাচ্ছেন না। আর উনি (মুখ্যমন্ত্রী) সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের গল্প দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষ সব কিছু ধরে ফেলেছেন।’’ সিপিএম নেতার অভিযোগ, মাথায় কাপড় দিয়ে নমাজ পড়ার ছবি দেখিয়ে এক দিকে মুসলিম দরদী সাজছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ‘সেটিং’ করে সারদা-কাণ্ড থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। সেলিমের কটাক্ষ, ‘‘লোকসভা ভোটের সময়ে নরেন্দ্র মোদীকে ‘হরিদাস’ বলে তাচ্ছিল্য করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরাবেন। আর এখন বিজেপি-তৃণমূলই এক হয়ে গিয়েছে।’’
এ দিকে, আড়ালে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সামনা সামনি অবশ্য বামেদের সভা নিয়ে তেমন চিন্তা দেখাচ্ছেন না জেলার তৃণমূল নেতারা। অনুব্রত মণ্ডল ফোন না ধরলেও জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা দাবি করছেন, ‘‘এই জেলায় বিরোধী বলে কেউ নেই। আমাদের প্রতিটি সভায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হচ্ছে। সুতরাং ওদের কে কী বলল, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy